বিছানাই সুখের পরিবর্তে ডেকে আনে বিচ্ছেদ, দাম্পত্য জীবনের সুখ সুখ ফেরাতে চাইলে এখনই মানুন এই নিয়ম

Spread the love

বর্তমান সময়ে দাম্পত্য জীবনের বন্ধন যেন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। বিয়ে টিকছে না দীর্ঘদিন। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ভেঙে যাচ্ছে বহু বিবাহিত সম্পর্ক। এমনকি ১০ থেকে ১৫ বছরের দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনও ভাঙনের মুখে পড়ছে। সম্পর্ক মেরামত করতে বহু চেষ্টা করা হলেও সফল হওয়া যাচ্ছে না। এই প্রেক্ষাপটে শারীরিক এবং মানসিক সুখের গুরুত্ব নতুন করে উঠে আসছে।

জ্যোতিষশাস্ত্রের মতে, দাম্পত্য জীবনের সুখ কেবল মানসিক যোগাযোগেই সীমাবদ্ধ নয়; শারীরিক ঘনিষ্ঠতাও একটি সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে সাহায্য করে। জ্যোতিষ মতে, শুক্র গ্রহের প্রভাব দাম্পত্য জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। শুক্রের আধিপত্যের প্রতীক হলো শয়নকক্ষ বা মাস্টার বেডরুম। তাই বেডরুমের সঠিক বাস্তুশাস্ত্র মেনে না চললে দাম্পত্য জীবনে অশান্তি দেখা দিতে পারে।

জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী, শোবার ঘরের পরিবেশ এবং বিছানার সঠিক ব্যবহার ব্যক্তি ও পরিবারের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। আধুনিক জীবনে মানসিক চাপ, অবসাদ এবং দাম্পত্য জীবনের সমস্যাগুলোর জন্য অনেক সময় শোবার ঘরের ভুল ব্যবস্থা এবং অভ্যাসগুলো দায়ী। সুখী জীবনযাপন করতে এবং সম্পর্কের মধ্যে ইতিবাচক শক্তি আনতে জ্যোতিষ শাস্ত্রে কিছু বিশেষ নিয়ম মানার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শোবার ঘরের প্রভাব দাম্পত্য জীবনে

জ্যোতিষ মতে, শোবার ঘর কেবলমাত্র বিশ্রামের স্থান নয়; এটি জীবনের শক্তি পুনরুদ্ধারের স্থান। ঘরের সঠিক অবস্থান, আসবাবপত্রের সজ্জা এবং বিছানার দিক সম্পর্কের গুণগত মান প্রভাবিত করে। শোবার ঘরে নেতিবাচক শক্তি থাকলে তা অবসাদ এবং বিচ্ছেদের কারণ হতে পারে।

১. শোবার ঘরের দিক নির্ধারণ
জ্যোতিষ শাস্ত্রে শোবার ঘর দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হওয়া শুভ মনে করা হয়। এই দিকগুলো সম্পর্কের মধ্যে স্থিতিশীলতা ও গভীরতা আনে। উত্তর-পূর্ব দিকে শোবার ঘর থাকলে সেখানে মানসিক চাপ এবং সম্পর্কের মধ্যে অশান্তি বাড়তে পারে।

২. বিছানার সঠিক অবস্থান
বিছানার মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা উত্তর দিকে রাখা উচিত। দক্ষিণ দিকের শক্তি ঘুমের মান উন্নত করে এবং মানসিক শান্তি আনে। এছাড়া, বিছানার নীচে অগোছালো জিনিস রাখা এড়ানো উচিত।

৩. আয়না এড়িয়ে চলুন
জ্যোতিষ মতে, শোবার ঘরে আয়না থাকা দাম্পত্য জীবনে অশান্তি আনতে পারে। বিশেষ করে, বিছানার সামনে আয়না থাকলে তা সম্পর্কে বিভ্রান্তি এবং অবিশ্বাসের সৃষ্টি করতে পারে। আয়না থাকলেও তা এমন স্থানে রাখা উচিত যেখানে বিছানার প্রতিচ্ছবি পড়ে না।

৪. ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার কমান
শোবার ঘরে টিভি, মোবাইল এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস রাখা এড়িয়ে চলা উচিত। এই ডিভাইসগুলো থেকে নির্গত রেডিয়েশন এবং শব্দ সম্পর্কের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৫. রঙের প্রভাব
শোবার ঘরের দেওয়াল এবং বিছানার চাদরে হালকা এবং স্নিগ্ধ রং ব্যবহার করা উচিত। গোলাপি, হালকা নীল বা ক্রিম রং দাম্পত্য জীবনে ইতিবাচক শক্তি আনে। কালো বা অন্ধকার রঙ এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এটি মনস্তাত্ত্বিক চাপ বাড়াতে পারে।

৬. ফুল এবং সুগন্ধি ব্যবহার
শোবার ঘরে সুগন্ধি মোমবাতি, সুগন্ধি তেল বা তাজা ফুল রাখা শুভ বলে মনে করা হয়। এইসব জিনিস সম্পর্কের মধ্যে উষ্ণতা এবং ভালোবাসা বাড়ায়।

৭. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
শোবার ঘরের পরিবেশ সর্বদা পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। ময়লা, ধুলো এবং অগোছালো পরিবেশে নেতিবাচক শক্তি জন্মায় যা সম্পর্কের ক্ষতি করে।

বিচ্ছেদ রোধে কী করবেন


বিচ্ছেদের মতো কঠিন পরিস্থিতি এড়াতে জ্যোতিষ মতে কিছু প্রতিকার মেনে চলা যায়।

প্রতি বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার শোবার ঘরে ঘৃতকুমারী বা তুলসী গাছ রাখা শুভ।
চন্দনের ধূপ শোবার ঘরে ব্যবহার করলে নেতিবাচক শক্তি দূর হয়।
শোবার ঘরে ধাতব আসবাবপত্র এড়িয়ে কাঠের আসবাবপত্র ব্যবহার করুন।
সপ্তাহে অন্তত একদিন শোবার ঘর স্যাজ স্টিক দিয়ে পরিস্কার করুন।

সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য অন্যান্য টিপস
জ্যোতিষ শাস্ত্রের পাশাপাশি, কিছু সাধারণ অভ্যাস মেনে চলাও জরুরি।

প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট সঙ্গীর সাথে মন খুলে কথা বলুন।
শোবার সময় মোবাইল বা টিভি ব্যবহার না করে পারস্পরিক সময় কাটান।
সপ্তাহে অন্তত একদিন সঙ্গীর জন্য বিশেষ কিছু করুন, যেমন একসঙ্গে ডিনার বা সিনেমা দেখা।

বাস্তু দোষ দাম্পত্য জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শনি, রাহু বা কেতুর মতো অশুভ গ্রহের প্রভাব যদি স্বামী-স্ত্রীর উপর পড়ে, তবে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই অশুভ প্রভাব বিচ্ছেদ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, বেডরুমের সঠিক সাজসজ্জা এবং বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী এর পরিবেশ তৈরি করা সম্পর্ককে মজবুত করতে পারে।

চিনা বাস্তুশাস্ত্র ফেং শুই মতে, বেডরুমের সঠিক পরিবেশ দাম্পত্য সুখ বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফেং শুই অনুসারে, শোওয়ার ঘরে কম্পিউটার, টিভি বা অফিসের কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও সামগ্রী রাখা উচিত নয়। এগুলো দাম্পত্য জীবনের আনন্দে বাধা সৃষ্টি করে।

বেডরুমে কোনও হিংসাত্মক বা যুদ্ধের ছবি রাখা উচিত নয়। এতে নেতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়।

বেডরুমে এমন ছবি রাখুন যা প্রেম, শান্তি, দয়া এবং সহানুভূতির বার্তা বহন করে। স্বামী-স্ত্রীর যৌথ হাসির ছবি রাখতে পারলে সম্পর্ক আরও মধুর হয়।

ডাবল বিছানায় দুটি পৃথক গদি ব্যবহার না করে একটি গোটা গদি ব্যবহার করুন। এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ ও উত্তেজনা দূর হয়। পৃথক গদি থাকলে সম্পর্কের ফাটল সৃষ্টি হতে পারে।

বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে শয়নকক্ষ এমনভাবে সাজানো উচিত যাতে দাম্পত্য জীবনে সুখ এবং শান্তি বজায় থাকে। সঠিকভাবে সাজানো বেডরুমের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে দাম্পত্য জীবনের উপর। শুক্র গ্রহের শক্তি বৃদ্ধির জন্য বেডরুমে উজ্জ্বল এবং সুখকর পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।

বেডরুম উত্তর-পশ্চিম বা দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে হওয়া উচিত। এটি সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে।
বেডরুমে অত্যধিক আসবাব এড়িয়ে চলুন। খোলামেলা জায়গা সম্পর্কের বন্ধনকে দৃঢ় করে।
শোওয়ার ঘরে সবুজ বা হালকা গোলাপি রঙের ব্যবহার ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি করে।
দরজা বা জানালার সামনে বিছানা রাখবেন না। এতে সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

বর্তমান সময়ে দাম্পত্য জীবনে নানা চ্যালেঞ্জ দেখা যায়। মানসিক এবং শারীরিক দূরত্ব অনেক সময় সম্পর্ক ভাঙনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই বেডরুমের পরিবেশকে সুখময় এবং শান্তিপূর্ণ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বেডরুমের সাজসজ্জা ও বাস্তু নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে অনেক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। শুধু গ্রহের প্রতিকার করলেই হবে না; বেডরুমের সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করাও সমান জরুরি। তাই ফেং শুই এবং বাস্তুশাস্ত্র মেনে বেডরুম সাজানোর মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনে সুখ এবং শান্তি আনা সম্ভব।

দাম্পত্য জীবন সুখময় এবং দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য বেডরুমের গুরুত্ব অপরিসীম। ফেং শুই এবং বাস্তুশাস্ত্র মেনে বেডরুম সাজানোর মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান করা যায়। শারীরিক এবং মানসিক সুখ সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে, যা শেষ পর্যন্ত জীবনকে আরও সুন্দর করে তোলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *