দিলীপ কুমার থেকে এ আর রহমান! মুসলিম কী ছিলেন না এ আর রহমান? জানুন অজানা সত্য

Spread the love

এ আর রহমান: সুরের মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতার এক নতুন সংজ্ঞা

ভারতীয় সঙ্গীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, এ আর রহমান। তাঁর সুর শুধুমাত্র বিনোদন নয়, বরং এক আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা। ১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারি চেন্নাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন রহমান, তাঁর আসল নাম ছিল এ এস দিলীপ কুমার। কীভাবে তিনি দিলীপ কুমার থেকে এ আর রহমান হয়ে উঠলেন? চলুন, তাঁর জীবন ও সংগ্রামের গল্প জেনে নেওয়া যাক।

ছোটবেলার সংগ্রাম ও সঙ্গীতের প্রতি প্রেম

এ আর রহমানের বাবা আর কে শেখর ছিলেন একজন প্রতিভাবান সঙ্গীত পরিচালক। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল। কিন্তু মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবাকে হারান, যার ফলে তাঁদের পরিবারে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। বাবার বাদ্যযন্ত্র ভাড়া দিয়ে কোনওভাবে সংসার চালাতে শুরু করেন তাঁর মা করিমা বেগম

পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি সঙ্গীতচর্চা চালিয়ে যান রহমান। বিজ্ঞাপনের জিঙ্গল তৈরি করা থেকে শুরু করে নেমেসিস অ্যাভিনিউ নামক ব্যান্ড গঠন পর্যন্ত, তাঁর সঙ্গীতযাত্রা শুরু হয় কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে।

ইসলাম গ্রহণ এবং আধ্যাত্মিক পরিবর্তন

১৯৮৬ সালে রহমানের মা করিমা বেগম সুফি পীর করিমুল্লাহ শাহ কাদরির সংস্পর্শে আসেন। সুফি দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে রহমান এবং তাঁর পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি নতুন নামে পরিচিত হন— আল্লাহ রাখা রহমান (এ আর রহমান)

তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “সুফি দর্শন আমাকে শিখিয়েছে যে মানবতার কোনও সীমানা নেই। সূর্য বা বৃষ্টি যেমন সকলকে সমানভাবে স্পর্শ করে, তেমনি আমাদেরও উচিত সকল মানুষের প্রতি সমান ভালোবাসা প্রদর্শন করা।

দিলীপ কুমার থেকে এ আর রহমান! মুসলিম কী ছিলেন না এ আর রহমান? জানুন অজানা সত্য

বলিউড এবং হলিউডে সাফল্যের শীর্ষে

১৯৯২ সালে মণিরত্নম পরিচালিত ‘রোজা’ ছবির মাধ্যমে রহমানের বলিউডে অভিষেক ঘটে। এই ছবির সঙ্গীত বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয় এবং টাইম ম্যাগাজিন এটি সর্বকালের সেরা দশটি সাউন্ডট্র্যাকের মধ্যে একটি হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ‘বোম্বে’, ‘দিল সে’, ‘তাল’, ‘লগান’, ‘রঙ্গ দে বসন্তী’— প্রতিটি ছবির সঙ্গীতই অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করে।

২০০৮ সালে ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’-এর জন্য তিনি দুটি অস্কার জেতেন, যা ভারতীয় সঙ্গীতকে বিশ্ব দরবারে নতুনভাবে পরিচিত করায়। এছাড়া তিনি গোল্ডেন গ্লোব ও গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জেতেন।

ব্যক্তিগত জীবন ও সর্বধর্ম সমন্বয়

এ আর রহমান সবসময় তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতার উপর নির্ভর করেছেন। তাঁর বাড়িতে এখনও হিন্দু দেবদেবীর ছবি ও মা মেরির সঙ্গে যিশুখ্রিষ্টের ছবি রাখা আছে, যা তাঁর সর্বধর্ম সমন্বয়ের দর্শনকে তুলে ধরে।

তিনি বলেন, “আমার সঙ্গীত আমার প্রার্থনার মতো, এটি আমাকে ঈশ্বরের কাছাকাছি নিয়ে যায়।

এ আর রহমান: এক যুগের প্রতীক

এ আর রহমান শুধু একজন সঙ্গীতজ্ঞ নন, তিনি একটি যুগের প্রতীক। তাঁর সঙ্গীত নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে এবং তিনি প্রমাণ করেছেন যে সঙ্গীতের কোনো সীমানা নেই। তাঁর কাজ ভারতীয় সঙ্গীতকে বিশ্ব মঞ্চে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *