মাত্র ১টা ল্যাপটপই থাকলেই বাড়ি বসে এই ব্যবসা করা যাবে! তাতে মাসে আয় হবে ১ লাখ টাকা!

Spread the love

বর্তমানে একদিকে যেমন ভালো চাকরি খুঁজে পাওয়াটা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে তেমনি চাকরি করেও খুব একটা সঞ্চয় করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই কেউ চাকরির পাশাপাশি পার্ট টাইম ব্যবসা করার চেষ্টা করছেন তো কেউ আবার কাজ ছেড়ে সম্পূর্ণ নিজের ব্যবসা শুরু করছেন। আপনিও কি তেমনটাই করতে চান? তাহলে আজকের প্রতিবেনেই রইল বাড়ি বসে মাসে ১ লক্ষ টাকা আয়ের ব্যবসার আইডিয়া।

কম পুঁজিতে ঘর থেকেই শুরু করুন ব্যবসা |

পুরনো ছবি হবে নতুন! ভারতে বাড়ছে ফটো রিস্টোরেশন ব্যবসার চাহিদা

পুরনো, বিবর্ণ, ছেঁড়া কিংবা দাগ পড়া ছবি নতুনের মতো ফিরিয়ে আনার প্রযুক্তি এখন হাতের মুঠোয়। ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ফটো রিস্টোরেশন বা ছবি পুনরুদ্ধারের ব্যবসা ভারতে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একসময় যা ছিল শুধুমাত্র পেশাদার স্টুডিওর কাজ, আজ তা ব্যক্তিগত উদ্যোক্তাদের হাতেও পৌঁছে গিয়েছে। স্মার্টফোন ও কম্পিউটারের সহজলভ্যতার কারণে এই পরিষেবা আরও সহজ হয়ে উঠেছে। ফলে অনেকেই পুরনো স্মৃতিকে নতুন করে সাজিয়ে রাখতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।


কী এই ফটো রিস্টোরেশন?

ফটো রিস্টোরেশন বলতে বোঝায়, পুরনো বা নষ্ট হয়ে যাওয়া ছবিকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নতুন করে তৈরি করা। পুরনো দিনের সাদা-কালো ছবিকে রঙিন করা হোক বা ছেঁড়া ছবি জোড়া লাগানো—সবই সম্ভব আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে। অনেক সময় পুরনো ছবির ওপর দাগ পড়ে যায়, ছোপ ছোপ দাগ বা ফাটা অংশ থাকে, যা সাধারণত নষ্ট হয়ে যায়। তবে, এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই ছবিগুলোকে নতুন করে রঙিন করা যায়, দাগ বা ক্ষয় দূর করা যায় এবং ছবির অংশ পুনরুদ্ধার করা যায়।

একসময় স্টুডিওতে ম্যানুয়ালি রঙ বসিয়ে ফটো ঠিক করা হতো। তবে বর্তমানে অ্যাডোবি ফটোশপ ও অন্যান্য উন্নত সফটওয়্যার ব্যবহার করে আরও নিখুঁতভাবে ছবি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, ছবি থেকে অবাঞ্ছিত অংশ সরিয়ে ফেলা, পটভূমি পরিবর্তন, এমনকি সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে ছবিকে উপস্থাপন করাও এখন সহজ।


বাড়ছে চাহিদা

ভারতে ফটো রিস্টোরেশন ব্যবসা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনেক পরিবারই এখন পুরনো পারিবারিক অ্যালবামের ছবি সংরক্ষণ করতে চাইছে। বিশেষ করে বিয়ে, পারিবারিক অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কার ছবি কিংবা ঐতিহাসিক মুহূর্তের ছবি ডিজিটালভাবে সংরক্ষণের চাহিদা বেড়েছে।

ফটো রিস্টোরেশন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত দিল্লির এক ব্যবসায়ী অভিষেক মিশ্র বলেন, “আগে শুধু বিখ্যাত স্টুডিওগুলোই এই কাজ করত। কিন্তু এখন প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ছোট ব্যবসায়ীরাও এই পরিষেবা দিতে পারছে। বিশেষ করে অনেকেই ঘরে বসে অনলাইন অর্ডার নিচ্ছেন এবং ডিজিটালভাবে কাজ করে গ্রাহকের হাতে ডেলিভারি দিচ্ছেন।”

একই কথা বললেন কলকাতার ফটো এডিটর সৌম্যদীপ সরকার। তিনি জানান, “পাঁচ-ছয় বছর আগেও মানুষ এই ধরনের পরিষেবা সম্পর্কে খুব বেশি জানত না। কিন্তু এখন মানুষ স্মৃতির মূল্য বুঝতে শিখেছে। পুরনো দিনের ছবি নতুন করে সংরক্ষণের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে পুরনো রাজবাড়ি, জমিদার পরিবার কিংবা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কার ছবির জন্য প্রচুর কাজ আসে।”


ব্যবসার সুযোগ কোথায়?

বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন শহরে এই ব্যবসার ভালো চাহিদা রয়েছে। শুধু বড় শহরেই নয়, ছোট শহর এবং গ্রাম থেকেও এখন মানুষ ছবি পুনরুদ্ধারের জন্য যোগাযোগ করছেন।

এই ব্যবসার বড় সুবিধা হলো, এটি তুলনামূলক কম বিনিয়োগে শুরু করা যায়। ভালো মানের স্ক্যানার, একটি শক্তিশালী কম্পিউটার ও কিছু সফটওয়্যার থাকলেই এই কাজ করা সম্ভব। অনেকে বাড়ি থেকেই অনলাইনে এই ব্যবসা করছেন।

এই পেশায় যুক্ত কলকাতার রিমা দত্ত বলেন, “আমি শুরুতে শখের বসে কয়েকটি পুরনো ছবি ডিজিটালভাবে রিস্টোর করেছিলাম। পরে অনেকে জানতে পারেন এবং অনুরোধ করতে থাকেন। এখন আমি এটি ফুল-টাইম পেশা হিসেবে নিয়েছি। প্রতিমাসে অন্তত ৩০-৪০টি অর্ডার পাই, যা থেকে ভালোই উপার্জন হয়।”

কী কী সরঞ্জাম দরকার?

ফটো রিস্টোরেশন ব্যবসা শুরু করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম প্রয়োজন হয়—

  • একটি উচ্চ রেজোলিউশনের স্ক্যানার, যা পুরনো ছবিকে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর করতে সাহায্য করবে।
  • অ্যাডোবি ফটোশপ বা অন্য কোনো এডিটিং সফটওয়্যার, যা ছবি পুনরুদ্ধার ও রঙ সংশোধনে কাজে লাগবে।
  • একটি ভালো মানের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ, যেখানে দ্রুত ছবি এডিট করা যাবে।
  • প্রিন্টার (যদি ফাইনাল ছবি প্রিন্ট করে দিতে হয়)।

কতটা লাভজনক এই ব্যবসা?

এই ব্যবসার লাভ অনেকাংশে নির্ভর করে দক্ষতার ওপর। দক্ষ এডিটর হলে একেকটি ছবির জন্য ৫০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া যায়। যদি বড় প্রতিষ্ঠান বা মিউজিয়ামের সঙ্গে কাজ করা যায়, তাহলে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা উপার্জনের সুযোগ থাকে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী কয়েক বছরে এই সেক্টর আরও সম্প্রসারিত হবে। অনেকে ইতিমধ্যেই অনলাইন মার্কেটপ্লেসে (যেমন Fiverr, Upwork) ফটো রিস্টোরেশন সার্ভিস দিচ্ছেন এবং আন্তর্জাতিকভাবে কাজ পাচ্ছেন।


চ্যালেঞ্জ কী?

ফটো রিস্টোরেশন ব্যবসায় কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রথমত, ভালো মানের কাজ না হলে গ্রাহক ধরে রাখা কঠিন। দ্বিতীয়ত, গ্রাহকদের প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকে, ফলে ধৈর্য ধরে কাজ করতে হয়। তৃতীয়ত, প্রতিযোগিতা বাড়ছে, ফলে নতুনদের জন্য এই ক্ষেত্রে স্থায়ী হতে হলে দক্ষতা অর্জন করা জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডিজিটাল আর্কাইভিং এবং পারিবারিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রবণতা বাড়ায় ফটো রিস্টোরেশন ব্যবসার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। অনেক মানুষ এখন পুরনো ছবির গুরুত্ব বুঝছেন এবং তা ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করতে চাইছেন। ফলে যারা এই পেশায় দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন, তারা নিশ্চিতভাবেই লাভবান হবেন।

এই মুহূর্তে যারা নতুন ব্যবসার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য ফটো রিস্টোরেশন হতে পারে একটি চমৎকার সুযোগ। অল্প বিনিয়োগে, ঘরে বসে, সৃজনশীলভাবে কাজ করার এই সুযোগ অনেকের কাছেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *