প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ফিটনেসের রহস্য — টক দই না শৃঙ্খলা? জানুন ‘ইন্ডাস্ট্রি’র শরীরচর্চার গোপন সূত্র

Spread the love

টক দই শরীরের জন্য উপকারী—এতে থাকে প্রোবায়োটিক, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি-গ্রুপ, যা হজমশক্তি বাড়ায়, শরীরকে হালকা রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শক্ত করে।


বাংলা চলচ্চিত্রের ‘ইন্ডাস্ট্রি’ বলা হয় যাঁকে, সেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আজও আশ্চর্য রকম ফিট, এনার্জেটিক এবং প্রাণবন্ত। বয়সের ঘড়ি যখন ষাটের কোঠায় পৌঁছেছে, তখনও তিনি পর্দায় ঠিক ততটাই চটপটে, যতটা ছিলেন নব্বই দশকে। অনেকেই অবাক হয়ে ভাবেন—এটা কীভাবে সম্ভব? ঠিক কী এমন করেন তিনি যে এত বছর পরেও শরীর ও মানসিক ফিটনেস একই রকম টানটান?

প্রসেনজিতের নাম শুনলেই মনে পড়ে যায় কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা, এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রতীক। তাঁর ফিটনেসের গোপন রহস্য নিয়ে ভক্তদের আগ্রহ কম নয়। বহুবার আলোচনায় এসেছে—প্রসেনজিতের রোজকার খাদ্যতালিকায় থাকা ‘টক দই’ নাকি তাঁর ফিটনেসের মূল চাবিকাঠি। কিন্তু সত্যিই কি কেবল টক দই-ই তাঁকে এতটা তরতাজা রাখে?


টক দই: প্রসেনজিতের নিয়মিত ডায়েটের অন্যতম উপাদান

প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায় ছোটবেলা থেকেই খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখেন। টক দই তাঁর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকার অপরিহার্য অংশ। তিনি বলেন, “আমি প্রতিদিন দই খাই, কারণ এটি শরীর ঠান্ডা রাখে, হজম ভালো করে এবং সারাদিন শক্তি দেয়।”

টক দই আসলে প্রোবায়োটিক খাদ্য, যা অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন বি২, বি১২ এবং ফসফরাস। নিয়মিত দই খাওয়া শরীরকে হালকা রাখে, গ্যাস-অম্বল কমায় এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, টক দই নিয়মিত খেলে শরীরের হজমশক্তি উন্নত হয় এবং বিপাকক্রিয়া ঠিক থাকে। ফলে চর্বি জমে না, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। সম্ভবত এই কারণেই প্রসেনজিৎ টক দইকে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখেন।

তবে এটিই তাঁর ফিটনেসের একমাত্র রহস্য নয়।


শৃঙ্খলিত জীবন: ফিটনেসের মেরুদণ্ড

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের মূল মন্ত্র একটাই—“শৃঙ্খলা”।
তিনি বলেন, “ফিটনেস মানে শুধু শরীর নয়, মনেরও যত্ন নেওয়া।”

প্রতিদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা তাঁর অভ্যাস। সকাল শুরু করেন ধ্যান বা যোগব্যায়াম দিয়ে। এরপর হালকা স্ট্রেচিং, কার্ডিও এবং জিম ওয়ার্কআউট—সব কিছুই নিয়মমাফিক চলে।

তিনি নিজের শরীরের চাহিদা বোঝেন, তাই কখন কী খেতে হবে, কখন বিশ্রাম নিতে হবে—সবকিছুর নির্দিষ্ট সময় আছে। অযথা রাত জাগা, অস্বাস্থ্যকর খাবার বা অতিরিক্ত কাজের চাপ—এসব থেকে দূরে থাকেন তিনি।

এই শৃঙ্খলিত রুটিনই তাঁকে আজও তরুণদের মতো ফিট রাখে।


ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েট: বাঙালিয়ানা খাবারেই ফিটনেসের রসদ

অনেকে মনে করেন, সিনেমার নায়ক মানেই কঠিন ডায়েট—প্রোটিন শেক, সালাড, কিটো বা জটিল খাবার তালিকা। কিন্তু প্রসেনজিতের ডায়েট আশ্চর্য রকম সাধারণ।
তিনি ভাত, ডাল, মাছ, সবজি, ফল—সবই খান, তবে পরিমাণে নিয়ন্ত্রিতভাবে।

তিনি বিশ্বাস করেন, “খাবার থেকে আনন্দ পাওয়া দরকার, কিন্তু শরীরের প্রয়োজন বোঝা আরও জরুরি।”

টক দই তাঁর প্রতিদিনের লাঞ্চ বা ডিনারের সঙ্গে থাকে। কখনও এক বাটি দই, কখনও দই-ভাত, আবার কখনও ফলের সঙ্গে দই। এটি তাঁর ডায়েটের ভারসাম্য রাখে এবং শরীরের অম্লতা কমায়।

চিনি বা অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার তিনি এড়িয়ে চলেন। জাঙ্ক ফুড, তেলেভাজা, সফট ড্রিংকস তাঁর খাদ্যতালিকায় নেই বললেই চলে।


ব্যায়াম ও ফ্লেক্সিবিলিটি: শরীরচর্চার অন্য নাম ‘ধৈর্য’

প্রসেনজিৎ শুধু ভারোত্তোলন বা জিমের ওপর নির্ভর করেন না। বরং তিনি শরীরচর্চাকে জীবনযাপনের অংশ করে নিয়েছেন।
তিনি প্রতিদিন অন্তত ৬০–৯০ মিনিট ব্যায়াম করেন, যেখানে স্ট্রেচিং, কার্ডিও, যোগ, মেডিটেশন সবই অন্তর্ভুক্ত থাকে।

তাঁর মতে, “শরীর শুধু শক্তিশালী নয়, নমনীয়ও হতে হবে। সেটাই প্রকৃত ফিটনেস।”
এই কারণেই তিনি যোগাসন ও প্রণায়ামকে সমান গুরুত্ব দেন।

বয়স বাড়লেও তিনি নিজের শরীরকে লচকদার ও সক্রিয় রাখতে চান। তাই শুধু পেশি গঠনের দিকে নয়, মন ও শরীরের ভারসাম্যের দিকেও নজর রাখেন।


জল ও হাইড্রেশন: অদৃশ্য কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ রহস্য

প্রসেনজিতের ফিটনেসের অন্যতম গোপন সূত্র তাঁর জলপান অভ্যাস।
তিনি দিনে প্রচুর পরিমাণে জল খান—প্রায় ৩–৪ লিটার পর্যন্ত।

তাঁর বিশ্বাস, শরীর হাইড্রেটেড থাকলে ত্বক সতেজ থাকে, শরীরের ক্লান্তি কমে যায় এবং বিপাকক্রিয়া ঠিক থাকে।
টক দই ও জল একসঙ্গে শরীরের অ্যাসিড-বেস ভারসাম্য রক্ষা করে, যা হজমের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।

শ্যুটিং বা বাইরে কাজের সময়ও তিনি জল ও দই কখনো বাদ দেন না। এমনকি দীর্ঘ শিডিউলেও তিনি এই রুটিন বজায় রাখেন।


মানসিক ফিটনেস: শান্ত মনের শক্তি

প্রসেনজিৎ মনে করেন, শরীরের ফিটনেসের মতোই মনের শান্তিও জরুরি। তিনি প্রায়ই বলেন,
“যতই শরীরচর্চা করুন, মন যদি অস্থির থাকে, তাহলে শরীরও ক্লান্ত হয়ে পড়বে।”

তাই প্রতিদিন কিছুটা সময় তিনি নিজের সঙ্গে কাটান—ধ্যান করেন, বই পড়েন, সঙ্গীত শোনেন বা নিঃশব্দে চিন্তা করেন।
এই মানসিক ভারসাম্যই তাঁকে চাপের মধ্যেও স্থির থাকতে সাহায্য করে।


ঘুম ও বিশ্রাম: অদেখা ফিটনেস মন্ত্র

প্রসেনজিৎ কখনও রাত জাগেন না।
তিনি বলেন, “ঘুম শরীরের রিফ্রেশ বাটন।”
প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম তাঁর ফিটনেস রুটিনের অপরিহার্য অংশ।

যথেষ্ট বিশ্রাম না পেলে শরীর ক্লান্ত হয়, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং চেহারায় ক্লান্তি ফুটে ওঠে।
তাই কাজ যতই ব্যস্ত হোক না কেন, তিনি বিশ্রামের সময় ঠিক রাখেন।


টক দইয়ের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব

ডায়েটিশিয়ানদের মতে, টক দই খাওয়া কেবল হজমের জন্যই নয়, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
এতে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করে, যা হজমের সমস্যা, পেট ফাঁপা, এমনকি ত্বকের সমস্যাও কমায়।
এছাড়াও দইয়ে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড় শক্ত করে এবং ভিটামিন বি১২ স্নায়ুর স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।

প্রসেনজিতের ক্ষেত্রে, নিয়মিত টক দই খাওয়া তাঁকে ফ্রেশ, এনার্জেটিক এবং চনমনে রাখে।


আত্মনিয়ন্ত্রণই আসল রহস্য

অনেকেই ভাবেন, ফিটনেস মানেই কঠিন ডায়েট বা ব্যয়বহুল জিম। কিন্তু প্রসেনজিতের মতে, ফিটনেস শুরু হয় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থেকে।
তিনি বলেন, “আমি শরীরের সঙ্গে যুদ্ধ করি না, ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করি।”

এই কথার অর্থ, তিনি শরীরের সীমা বুঝে কাজ করেন, অতিরিক্ত কিছু করেন না, আবার অবহেলাও করেন না।
এই ভারসাম্যই তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে সুস্থ ও সক্রিয় রেখেছে।


প্রসেনজিৎ: এক অনুপ্রেরণা

যে বয়সে অনেকেই ধীরে চলার কথা ভাবেন, প্রসেনজিৎ সেখানে প্রতিদিন নিজেকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করেন।
তিনি প্রমাণ করেছেন, ফিট থাকা মানে শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং নিয়ম, সংযম ও মানসিক দৃঢ়তার ফল।

আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য তিনি এক বাস্তব উদাহরণ—যে শৃঙ্খলা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ইতিবাচক মানসিকতা থাকলে বয়স কেবল একটি সংখ্যা।


উপসংহার

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ফিটনেস রহস্য একক কোনো খাদ্য নয়।
টক দই তাঁর লাইফস্টাইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, আসল গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে তাঁর নিয়মিত জীবনযাপন, মানসিক শান্তি, ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও আত্মনিয়ন্ত্রণে।

তিনি যেমন বলেন,
“শরীর একটা মন্দিরের মতো। তুমি যত যত্ন করবে, ততই তা তোমাকে ফিরিয়ে দেবে।”

তাই ফিটনেস চাওয়া মানে শুধু টক দই খাওয়া নয়—বরং নিজেকে প্রতিদিন ভালোভাবে সাজিয়ে তোলা, শৃঙ্খলা মানা, এবং নিজের প্রতি দায়িত্বশীল থাকা।
এটাই তাঁর দীর্ঘস্থায়ী ফিটনেসের প্রকৃত সূত্র।

]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *