BPL এর চেয়ে IPL কেন এত ধনী? দেখে নিন কারণগুলি

Spread the love

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এবং ধনী ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ হলো IPL (Indian Premier League), যেখানে বিপিএল (Bangladesh Premier League) এখনো অনেক পিছিয়ে। কেন আইপিএল বিপিএলের তুলনায় এত বেশি ধনী এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী, তার বিস্তারিত বিশ্লেষণ নিচে করা হলো।

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ এবং ক্রিকেট সেখানে শুধুমাত্র একটি খেলা নয়, বরং এটি ধর্মের মতো অনুসরণ করা হয়। বিশাল দর্শকসংখ্যা, কর্পোরেট স্পনসরশিপ এবং বিনিয়োগের কারণে আইপিএল একটি অত্যন্ত লাভজনক উদ্যোগ হয়ে উঠেছে। ভারতে জনসংখ্যা ১৪০ কোটিরও বেশি এবং এর একটি বিশাল অংশ ক্রিকেটের প্রতি নিবেদিত। এ কারণে আইপিএল-এর প্রতিটি ম্যাচে গড় দর্শকসংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যায়, যা বিপিএলের ক্ষেত্রে খুবই কম।
টিভি ও ডিজিটাল দর্শক ভারতে একাধিক ভাষায় আইপিএল সম্প্রচার করা হয়, ফলে এটি অনেক বড় দর্শকবেস তৈরি করতে পারে। স্টেডিয়াম দর্শক, আইপিএল-এর গড় টিকিট বিক্রি বিপিএলের তুলনায় বহুগুণ বেশি, যা আয় বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। ভারতীয় ক্রিকেটাররা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয়, যার ফলে আন্তর্জাতিক দর্শকরাও আইপিএল দেখেন।

ভারতের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল। ফলে বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো আইপিএলে বিপুল বিনিয়োগ করে।
বৈশ্বিক বিনিয়োগ, Google, Amazon, Tata, Jio, Dream11-এর মতো প্রতিষ্ঠান আইপিএলে বিনিয়োগ করে, যা বিপিএলে দেখা যায় না। আইপিএল-এর দলগুলোর মালিক বড় বড় কর্পোরেশন এবং সফল ব্যবসায়ী, যেখানে বিপিএলের মালিকানায় অনিশ্চয়তা রয়েছে।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (BCCI) আইসিসির আয়ের একটি বড় অংশ তৈরি করে এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড। বিসিসিআই-এর বার্ষিক আয় ২০২৩ সালে বিসিসিআই-এর আয় প্রায় ৭০০০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে। বিসিবির তুলনায় বিসিবির বাজেট অনেক কম, যা বিপিএল-এর আর্থিক সীমাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। উন্নত অবকাঠামো বিসিসিআই-এর বড় বড় স্টেডিয়াম, উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধা এবং আধুনিক প্রযুক্তি আইপিএল-কে আরও লাভজনক করেছে।

আইপিএল-এর সবচেয়ে বড় আয়ের উৎসগুলোর মধ্যে সম্প্রচার স্বত্ব অন্যতম। আইপিএল-এর টিভি এবং ডিজিটাল সম্প্রচারের জন্য বড় বড় কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে, ফলে এই স্বত্বের মূল্য কয়েক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।আইপিএল সম্প্রচার চুক্তি (2023-2027) ₹48,390 কোটি (প্রায় ৬.২ বিলিয়ন ডলার)। বিপিএল সম্প্রচার চুক্তি মাত্র কয়েক মিলিয়ন ডলারে সীমাবদ্ধ।
আইপিএল-এর সম্প্রচার স্বত্ব দুই ভাগে বিভক্ত: টিভি সম্প্রচার স্বত্ব এবং ডিজিটাল স্ট্রিমিং স্বত্ব।

IPL Indian Premier League

আইপিএল :

স্টার স্পোর্টস (Star Sports) আইপিএল-এর জন্য প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করে। Viacom18-এর অধীনে JioCinema কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ডিজিটাল স্ট্রিমিং স্বত্ব কিনেছে। বিপিএল-এর সীমিত সম্প্রচার, বিপিএল শুধুমাত্র বাংলাদেশের কয়েকটি চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয় এবং ডিজিটাল স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম তেমন শক্তিশালী নয়।আইপিএল সম্প্রচারের সময় প্রতিটি বিজ্ঞাপনের ১০-সেকেন্ডের স্লট কোটি কোটি টাকায় বিক্রি হয়। ২০২৩ সালে আইপিএল-এর বিজ্ঞাপন আয় ছিল ₹১০,০০০+ কোটি রুপি।বিপিএলের বিজ্ঞাপন আয় এর তুলনায় খুবই কম, কারণ এর আন্তর্জাতিক দর্শকসংখ্যা সীমিত।

আইপিএল-এর জন্য গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলো (Jio, Tata, Dream11, Vivo, Paytm) প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে। আইপিএল-এর মূল স্পনসর ৪৪০+ কোটি রুপি (প্রতি বছর)। বিপিএল-এর মূল স্পনসর ১০-১৫ কোটি টাকা (প্রতি বছর)। ফ্র্যাঞ্চাইজি স্পনসরশিপ প্রতিটি আইপিএল দল তাদের নিজস্ব স্পনসর থেকে শত শত কোটি টাকা আয় করে, যেখানে বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজির নির্দিষ্ট স্পনসর খুবই কম। বিজ্ঞাপনদাতাদের আকর্ষণ IPL-এর আন্তর্জাতিক দর্শক থাকায় গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলো এখানকার বিজ্ঞাপনের জন্য বেশি খরচ করতে আগ্রহী। বিপিএল কেবলমাত্র স্থানীয় ব্র্যান্ডের উপর নির্ভরশীল। আইপিএল যেহেতু আন্তর্জাতিক মানের দর্শকদের আকর্ষণ করে, তাই বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো এখানে বিজ্ঞাপন দেয়। বিপিএল শুধুমাত্র বাংলাদেশকেন্দ্রিক হওয়ায় আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপনদাতাদের আগ্রহ কম।

আইপিএল-এ খেলোয়াড়দের জন্য পারিশ্রমিকের বিশাল পার্থক্য রয়েছে, যা লিগের জনপ্রিয়তা ও আর্থিক শক্তির অন্যতম প্রমাণ। আইপিএল প্লেয়ার পারিশ্রমিক সর্বোচ্চ ১৮-২০ কোটি রুপি (স্যাম কারান – ১৮.৫ কোটি, ক্যামেরন গ্রিন – ১৭.৫ কোটি)। বিপিএল প্লেয়ার পারিশ্রমিক সর্বোচ্চ ৮০-৯০ লাখ টাকা। আইপিএল নিলামে মোট ব্যয় প্রতি মৌসুমে প্লেয়ার নিলামের জন্য আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো ১০০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করে।বিপিএল-এর তুলনায় ফ্র্যাঞ্চাইজির বিনিয়োগ কম আইপিএল দলগুলোর গড় মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা, যেখানে বিপিএল-এর দলগুলোর গড় মূল্য তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকানার মূল্য মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, চেন্নাই সুপার কিংস-এর মতো আইপিএল দলগুলোর মূল্য ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যেখানে বিপিএলের দলগুলো এর ধারেকাছেও নেই। আইপিএল-এ অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের বড় বেতন, বিলাসবহুল জীবনযাত্রা এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর বড় বিনিয়োগের ফলে এটি বিপিএলের তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক।

আইপিএল শুধুমাত্র ভারতে নয়, পুরো বিশ্বে জনপ্রিয়। এটি বর্তমানে ১২০+ দেশে সম্প্রচারিত হয় এবং বিশ্বব্যাপী কয়েকশো মিলিয়ন দর্শকের কাছে পৌঁছে। বিশ্বজুড়ে সম্প্রচার Sky Sports (UK), Fox Sports (Australia), Willow TV (USA) এবং Star Sports (South Asia) আইপিএল সম্প্রচার করে। আন্তর্জাতিক দর্শকদের আকর্ষণ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ বিভিন্ন দেশের দর্শকেরা আইপিএল উপভোগ করেন। গ্লোবাল ফ্যানবেস কোহলি, ধোনি, রোহিত শর্মা, গেইল, ডি ভিলিয়ার্সের মতো তারকারা আইপিএল-কে বৈশ্বিক লিগে পরিণত করেছে। বিপিএলের সীমাবদ্ধতা বিপিএল মূলত বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ, যার ফলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ তুলনামূলক কম।আইপিএল-এর বিপুল পরিমাণ আন্তর্জাতিক দর্শকের কারণে গ্লোবাল ব্র্যান্ড ও স্পনসররা এই লিগে বিনিয়োগ করতে চায়, যা আয়কে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

আইপিএল-এর তুলনায় বিপিএল আর্থিকভাবে অনেক পিছিয়ে থাকার মূল কারণ হলো ভারতের বৃহৎ বাজার, বিশাল বিনিয়োগ এবং বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা। আইপিএল-এর সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল, মিডিয়া স্বত্ব, স্পনসরশিপ ও বিজ্ঞাপন আয় বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের সুযোগ তৈরি করেছে।

বিপিএল-এর উন্নতির জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল চালু করা বর্তমান দলগুলোর মালিকানায় স্বচ্ছতা আনা এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা। আন্তর্জাতিক তারকা খেলোয়াড় আমন্ত্রণ জানানো, বেশি পারিশ্রমিক দিয়ে আন্তর্জাতিক তারকাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বৈশ্বিক সম্প্রচার ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সম্প্রসারণ বিপিএল-এর সম্প্রচার অধিক দেশে ছড়িয়ে দেওয়া এবং বড় প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সম্প্রচার নিশ্চিত করা। স্পনসরশিপ ও বিজ্ঞাপন বৃদ্ধির উদ্যোগ: আন্তর্জাতিক ও বড় কর্পোরেট ব্র্যান্ডকে আকৃষ্ট করা। টুর্নামেন্টের সময় ও বিন্যাস পরিবর্তন এমন সময় নির্ধারণ করা যাতে এটি অন্যান্য বড় লিগের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না পড়ে। উন্নত অবকাঠামো ও স্টেডিয়াম সুবিধা আন্তর্জাতিক মানের ভেন্যু তৈরি করা এবং দর্শকদের জন্য আরও ভালো অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা। যদি এই বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে বিপিএল ভবিষ্যতে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও লাভজনক একটি লিগে পরিণত হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *