বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ আমেরিকা, জানুন আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের চমকে দেওয়ার মতো কিছু কথা!

Spread the love

কয়েকদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এতে নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছেন বিতর্কিত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই নির্বাচনের ফলাফলে বিস্মিত হয়েছেন অনেকে। তবে আমেরিকার ২৪০ বছরের ইতিহাসে ঘটেছে এর চেয়েও বিস্ময়কর অনেক ঘটনা। আমেরিকার বিভিন্ন প্রেসিডেন্টদের বিস্ময়কর ঘটনা নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের প্রতিবেদনটি।

আমেরিকার ফাউন্ডিং ফাদারদের মধ্যে একজন হলেন জর্জ ওয়াশিংটন। তিনি টানা তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট হতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তাঁর মহত্ব সীমাবদ্ধ রাখেননি, প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থাতেও বার্ষিক ২৫০০০ ডলার বেতন গ্রহণ করেননি। তাঁর ইনোগুরেশনে অংশ নেওয়ার পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না, তাই প্রতিবেশির কাছে ধার করেছিলেন ৬০০ ডলার।

আমেরিকার ২২ এবং ২৪ তম প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড প্রথম জীবনে ছিলেন নিউইয়র্কের ছোট্ট এক কাউন্টির শেরিফ। কর্মজীবনে তিনি দুইবার অপরাধীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে জল্লাদের দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন দুইবার, তবে পরপর দুই নির্বাচনে নয়। আমেরিকার ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কখনও ঘটেনি।

ফেসবুক কিংবা হোয়াটস অ্যাপে চ্যাট করতে বসলেই যে শব্দটি সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হয় সেটা হল O.K। এই বহুল ব্যবহৃত শব্দের উৎপত্তির সাথে জড়িয়ে আছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান ব্যুরেনের নাম। তিনি Old Kinderhook নামেও পরিচিত ছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় Old Kinderhook এর সংক্ষিপ্তরূপ O.K ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।

১৯৯২ সালে জাপান সফরের সময় আমেরিকার ৪১তম প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিওর জাপানি প্রধান মন্ত্রী কিচি মিয়াজাওয়ার উপর বমি করেছিলেন। এই ব্যতিক্রমী ঘটনাটি বিশ্ব মিডিয়াতে বেশ সারা জাগিয়েছিল। সেই সাথে জাপানি অভিধানে যুক্ত হয়েছিল নতুন একটি শব্দ “বুশুরু” যার অর্থ বুশের মত কাজ করা বা বমি করা।

ডেভিড আইজেন হাওয়ারের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা আমরা অনেকেই জানি, তবে তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি নিজের মহিলা ড্রাইভার কেই সামারসবে’র সাথে প্রণয়ের জন্যও আলোচিত হয়েছেন। সামারসবে তাঁর “Past Forgetting: My Love Affair with Dwight D. Eisenhower” বইতে এই কাহিনী বিস্তারিত লিখেছেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে আমেরিকার নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলার অত্যন্ত বিতর্কিত সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন। তবে মজার ব্যাপার হল তাঁর মধ্যনাম “এস” এর কোন অর্থই ছিল না।

জন এফ ক্যানেডি, যিনি JFK নামে বেশি পরিচিত, মাত্র ৪৩ বছরে নির্বাচিত হয়েছিলেন সাথে তাঁর গভীর প্রণয় ছিল।

আব্রাহাম লিঙ্কন আমেরিকা থেকে দাস প্রথা নিষিদ্ধ করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন ভয়ংকর মুষ্টিযোদ্ধা এবং প্রায় ৩০০ মত যুদ্ধে লড়ে হেরেছিলেন মাত্র একটিতে। তাঁর নামে একটি পেটেন্টও আছে। মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা প্রেসিডেন্টের খেতাবটিও তাঁর। ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার লিঙ্কনকে শারীরিক উচ্চতায়ও আজ পর্যন্ত হারাতে পারেনি কোন প্রেসিডেন্ট।

জন এফ ক্যানেডি

জেরাল্ড ফোর্ড ভাগ্য যাকে টেনে এনেছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চেয়ারে। প্রথমে কোন প্রকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ গ্রহণ ছাড়াই ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের স্থলাভিষিক্ত হন ভাইস প্রেসিডেন্ট স্পিরো ইগ্নেউ পদত্যাগ করার পর। তার মাত্র এক বছর পর ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারিতে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের পদত্যাগের পর তিনি প্রেসিডেন্ট হন। আজ অবধি তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি কোন নির্বাচনে না জিতেও প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঠাই পেয়েছিলেন হোয়াইট হাউসে।

জেমস ম্যাডিসন আমেরিকার সবচেয়ে খাটো প্রেসিডেন্ট যার উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি এবং ওজন ১০০ পাউন্ডের বেশি ছিল না। তবে সবচেয়ে মোটা প্রেসিডেন্ট ছিলেন উইলিয়াম হাওয়ার্ড ট্যাফট, যিনি “বিগ বিল” নামেই বেশি পরিচিত। ৩২৫ পাউন্ড ওজনের এই বিশাল বপু অধিকারী প্রেসিডেন্ট প্রায়ই হোয়াইট হাউজের বাথটাবে আটকে যেতেন।

থিওডর রুজভেল্টের ডাক নাম ছিল টেডি। তাঁর নামানুসারে একটি খেলনা কোম্পানি পুতুল ভাল্লুকের নাম টেডি বেয়ার রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আর সেই থেকে আজ অবধি কোটি কোটি শিশুর খেলার সাথী টেডি বেয়ারের সাথে অমর হয়ে আছেন থিওডর রুজভেল্ট।

টমাস জেফারসন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় মানুষদের একজন। তিনি আমেরিকার অন্যতম ফাউন্ডিং ফাদার এবং দুই বারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। তবে নিজের সমাধি ফলকে নিজের প্রেসিডেন্ট পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করতে চাননি। বরং তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর সমাধিতে তাকে পরিচিত করা হয়েছে এভাবে:

Here was buried
Thomas Jefferson
Author of the Declaration of American Independence
of the Statute of Virginia for religious freedom
& Father of the University of Virginia

টমাস জেফারসনের এই সমাধি ফলক আমাদের একটি প্রশ্ন মনে করিয়ে দেয় মৃত্যুর পর এই পৃথিবীর কাছে আমরা কীভাবে পরিচিত হতে চাই? মারা যাওয়ার পর পৃথিবীকে জানানোর মত কোন কাজ কি আমরা করতে পেরেছি?

বারাক ওবামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আফ্রো-মার্কিন বংশোদ্ভূত প্রেসিডেন্ট। ওবামার জন্ম ১৯৬১ সালের ৪ আগস্ট হাওয়াইয়ের হনুলুলু শহরে। তাঁর পিতা কেনিয়ার এবং মাতা কানসাসের বাসিন্দা ছিলেন। ওবামা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং হার্ভার্ড ল স্কুল থেকে আইন ডিগ্রি অর্জন করেন। হার্ভার্ডে পড়ার সময় তিনি হার্ভার্ড ল রিভিউ-এর প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সভাপতি হন।

ওবামা শিকাগোতে কমিউনিটি সংগঠক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং পরে আইনজীবী ও সাংবিধানিক আইন অধ্যাপক হন। ২০০৪ সালে তিনি ইলিনয় থেকে মার্কিন সিনেটর নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন এবং রিপাবলিকান প্রার্থী জন ম্যাককেইনের বিরুদ্ধে বিজয়ী হন। তাঁর প্রেসিডেন্সির সময় তিনি সাশ্রয়ী মূল্যের যত্ন আইন (ওবামা কেয়ার) এবং ডড-ফ্র্যাঙ্ক ওয়াল স্ট্রিট সংস্কার আইন পাস করেন। এছাড়া, তিনি ইরাক যুদ্ধের সমাপ্তি এবং আফগানিস্তানে মার্কিন সেনার মাত্রা বাড়ানোর উদ্যোগ নেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম এবং ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে এবং ২০২৫ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। ট্রাম্প একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্সে জন্মগ্রহণ করেন। ট্রাম্প পেনসিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ার্টন স্কুল থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে তাঁর পিতার রিয়েল এস্টেট ব্যবসা গ্রহণ করেন। ট্রাম্প ২০১৫ সালে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে বিজয়ী হন। তাঁর প্রেসিডেন্সির সময় তিনি অভিবাসন নীতি কঠোর করেন, কর সংস্কার আইন পাস করেন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি পুনর্বিবেচনা করেন। ট্রাম্পের প্রশাসন বিতর্কিত ছিল এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ও তদন্ত চলছিল। ২০২৩ সালে তিনি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী হন এবং দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।বারাক ওবামা এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প দুইজনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ওবামা তাঁর নীতি ও সংস্কারমূলক উদ্যোগের জন্য প্রশংসিত হন, যেখানে ট্রাম্প তাঁর বিতর্কিত নীতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের জন্য পরিচিত। তাঁদের নেতৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

এই ছিল আমেরিকার বিভিন্ন প্রেসিডেন্টদের কিছু বিস্ময়কর ঘটনা। তাদের জীবনের এই ঘটনাগুলি আমাদের জানায় যে ইতিহাসের পৃষ্ঠায় কত রকমের কাহিনী লুকিয়ে আছে। আশা করি এই প্রতিবেদনটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *