জোরপূর্বক ঠোঁট-কামড়ে চুমু খেয়ে নিয়েছিলেন বাঙালি নায়ক, বিরাট কান্ড ঘটেছিল সেদিন সেটে! চমকে উঠবেন

Spread the love

রেখা: এক রহস্যময় সৌন্দর্যের সংগ্রামী জীবন

বলিউড ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসে কিছু নাম চিরকালীন রহস্যময় ও স্মরণীয় হয়ে থাকে। রেখা এবং বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়—দুজনেই তাঁদের অভিনয়গুণ, সৌন্দর্য ও স্টাইলের জন্য জনপ্রিয় হয়েছেন। তবে তাঁদের জীবনযাত্রা, সাফল্য এবং ব্যক্তিগত জীবন নানা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে।

রেখার আসল নাম ভানুরেখা গণেশন। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১০ অক্টোবর ১৯৫৪ সালে, চেন্নাইতে। তাঁর বাবা ছিলেন দক্ষিণী চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা জেমিনি গণেশন, এবং মা ছিলেন তামিল অভিনেত্রী পুষ্পবল্লী। কিন্তু রেখার জন্মের পর থেকেই তিনি বাবার স্বীকৃতি পাননি, যা তাঁর শৈশবকে কঠিন করে তুলেছিল।

প্রথম ছবিতে বিতর্ক: অঞ্জনা সফরের অন্ধকার অধ্যায়

মাত্র ১৫ বছর বয়সে রেখা বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর প্রথম ছবি ছিল ‘অঞ্জনা সফর’ (পরবর্তীতে ‘দো শিকারি’), যেখানে তাঁর বিপরীতে ছিলেন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এই ছবির শুটিংয়ের সময় এক বিতর্কিত ঘটনার সম্মুখীন হন তিনি—বিশ্বজিৎ তাঁর অনুমতি ছাড়াই চুম্বন করেন, যা নিয়ে পরে বহু বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

বলিউডে রেখার উত্থান ও সাফল্যগাথা

এরপর ধীরে ধীরে রেখা বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করতে থাকেন। ‘খুন ভারি মাঙ্গ’, ‘গরবি’, ‘মুকাদ্দার কা সিকন্দর’, ‘সিলসিলা’, ‘উমরাও জান’—এর মতো ছবিতে অভিনয় করে তিনি সুপারস্টার হয়ে ওঠেন। ১৯৮১ সালে ‘উমরাও জান’ ছবির জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন ও প্রেমের গুঞ্জন

রেখার ব্যক্তিগত জীবন বলিউডের অন্যতম আলোচিত অধ্যায়। তাঁর এবং অমিতাভ বচ্চনের সম্পর্ক নিয়ে বহু গুঞ্জন রয়েছে, বিশেষ করে ‘সিলসিলা’ ছবির পর তাঁদের প্রেম নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়। তবে এই সম্পর্ক পূর্ণতা পায়নি।

পরবর্তীতে রেখা ব্যবসায়ী মুকেশ আগরওয়ালকে বিয়ে করেন, কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যেই মুকেশ আত্মহত্যা করেন। এরপর রেখা একাকীত্বের মধ্যে জীবন যাপন করেন।

আজও রেখা বলিউডের এক চিরসবুজ প্রতিভা। বয়স তাঁর সৌন্দর্যে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। তিনি বলিউডের এক আইকন, যাঁর জীবন সংগ্রাম, সাফল্য ও স্টাইল সবাইকে অনুপ্রেরণা দেয়।

বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়: রোম্যান্টিক হিরো থেকে রাজনীতিক

বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন ১৪ ডিসেম্বর ১৯৩৬ সালে, কলকাতায়। তিনি একজন খাঁটি বাঙালি এবং তাঁর অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয় বাংলা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।

বিশ্বজিৎ প্রথমে বাংলা ছবিতে অভিনয় শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে হিন্দি চলচ্চিত্রেও নিজের জায়গা তৈরি করেন। তিনি মূলত ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে বলিউডে জনপ্রিয়তা পান। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে ‘বিঈমান’, ‘কাহি আর কাহি’, ‘নাইট ইন লন্ডন’, ‘ইয়ে রাত ফির না আয়েগি’, ‘মেরে সনম’, ‘শরারত’, ‘শিকার’ ইত্যাদি।

বিশ্বজিৎ রোম্যান্টিক হিরো হিসেবে বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি অভিনীত ‘মেরে সনম’ ছবির ‘পুকারতা চলা হুঁ মে’ এবং ‘কাহি দিন কাহি রাত’ ছবির ‘নাইনা বারসে রিমঝিম’ গানগুলো আজও শোনা হয়। তাঁর যুগলবন্দি বিশেষ করে মুমতাজ, মধুবালা ও আশা পারেখের সঙ্গে খুবই জনপ্রিয় ছিল।

রেখা ও বিশ্বজিৎ—একটি বিতর্কিত অধ্যায়ের দুই প্রান্ত

বিশ্বজিতের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনা ছিল ১৫ বছর বয়সী রেখার সঙ্গে তাঁর ‘অঞ্জনা সফর’ ছবির চুম্বন দৃশ্য। এই ঘটনার পর রেখা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হন, যদিও বিশ্বজিৎ পরবর্তীতে দাবি করেন যে এটি পরিচালকের নির্দেশেই করা হয়েছিল।

বিশ্বজিৎ হিন্দি ছবির পাশাপাশি বাংলা সিনেমাতেও সফল হন। পরবর্তীতে তিনি রাজনীতির জগতে প্রবেশ করেন এবং ২০১৪ সালে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রার্থী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

বর্তমানে বিশ্বজিৎ চলচ্চিত্রের জগৎ থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। তবে তিনি মাঝে মাঝে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং তাঁর পুরনো কাজের জন্য এখনও সমাদৃত।

চিরকালীন তারকার আসনে রেখা ও বিশ্বজিৎ

রেখা – নামটাই যেন রহস্য, সৌন্দর্য ও ঐন্দ্রজালিক আবেদনকে একসাথে বহন করে। বলিউডে তিনি ‘এভারগ্রিন বিউটি’ নামে পরিচিত। তাঁর বয়স শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায় বাড়ে, কিন্তু তাঁর মোহময়তা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মুগ্ধ করে রেখেছে। আট থেকে আশি—সবার হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া এই অভিনেত্রী কোটি মানুষের স্বপ্নকন্যা। অথচ, পর্দার জীবনে তিনি যতটা সফল, ব্যক্তিগত জীবনে ততটাই কণ্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়েছেন। প্রেম, বিচ্ছেদ, একাকিত্বের ছায়া তাঁকে কখনো একলা করেছে, কখনো আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।

সেই ১৯৬৯ সাল, মাত্র ১৫ বছর বয়সে দক্ষিণী অভিনেত্রী পুষ্পবল্লী ও অভিনেতা জেমিনি গণেশন-এর কন্যা রেখা সিনেমার জগতে পা রাখেন। প্রথম ছবির নাম ছিল ‘অঞ্জনা সফর’, যা পরে ‘দো শিকারি’ নামে মুক্তি পায়। তবে সেই প্রথম ছবির অভিজ্ঞতা আজও দুঃস্বপ্নের মতো ফিরে আসে তাঁর স্মৃতিতে।

পরিচালক কুলজিৎ পাল যখন ‘অ্যাকশন’ বলেন, তখন ১৫ বছরের নাবালিকা রেখার জীবনে ঘটে যায় এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করছিলেন ৩২ বছর বয়সী জনপ্রিয় বাঙালি অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। চিত্রনাট্যে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের কথা থাকলেও, রেখার অনুমতি না নিয়েই বিশ্বজিৎ আচমকা তাঁকে চেপে ধরে ঠোঁটে চুমু খান। সেটে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেও, পরিচালক শটটি কাট করেননি। বরং ক্যামেরা চালিয়ে গিয়েছিলেন, যেন এটি খুবই স্বাভাবিক একটি দৃশ্য!

১৫ বছরের নাবালিকা রেখার পক্ষে এটি ছিল এক ভয়ানক মানসিক আঘাত। তিনি রীতিমতো কেঁদে ফেলেছিলেন। নিজের প্রথম ছবির সেটেই এমন বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা তাঁকে চরমভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল। পরে তাঁর আত্মজীবনী ‘রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ বইতে তিনি উল্লেখ করেন, শুটিংয়ের সেই মুহূর্তটি তাঁর জীবনে এক ভয়াবহ স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে।

বছর পেরিয়ে গেলেও এই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক কমেনি। একটি সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, এটি পরিচালকের নির্দেশেই করা হয়েছিল। তাঁর ভাষায়, “পরিচালক আমায় চুমু খেতে বলেছিলেন। আমি তো শুধু তাঁর নির্দেশ পালন করেছি। তাছাড়া, দর্শক দৃশ্যটি পছন্দ করেছিল, তাহলে ভুল কোথায়?”

কিন্তু প্রশ্ন হলো, তখনকার সময়ে ১৫ বছর বয়সী এক নাবালিকার অনুমতি ছাড়াই এমন কিছু করা কতটা নৈতিক ছিল?

‘অঞ্জনা সফর’ শুটিং হয়েছিল ১৯৭০-এর শুরুর দিকে, কিন্তু সেন্সর বোর্ডের কারণে ছবিটি দীর্ঘদিন আটকে ছিল। প্রায় ১০ বছর পর, ১৯৭৯ সালে ‘দো শিকারি’ নামে ছবিটি মুক্তি পায়, কিন্তু বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।

অন্যদিকে, রেখার ক্যারিয়ার থেমে থাকেনি। সময়ের সাথে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন বলিউডের অন্যতম সফল নায়িকা হিসেবে। তাঁর ‘খুন ভারি মাঙ্গ’, ‘সিলসিলা’, ‘মুকাদ্দার কা সিকন্দর’, ‘গরবি’, ‘উমরাও জান’—প্রতিটি ছবিই তাঁকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। ১৯৮১ সালে ‘উমরাও জান’ ছবিতে তাঁর অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

পর্দার জীবনে তিনি অগণিত পুরুষের হৃদয়ের রানি হলেও, বাস্তব জীবনে রেখা ভালোবাসা পাননি বললেই চলে। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। তাঁদের রসায়ন ‘সিলসিলা’ ছবিতে ধরা পড়লেও, বাস্তব জীবনে সেই সম্পর্ক পূর্ণতা পায়নি।

এত প্রতিকূলতা, এত ব্যথা-ব্যর্থতার পরও রেখা আজও বলিউডের ‘এভারগ্রিন বিউটি’। বয়স তাঁর ওপর কোনো ছাপ ফেলতে পারেনি। তিনি আজও তাঁর ঐশ্বরিক সৌন্দর্য ও শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব দিয়ে বলিউডে নিজের জায়গা ধরে রেখেছেন।

রেখা এবং বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দুই কিংবদন্তিই তাঁদের অভিনয় প্রতিভার মাধ্যমে বলিউডে নিজেদের নাম উজ্জ্বল করেছেন। একজন আজও বলিউডের এভারগ্রিন অভিনেত্রী, আরেকজন তাঁর সোনালি যুগের স্মৃতিতে আজও বেঁচে আছেন। যদিও তাঁদের ক্যারিয়ারে বিতর্ক ছিল, তবুও তাঁদের প্রতিভা কখনও ম্লান হয়নি। বলিউডের ইতিহাসে তাঁরা চিরকালীন নক্ষত্র হয়ে থাকবেন।

বলিউডের ইতিহাসে রেখার নাম চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাঁর জীবন যেমন জটিল, তেমনই অনুপ্রেরণাদায়ক। প্রথম ছবির সেটে ঘটে যাওয়া ঘটনা যতই ভয়ঙ্কর হোক না কেন, রেখা তা অতিক্রম করে নিজের প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রম দিয়ে বলিউডের শীর্ষস্থান অর্জন করেছেন।

তিনি আজও কোটি কোটি অনুরাগীর স্বপ্নকন্যা, যাঁর সৌন্দর্য, অভিনয়শৈলী এবং ব্যক্তিত্ব সবাইকে মুগ্ধ করে রাখে। রেখা শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তিনি এক শক্তি, এক চিরকালীন রহস্য!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *