প্লাস্টিক সার্জারি আর করছে না মানুষ, ‘নকল’ লুকের পরিবর্তে মানুষ এখন চায় স্বাভাবিক সৌন্দর্য!

Spread the love

সার্জনরা বলছেন, মানুষ এখন ‘নকল’ বা ‘ওভারডোন’ লুকের পরিবর্তে ছোট, পরিমিত এবং স্বাভাবিক সৌন্দর্যের দিকে ঝুঁকছে।

কিছুদিন আগেও সোশ্যাল মিডিয়া এবং সেলিব্রিটি সংস্কৃতির প্রভাবে মানুষ প্রচুর ফিলার, ইমপ্লান্ট এবং বড় আকৃতির সার্জারি করাচ্ছিল। কিন্তু বর্তমানে রোগীরা স্তন ছোট করানো, ফিলার কমানো এবং স্বাভাবিক শারীরিক আকৃতি ধরে রাখার জন্য নানা ধরনের পরিবর্তন চাইছে।

নিউ ইয়র্কের ৭৪০ পার্ক প্লাস্টিক সার্জারির বোর্ড সার্টিফায়েড প্লাস্টিক সার্জন ড. স্টাফোর্ড ব্রুম্যান্ড বলেন, “রোগীরা এখন বড় আকৃতির পরিবর্তে তুলনামূলক ছোট আকৃতির পরিবর্তন চাচ্ছে। তারা শরীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে চায়, বড় আকারের ইমপ্লান্টের পরিবর্তে শরীরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবর্তন করতে আগ্রহী।”

একসময় হলিউড তারকাদের মতো বড় ঠোঁট, বড় স্তন এবং বড় নিতম্বের ট্রেন্ড ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। বিশেষ করে কারদাশিয়ান পরিবারের সৌন্দর্য ট্রেন্ডের কারণে ব্রাজিলিয়ান বাট লিফট (BBL), লিপ ফিলার এবং বড় স্তন ইমপ্লান্টের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে।

কিন্তু এখন সার্জনরা বলছেন, এই ‘নকল’ সৌন্দর্যের চাহিদা কমে এসেছে। মানুষ এখন চাইছে আরও স্বাভাবিক চেহারা। অনেকেই তাদের আগে নেওয়া ইমপ্লান্ট বা ফিলার কমিয়ে ফেলতে চাচ্ছে।

ড. ব্রুম্যান্ড বলেন, “রোগীরা এখন আরও ছোট স্তনের ইমপ্লান্ট চাচ্ছে। অনেকে আগের চেয়ে স্বাভাবিক ঠোঁট এবং নিতম্বের আকৃতি চাচ্ছে, যেখানে অতিরিক্ত পরিবর্তনের পরিবর্তে সামঞ্জস্য বজায় রাখা হয়।” তিনি আরও বলেন, “আগে রোগীরা বড় আকৃতির পরিবর্তন চাইত। এখন তারা চায় শরীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধরে রাখতে।”

বেভারলি হিলসের প্লাস্টিক সার্জন ড. বাবাক আজিজজাদেহ জানান, বর্তমানে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হচ্ছে ফিলার কমানোর প্রবণতা।

“আগে মানুষ প্রতি ছয় থেকে বারো মাস অন্তর ফিলার পুনরায় করাতো। কিন্তু গবেষণা বলছে, এই ফিলার কয়েক বছর পর্যন্ত শরীরে থেকে যেতে পারে,” বলেন তিনি। যারা অতিরিক্ত ফিলার নিয়েছিল, তাদের অনেকেই এখন মুখের অতিরিক্ত পূর্ণতা দূর করতে চাইছে। যদিও ফিলার সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়, তবু অনেক রোগী এখন সার্জিক্যাল লিপ লিফট এবং ফ্যাট গ্রাফটিংয়ের মতো পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে।

উত্তর শোর ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ড. লাইল লেইপজিগার বলেন, রোগীরা এখন ‘ফিট’ এবং ‘অ্যাথলেটিক’ চেহারার দিকে বেশি ঝুঁকছে।

“আমাদের কাছে আসা অনেক রোগী স্তন হ্রাস ও লিফট করাচ্ছে। তারা শরীরের প্রাকৃতিক আকার বজায় রেখে আকর্ষণীয় দেখাতে চায়,” তিনি জানান।

ওজন কমানোর ওষুধ, বিশেষ করে ওজেম্পিক এবং অন্যান্য সেমাগ্লুটাইড-ভিত্তিক ওষুধের জনপ্রিয়তা প্লাস্টিক সার্জারির ওপর বিশাল প্রভাব ফেলেছে। ড. আজিজজাদেহ বলেন, “যখন কেউ দ্রুত ওজন কমায়, তখন মুখের চামড়া ঢিলে হয়ে যায়, যা বয়স্ক দেখায়। এছাড়া, ওজন কমলে শরীরের ফ্যাট কোষের পরিবর্তন ঘটে, ফলে অনেকে মুখের ফ্যাট গ্রাফটিং বা ফেসলিফটের প্রয়োজন অনুভব করে।”

ড. ব্রুম্যান্ড বলেন, “আগে আমরা রোগীদের শরীর থেকে চর্বি অপসারণ করতাম। এখন ওজন কমানোর ওষুধের কারণে আমরা অতিরিক্ত ত্বক সরানোর পাশাপাশি কোথাও কোথাও চর্বি যোগ করছি, যাতে শরীরের আকার স্বাভাবিক থাকে।”

আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে অল্প বয়সী শিশুরাও সৌন্দর্য পণ্যের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। শিশু-কিশোররা প্রচুর মেকআপ, স্কিনকেয়ার পণ্য এবং অন্যান্য প্রসাধনী ব্যবহার করছে। ডার্মাটোলজিস্ট ড. জোডি লেভিন জানান, “অনেক শিশু তাদের ত্বকের প্রাকৃতিক উন্নতি না ঘটিয়ে, অল্প বয়সেই প্রচুর প্রসাধনী ব্যবহার করছে। এতে তাদের ত্বকের সমস্যা হতে পারে।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক মানুষ ‘পিলো ফেস’ ট্রেন্ড সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে। এটি এমন এক অবস্থা যেখানে অতিরিক্ত ফিলারের কারণে মুখ ফুলে যায় এবং অস্বাভাবিক দেখায়।

“আগে মানুষ যেকোনো জায়গায় গিয়ে ফিলার করিয়ে নিতো। কিন্তু এখন সবাই বোর্ড সার্টিফায়েড চিকিৎসকের কাছে যেতে চায়, যাতে কাজটি নিখুঁত হয়,” বলেন ড. ব্রুম্যান্ড।

তিনি আরও বলেন, “আমি সবসময় বিশ্বাস করেছি, রোগীদের জন্য ট্রেন্ড নয়, বরং তাদের প্রয়োজনের ভিত্তিতে কাজ করা উচিত। কারণ, ট্রেন্ড পরিবর্তন হয়, কিন্তু সার্জারি সবসময় স্থায়ী হতে পারে।”

ড. আজিজজাদেহ বলেন, “বর্তমানে মানুষ আগের চেয়ে বেশি প্লাস্টিক সার্জারি করাচ্ছে, কিন্তু তারা চাইছে যেন সেটা স্বাভাবিক ও সূক্ষ্ম দেখায়। ‘নো-মেকআপ’ এবং ‘ক্লিন-ফেস’ লুকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, তাই এখন সার্জারির লক্ষ্য হলো এমন কিছু করা, যাতে মনে হয় কিছুই করা হয়নি।”

“শেষ পর্যন্ত, ট্রেন্ড কেবল ফ্যাশনের জন্য হওয়া উচিত, সার্জারির জন্য নয়,” তিনি বলেন। “যারা ট্রেন্ড অনুসরণ করে প্লাস্টিক সার্জারি করান, তারা পরে হয়তো অনুশোচনা করবেন, যখন সেই ট্রেন্ড বদলে যাবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা প্লাস্টিক সার্জারি করাতে চান, তাদের অবশ্যই কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত—

  • সঠিক সার্জন নির্বাচন করুন: একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকই আপনার সৌন্দর্য ঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। ভুল চিকিৎসকের হাতে গেলে খারাপ ফল হতে পারে।
  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখুন: অত্যাধিক পরিবর্তনের চেষ্টা না করে নিজের বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা ভালো।
  • ওজন স্থিতিশীল রাখা প্রয়োজন: বিশেষ করে যারা ওজন কমিয়ে সার্জারি করাতে চান, তাদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • ট্রেন্ড নয়, নিজের প্রয়োজন বিবেচনা করুন: বর্তমান ফ্যাশনের ওপর নির্ভর করে সার্জারি করালে পরে অনুশোচনা হতে পারে।

সামগ্রিকভাবে, প্লাস্টিক সার্জারির ধারা এখন স্বাভাবিক এবং সূক্ষ্ম পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে। ‘ওভারডোন’ বা ‘নকল’ চেহারার দিন শেষ হয়ে এসেছে। এখন মানুষ চায় এমন পরিবর্তন, যা তাদের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় রাখবে, কিন্তু অতিরিক্ত কিছু মনে হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *