ভারতীয় ক্রিকেটার হার্দিক পান্ডিয়া এবং সার্বিয়ান মডেল-অভিনেত্রী নাতাশা স্ট্যানকোভিচের প্রেমকাহিনী যেন এক স্বপ্নের গল্প। ২০১৮ সালে মুম্বাইয়ের এক বিলাসবহুল নাইট ক্লাবে তাদের প্রথম দেখা হয়। হার্দিক ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম জনপ্রিয় অলরাউন্ডার, আর নাতাশা বলিউডে তার ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করছিলেন। প্রথম দেখাতেই তাদের মধ্যে এক অদৃশ্য সংযোগ গড়ে ওঠে।
প্রথম দিকে, তাদের সম্পর্ক শুধুমাত্র বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ধীরে ধীরে তা গভীর হতে থাকে। তারা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন পার্টি, অনুষ্ঠানে দেখা করতে শুরু করেন। তাদের মধ্যে বোঝাপড়া এতটাই ভালো ছিল যে, অল্প সময়ের মধ্যেই তারা নিজেদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।
২০১৯ সালে দুবাইতে এক বিলাসবহুল ইয়টের উপর রোমান্টিক পরিবেশে হার্দিক নাতাশাকে হাঁটু গেড়ে প্রপোজ করেন। সমুদ্রের মাঝে, সূর্যাস্তের রঙিন আলোয়, বাতাসে ভালোবাসার আবেশ— সবকিছুই ছিল যেন কোনো সিনেমার দৃশ্য। এই মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করে তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করলে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। ফ্যানরা তাদের সম্পর্কের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে তারা তাদের বাগদানের ঘোষণা দেন, যা ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এরপর, একই বছরের ৩১ মে তারা একান্ত ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। করোনা মহামারির কারণে তারা বড়সড় আয়োজন করতে পারেননি, তবে তাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এই বিয়ের পর তাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়, যা পরবর্তী কিছু বছর বেশ সুখের মধ্যেই কাটে।
বিয়ের মাত্র দুই মাসের মধ্যেই তাদের সংসারে নতুন অতিথি আসে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে জন্ম হয় তাদের ছেলে অগস্ত্যের। এই খবরে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে তাদের ভক্তরা। বাবা-মা হওয়ার অনুভূতি হার্দিক এবং নাতাশার জীবনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।
সন্তানের জন্মের পর থেকেই হার্দিক ও নাতাশার জীবন নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচির মধ্যেও হার্দিক সর্বদা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করতেন। অগস্ত্যের জন্মের পর তিনি একাধিকবার তার সন্তানের সঙ্গে খেলার মুহূর্তগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন। এমনকি, ভারতীয় দলের সফর চলাকালীনও তিনি ভিডিও কলে ছেলের সঙ্গে সময় কাটাতেন।
নাতাশাও নতুন মা হিসেবে তার মাতৃত্বের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতেন। ইনস্টাগ্রামে তিনি প্রায়ই ছেলের সঙ্গে ছবি শেয়ার করতেন, যেখানে দেখা যেতো অগস্ত্যকে কোলে নিয়ে হাসিমুখে সময় কাটাচ্ছেন। অগস্ত্যের প্রথম হাঁটা, প্রথম কথা বলা, এমনকি প্রথম জন্মদিনের উদযাপনও তাদের জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে ওঠে।
২০২১ সালে অগস্ত্যের প্রথম জন্মদিন তারা অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপন করেন। এই উপলক্ষে তারা একটি থিম পার্টির আয়োজন করেন, যেখানে তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এই সময়টায় তাদের সম্পর্ক বেশ মজবুত ছিল বলে মনে করা হয়েছিল, কারণ তারা একসঙ্গে সন্তানকে বড় করার প্রতিটি দায়িত্ব ভাগ করে নিচ্ছিলেন।
প্রথম বিয়ের পর হার্দিক এবং নাতাশার সম্পর্ক এক নতুন রূপ পায়। সন্তান অগস্ত্যের আগমনের পর তাদের দাম্পত্য আরও দৃঢ় হতে থাকে। তবে ভালোবাসার প্রকাশ এবং প্রতিশ্রুতি আরও দৃঢ় করার জন্য ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভালোবাসা দিবসে উদয়পুরে জমকালো আয়োজন করে তারা পুনরায় বিবাহ করেন। এই অনুষ্ঠানে শুধু পরিবারের সদস্যরাই উপস্থিত ছিলেন না, বরং তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব এবং বেশ কয়েকজন সেলিব্রিটিও আমন্ত্রিত ছিলেন।
এই বিয়ে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, বরং এটি ছিল ভালোবাসার প্রতি নতুন অঙ্গীকারের প্রতীক। নাতাশা এবং হার্দিক তাদের সন্তান অগস্ত্যকে কোলে নিয়েই প্রতিশ্রুতি দেন যে, তারা একসঙ্গে থেকে জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবেন। সামাজিক মাধ্যমে এই বিয়ের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা তাদের ভক্তদের মধ্যে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করে।
তবে এর কিছু মাস পরেই, ২০২৩ সালের শেষের দিকে, তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। অনেকেই ভেবেছিলেন যে দ্বিতীয়বার বিবাহ তাদের সম্পর্কে নতুন আশার আলো জ্বালাবে, কিন্তু বাস্তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হলো না। নানা গুঞ্জন, ব্যক্তিগত মতবিরোধ এবং সোশ্যাল মিডিয়ার চাপ তাদের সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি করতে শুরু করে।
২০২৩ সালের শেষের দিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। নাতাশা তার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল থেকে ‘পান্ডিয়া’ পদবি সরিয়ে ফেলেন এবং হার্দিকের সঙ্গে তোলা বেশ কিছু ছবি মুছে দেন। এ থেকেই শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা।

গুঞ্জন রটে যে, নাতাশার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে নেটিজেনদের কৌতূহল ক্রমশ বাড়তে থাকে। অপরদিকে, হার্দিককেও এক নতুন তরুণীর সঙ্গে দেখা যেতে থাকে। তার নাম প্রাচী সোলাঙ্কি, যিনি একজন মেকআপ আর্টিস্ট।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এই গুঞ্জন আরও তীব্র হতে থাকে। সামাজিক মাধ্যমে একাধিক পোস্ট এবং ছবি ঘিরে নানান বিতর্ক তৈরি হয়। নাতাশার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মিডিয়ার অতিরিক্ত নজরদারি এবং তার নানা অনুষ্ঠানে একা উপস্থিত হওয়া সম্পর্কের সংকটের ইঙ্গিত দিতে থাকে। অনেকেই অনুমান করেন যে, সম্পর্কের দূরত্বের পেছনে শুধু পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝিই নয়, বরং বাইরের চাপও কাজ করেছে।
এদিকে, হার্দিক এবং প্রাচীর একাধিক ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসতে থাকে। বিশেষ করে পারিবারিক অনুষ্ঠানে প্রাচীর উপস্থিতি এবং হার্দিকের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। একাংশের দাবি, তাদের বন্ধুত্বই হয়তো হার্দিক-নাতাশার সম্পর্কে চিড় ধরার অন্যতম কারণ। আবার কেউ কেউ মনে করেন, দাম্পত্য কলহের কারণ শুধু তৃতীয় ব্যক্তি নয়, বরং ব্যক্তিগত মতপার্থক্য এবং জীবনধারার পার্থক্যও বড় ভূমিকা রেখেছে।
হার্দিক পান্ডিয়ার জীবনে নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন প্রাচী সোলাঙ্কি। প্রথমদিকে তিনি কেবলমাত্র একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবেই পরিচিত ছিলেন, তবে ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
প্রাচী একজন পেশাদার মেকআপ আর্টিস্ট এবং বলিউড ও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত। সামাজিক মাধ্যমে হার্দিক ও প্রাচীর একাধিক ছবি এবং ভিডিও ভাইরাল হয়, যা তাদের সম্পর্কের গুঞ্জনকে আরও উসকে দেয়। বিশেষ করে, হার্দিকের পরিবারের সঙ্গে প্রাচীর একাধিক ছবির উপস্থিতি এই জল্পনাকে আরও জোরদার করে।
অনেকেই মনে করেন, হার্দিক ও প্রাচীর সম্পর্ক কেবল বন্ধুত্বের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। কিছু সূত্র অনুযায়ী, প্রাচীই নাকি হার্দিকের জীবনে নতুন সঙ্গী হতে চলেছেন। যদিও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবে তাদের একসঙ্গে সময় কাটানোর খবর নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে আসছে।
এদিকে, নাতাশা এবং হার্দিকের সম্পর্কের অবনতির পেছনে অনেকেই প্রাচীকে দায়ী করেন। তবে কেউই খোলাখুলি এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি।
শেষমেশ, হার্দিক ও নাতাশা যৌথভাবে ঘোষণা করেন যে, তারা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও সম্পর্কে ফাটল ধরেছিল, তবুও তারা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে বেশি কিছু বলেননি। তাদের ডিভোর্সের ঘোষণা আসার পরই নাতাশা সার্বিয়ায় ফিরে যান এবং সঙ্গে করে ছেলেকে নিয়ে যান।তবে, দুজনেই ঘোষণা করেছেন যে, তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্ব তারা যথাযথভাবে পালন করবেন। কো-প্যারেন্টিংয়ের মাধ্যমে তারা অগস্ত্যের দেখভাল করবেন এবং তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবেন।
ডিভোর্সের পরও হার্দিক ও নাতাশা তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে চান। তারা ঘোষণা করেছেন যে, অগস্ত্যকে কো-প্যারেন্টিংয়ের মাধ্যমে বড় করবেন। অর্থাৎ, তারা দুজনেই সন্তানের লালন-পালনের দায়িত্ব ভাগ করে নেবেন।
কেন ভাঙলো এই প্রেম? পেশাগত জীবন ক্রিকেটার হিসেবে হার্দিকের জীবন অত্যন্ত ব্যস্ত ছিল, যা তাদের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। নাতাশার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের গুঞ্জন এবং হার্দিকের নতুন সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা তাদের সম্পর্কে অবিশ্বাস তৈরি করতে পারে।সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের সম্পর্ক ছিল সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, যা ব্যক্তিগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
হার্দিক ও নাতাশার সম্পর্ক একসময় রূপকথার মতো মনে হলেও, বাস্তব জীবনের জটিলতায় তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। তাদের বিচ্ছেদ যদিও দুঃখজনক, তবে তারা নিজেদের সন্তানকে ভালোভাবে বড় করতে চান। ভবিষ্যতে তারা কেমন থাকেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।