বিশ্বের দীর্ঘতম ১০টি রেলওয়ে টানেল – কোথায় কোথায় রয়েছে? ভারত কি এই তালিকায় আছে?

Spread the love

বিশ্বের দীর্ঘতম রেলওয়ে টানেল: প্রকৌশল ও প্রযুক্তির বিস্ময়

বিশ্বের দীর্ঘতম রেলওয়ে টানেলগুলো শুধুমাত্র দৈর্ঘ্যের দিক থেকেই নয়, বরং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের অন্যতম নিদর্শন। পাহাড়ের নিচ দিয়ে, সমুদ্রের গভীরে কিংবা কঠিন ভূপ্রাকৃতিক বাধা অতিক্রম করে তৈরি হওয়া এই টানেলগুলো আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক অনন্য উদাহরণ। এসব টানেল দ্রুতগতির ট্রেন চলাচলকে আরও সহজ ও নিরাপদ করেছে, সময় বাঁচিয়েছে এবং দেশগুলোর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

আজ আমরা জানবো বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ১০টি রেলওয়ে টানেলের সম্পর্কে, যেখানে প্রতিটি টানেল নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং প্রযুক্তির কারণে ব্যতিক্রমী।


১. গথার্ড বেস টানেল – ৫৭.১ কিলোমিটার (সুইজারল্যান্ড)

বিশ্বের দীর্ঘতম রেল টানেল হলো সুইজারল্যান্ডের গথার্ড বেস টানেল, যা ২০১৬ সালে উদ্বোধন করা হয়। এটি সুইস আল্পস পর্বতমালার নিচ দিয়ে নির্মিত এবং সোর্ডরফ ও অ্যাগনল্টস শহরকে সংযুক্ত করে।

🔹 নির্মাণ শুরু: ২০০১
🔹 উদ্বোধন: ২০১৬
🔹 দৈর্ঘ্য: ৫৭.১ কিলোমিটার
🔹 নির্মাণ ব্যয়: প্রায় ১২ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক
🔹 বিশেষত্ব: মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য ডিজাইন করা

এই টানেল দিয়ে সুইজারল্যান্ড ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের মধ্যে বাণিজ্য, পর্যটন ও দ্রুতগামী যাতায়াত আরও সহজ হয়েছে।


২. সেইকান টানেল – ৫৩.৯ কিলোমিটার (জাপান)

বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম রেল টানেল সেইকান টানেল, যা জাপানের সুগারু স্ট্রেটের নিচ দিয়ে তৈরি হয়েছে এবং হনসু ও হোকাইডো দ্বীপ সংযুক্ত করেছে।

🔹 নির্মাণকাল: ১৭ বছর
🔹 উদ্বোধন: ১৯৮৮
🔹 বিশেষত্ব: এটি বিশ্বের প্রথম ভূগর্ভস্থ রেল টানেল যা ভূমিকম্প প্রতিরোধী প্রযুক্তি দ্বারা নির্মিত।

এটি প্রতিদিন জাপানের শিনকানসেন বুলেট ট্রেনের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সেইকান টানেল

৩. চ্যানেল টানেল – ৫০.৫ কিলোমিটার (যুক্তরাজ্য-ফ্রান্স)

ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী এই টানেল ইংলিশ চ্যানেলের নিচ দিয়ে নির্মিত। এটি ১৯৯৪ সালে চালু হয় এবং বর্তমানে এটি ইউরোপের অন্যতম ব্যস্ততম রেল সংযোগ।

🔹 নির্মাণ ব্যয়: ১০ বিলিয়ন ইউরো
🔹 বিশেষত্ব: এটি বিশ্বের দীর্ঘতম আন্ডারওয়াটার রেল টানেল

এই টানেল দিয়ে দ্রুতগতির ইউরোস্টার ট্রেন চলে, যা মাত্র ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিটে লন্ডন থেকে প্যারিস পৌঁছে


৪. ইউলিয়ন টানেল – ৫০.৩ কিলোমিটার (দক্ষিণ কোরিয়া)

দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল শহরের রেল যোগাযোগের একটি অত্যাধুনিক অংশ হলো ইউলিয়ন টানেল। এটি বাণিজ্য ও যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

🔹 নির্মাণ শুরু: ১৯৯০-এর দশক
🔹 বিশেষত্ব: এটি দক্ষিণ কোরিয়ার দ্রুতগতির ট্রেন ব্যবস্থার জন্য নির্মিত, যা দেশটির অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলেছে।


৫. সংসান লেক টানেল – ৩৮.৮ কিলোমিটার (চীন)

চীনের দ্রুতগতির ট্রেন নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে এই টানেলটি গুয়াংডং প্রদেশে নির্মিত হয়েছে।

🔹 বিশেষত্ব: এটি হাইস্পিড ট্রেন চলাচলের জন্য তৈরি এবং মালবাহী ট্রেনের জন্যও ব্যবহার করা হয়।

সংসান লেক টানেল

৬. লচেসবার্গ টানেল – ৩৪.৬ কিলোমিটার (সুইজারল্যান্ড)

সুইজারল্যান্ডের এই টানেলটি বার্ন শহর থেকে দক্ষিণ ইতালির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। এটি আল্পস পর্বতমালার নিচ দিয়ে তৈরি, যা পণ্য পরিবহণ ও দ্রুত ট্রেন যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


৭. নিউ গুয়ানজো টানেল – ৩২.৭ কিলোমিটার (চীন)

🔹 বিশেষত্ব: চীনের হাইস্পিড রেল যোগাযোগ উন্নত করার জন্য নির্মিত হয়েছে।


৮. গুয়াদ্রামা টানেল – ২৮.৫ কিলোমিটার (স্পেন)

🔹 বিশেষত্ব: স্পেনের মাদ্রিদ ও দেশের উত্তরাঞ্চলের মধ্যে দ্রুত ও নিরাপদ যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত করেছে


৯. ওয়েস্ট কিনলিং টানেল – ২৮.২ কিলোমিটার (চীন)

🔹 বিশেষত্ব: এটি চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে রেল যোগাযোগকে শক্তিশালী করেছে


১০. তাইসাং পাহাড় টানেল – ২৭.৮ কিলোমিটার (চীন)

🔹 বিশেষত্ব: চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ


ভারতে কি দীর্ঘ রেলওয়ে টানেল আছে?

বিশ্বের শীর্ষ ১০ তালিকায় ভারত নেই, তবে কিছু উল্লেখযোগ্য দীর্ঘ রেল টানেল রয়েছে—

পির পান্জাল রেল টানেল (১১.২ কিলোমিটার) – এটি ভারতের দীর্ঘতম রেল টানেল, যা জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে গিয়েছে।
আতল রোহতাং টানেল (৯.০২ কিলোমিটার) – বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রেলপথ টানেলগুলোর মধ্যে একটি।

ভারত বর্তমানে দ্রুতগতির রেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা ভবিষ্যতে ভারতকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।


উপসংহার

বিশ্বের দীর্ঘতম রেলওয়ে টানেলগুলো শুধু প্রকৌশলগত বিস্ময় নয়, বরং এগুলো যাতায়াত, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক বিশাল ভূমিকা পালন করছে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ভবিষ্যতে আরও দীর্ঘ ও উন্নত টানেল তৈরি হতে পারে, যা গ্লোবাল ট্রান্সপোর্টেশন ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক করে তুলবে।

🔔 আপনার মতামত কমেন্টে জানান – কোন রেলওয়ে টানেলটি আপনার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *