২০২৫-এই পৃথিবীর শেষ : পৃথিবীর ধ্বংস বা মহাপ্রলয়ের ভবিষ্যদ্বাণী প্রাচীনকাল থেকে মানুষের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে আছে। বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহাসিক গ্রন্থে পৃথিবীর শেষ নিয়ে বহু ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। এগুলি কখনও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে, কখনও পৌরাণিক কাহিনির মাধ্যমে, আবার কখনও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা দর্শনের ভিত্তিতে উঠে এসেছে।
প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাইবেল, কোরআন, এবং হিন্দু পুরাণ। বাইবেলে পৃথিবীর শেষদিন সম্পর্কে বলা হয়েছে, যাকে “অ্যাপোক্যালিপস” বা “জাজমেন্ট ডে” বলা হয়। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, পৃথিবীতে এক মহাযুদ্ধের সূত্রপাত হবে, যা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে চূড়ান্ত সংঘর্ষ হিসেবে দেখা হয়। বাইবেল অনুসারে, পৃথিবীর শেষ সময়ে মহাপ্রলয়, দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ, এবং মহামারীর মতো ঘটনা ঘটবে। খ্রিস্টান ধর্মে এই সময়কে “সাতটি সিল” বা “সাতটি তূরী”র মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা প্রতীকী ভাষায় ভবিষ্যতের বিপর্যয়গুলিকে চিহ্নিত করে।
ইসলামে কেয়ামতের দিন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যায়। কোরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ রয়েছে, পৃথিবীর শেষ সময়ে অরাজকতা, যুদ্ধ, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর মহান বিচার দিবস আসবে। মুসলিমদের বিশ্বাস, কেয়ামতের আগে ইমাম মাহদির আগমন হবে, যিনি শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন। তবে তাঁর শাসনের পর দাজ্জাল নামক এক দুষ্ট শক্তি উদ্ভব হবে এবং তারপর পৃথিবী ধ্বংসের দিকে যাবে।
হিন্দু পুরাণে পৃথিবীর ধ্বংসের ধারণা ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ, এবং কলি যুগের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কলি যুগ, যা বর্তমান সময় হিসাবে চিহ্নিত, এখানে বলা হয়েছে এটি হবে অন্ধকারের যুগ, যেখানে ধর্মীয় নীতি ও ন্যায়ের চরম অবনতি ঘটবে। এই যুগের শেষে মহাপ্রলয় ঘটবে, এবং শ্রী বিষ্ণু কল্কি অবতারে এসে পৃথিবীকে পুনর্জন্ম দেবেন।
পৌরাণিক কাহিনিগুলির পাশাপাশি, বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে পৃথিবীর ধ্বংস নিয়ে আলাদা আলাদা বিশ্বাস ছিল। মায়া সভ্যতার ক্যালেন্ডার অনুসারে, ২০১২ সালে পৃথিবীর ধ্বংস হবে বলে অনেকের বিশ্বাস ছিল। যদিও এটি আসলে একটি ভুল ব্যাখ্যা ছিল, কারণ মায়া ক্যালেন্ডারের একটি নির্দিষ্ট চক্র শেষ হচ্ছিল মাত্র। তবুও, সেই সময় এটি নিয়ে সারা বিশ্বে চরম উত্তেজনা এবং আলোচনা হয়েছিল।
নস্ট্রাডামাস, একজন বিখ্যাত ভবিষ্যদ্বক্তা, তাঁর লেখা কবিতার মাধ্যমে বহু ঘটনার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। তাঁর বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হওয়ার কারণে, পৃথিবীর ধ্বংস নিয়ে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীগুলিও অত্যন্ত গুরুত্ব পেয়েছে। নস্ট্রাডামাসের লেখা অনুযায়ী, পৃথিবীতে একসময় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে, যা মানবজাতির ধ্বংস ডেকে আনবে। তিনি উল্লেখ করেছেন, এই যুদ্ধ পারমাণবিক হবে এবং এতে মানুষ ও প্রকৃতির ভয়াবহ ক্ষতি হবে।
বাবা ভাঙ্গা, একজন বুলগেরীয় ভবিষ্যদ্বক্তা, যাঁর বহু ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়েছে বলে দাবি করা হয়, তিনিও পৃথিবীর ধ্বংস নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাঁর মতে, পৃথিবীতে প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ চরম আকার ধারণ করবে। একসময় এই পরিবর্তন এতটাই বিপজ্জনক হবে যে, এটি মানুষের অস্তিত্বকেই প্রশ্নের মুখে ফেলবে।
আধুনিক যুগে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এমন কিছু চিন্তা দেখা যায়, যেখানে বলা হয় যে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ, এবং পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার পৃথিবীর ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি। পরিবেশবিদরা বলছেন, মানবজাতি যদি প্রকৃতির ক্ষতি বন্ধ না করে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে একদিন প্রকৃতি নিজেই পৃথিবী ধ্বংস করবে।
এই সমস্ত ঐতিহাসিক ও আধুনিক ভবিষ্যদ্বাণী একত্রে দেখলে বোঝা যায়, মানুষের অস্তিত্ব এবং পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা সর্বদাই মানুষের মনের গভীরে ছিল। যদিও এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণীগুলি অনেক সময় কল্পনার অংশ বলে বিবেচিত হয়, তবে এগুলির মধ্যে থেকে কিছুটা শিক্ষা নিয়ে মানবজাতির উচিত বর্তমান সমস্যাগুলির সমাধানে কাজ করা।
নিকোলাস অজুলা, একজন স্বঘোষিত ভবিষ্যদ্বক্তা, সম্প্রতি ২০২৫ সালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং মানবতার জন্য এক গভীর সংকটের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তাঁর এই ভবিষ্যদ্বাণী বিশ্বব্যাপী বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। লন্ডনের বাসিন্দা নিকোলাস এর আগে কোভিড-১৯ মহামারী, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া, এবং ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। তাঁর দাবি অনুযায়ী, এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি স্বপ্ন এবং অতীন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তিনি পেয়েছেন। কৈশোরে একবার কোমায় চলে যাওয়ার পর, নিকোলাসের মধ্যে এই ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা বিকশিত হয় বলে তিনি মনে করেন।
নিকোলাসের সাম্প্রতিক ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ২০২৫ সাল মানব ইতিহাসে এক চরম সংকটের বছর হতে চলেছে। তিনি বলেছেন, সেই বছর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হতে পারে, যেখানে ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদের নামে মানুষ একে অপরকে ধ্বংস করার পথে এগিয়ে যাবে। এই যুদ্ধ শুধু শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি নয়, বরং মানবতার মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক কাঠামোতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তাছাড়া, তিনি উল্লেখ করেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের চরম প্রতিক্রিয়া এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় এই সংকটকে আরও তীব্র করে তুলবে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট, পানি সংকট এবং মানুষের মধ্যে সহানুভূতির অভাব পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলবে।
নিকোলাস অজুলার এই ভবিষ্যদ্বাণী বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাঁর পূর্ববর্তী কিছু ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হওয়ায়, অনেকেই তাঁর কথাগুলিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। তবে, সমালোচকরাও কম নন। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এমন ভবিষ্যদ্বাণী সাধারণ মানুষের মধ্যে অযথা ভীতির সঞ্চার করতে পারে। তাঁরা যুক্তি দেন যে, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এমন স্পষ্ট ধারণা দেওয়া সম্ভব নয় এবং এটি কেবলমাত্র কাকতালীয়ভাবে মিলে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যদ্বাণীগুলির প্রতি বিশ্বাস না করে বরং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বর্তমান সমস্যাগুলির সমাধান খুঁজে বের করা উচিত। তারা মনে করেন, নিকোলাস অজুলার মতো ভবিষ্যদ্বক্তাদের কথা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং বাস্তবিক সমস্যাগুলি সমাধানের পথে বাধা সৃষ্টি করে। একাধিক সামাজিক বিজ্ঞানীও মনে করেন, এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণীগুলি গণমাধ্যমের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের মনে অযথা ভীতি জন্মায় এবং তা সমাজের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তবে নিকোলাস অজুলার সমর্থকরাও রয়েছেন, যারা মনে করেন তাঁর পূর্ববর্তী ভবিষ্যদ্বাণীগুলি মিলে যাওয়া নিছক কাকতালীয় নয়। তাদের মতে, মানবজাতির উচিত এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং বড় বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। অনেকেই এই ভবিষ্যদ্বাণীকে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন এবং আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
এই বিতর্কের মধ্যেই প্রশ্ন উঠে আসে, নিকোলাস অজুলার মতো ব্যক্তিদের কথাকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত। একদিকে, তাঁর কথাগুলি যদি সত্য হয়, তবে বিশ্ববাসীর জন্য তা একটি বড় সতর্কবার্তা। অন্যদিকে, যদি এটি ভুল প্রমাণিত হয়, তবে তা মানুষের মধ্যে অযথা ভীতি এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে। এই দ্বিধার মধ্যেই নিকোলাস অজুলার ভবিষ্যদ্বাণীগুলি মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে এবং বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ভবিষ্যদ্বাণীকারী ব্যক্তিত্বের কথা শোনা যায়, যাঁদের মধ্যে বাবা ভাঙ্গা ও নস্ট্রাডামাস উল্লেখযোগ্য। তাঁদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলি সময়ে সময়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। সম্প্রতি, লন্ডনের বাসিন্দা নিকোলাস অজুলা ২০২৫ সালে পৃথিবীর সমাপ্তি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যা নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
নিকোলাস অজুলা একজন স্বঘোষিত ভবিষ্যদ্বক্তা, যিনি অতীতে কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার পূর্বাভাস দিয়েছেন। তাঁর দাবি অনুযায়ী, তিনি কোভিড-১৯ মহামারী, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন, স্পেনের ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে জয় এবং সুপারমার্কেট প্রযুক্তির উন্নয়নসহ বিভিন্ন ঘটনার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
নিকোলাস অজুলা ২০২৫ সালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা এবং মানবতার মধ্যে সহানুভূতির অভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের নামে মানুষ একে অপরকে ঘৃণা করবে এবং হত্যার দিকে এগিয়ে যাবে। এছাড়াও, তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুতর প্রভাবের কথাও উল্লেখ করেছেন।
নিকোলাসের দাবি, ১৭ বছর বয়সে তিনি স্বপ্নে ভবিষ্যতের ঘটনা সম্পর্কে তথ্য পেতে শুরু করেন। ৩৮ বছর বয়সী নিকোলাস কৈশোরকালে কোমায় চলে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে ফিরে আসার পর তাঁর এই ক্ষমতা আরও বিকশিত হয়।
নিকোলাস অজুলার এই ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই তাঁর পূর্ববর্তী ভবিষ্যদ্বাণীগুলির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বর্তমান ভবিষ্যদ্বাণীগুলিকে ভীতিপ্রদ ও ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমন ভবিষ্যদ্বাণী মানুষের মধ্যে অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে এবং বাস্তবসম্মত তথ্যের ভিত্তিতে এগুলি মূল্যায়ন করা উচিত।
নিকোলাস অজুলার ২০২৫ সালের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে বিতর্ক চলমান। তাঁর পূর্ববর্তী কিছু ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গেলেও, বর্তমান দাবিগুলির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিশ্ববাসীর উচিত এই ধরনের তথ্যকে সমালোচনামূলক দৃষ্টিতে দেখা এবং বৈজ্ঞানিক ও বাস্তবসম্মত তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।