বলিউড মানেই ঝলমলে আলো, লাল গালিচা, রঙিন উৎসব আর রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠান। সিনেমার মতোই বলিউড তারকাদের বাস্তব জীবনও অনেক সময় নাটকীয় হয়ে ওঠে। প্রেম, বিয়ে, বিচ্ছেদ, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক—এসবই বলিউডের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বহুবার এমন ঘটনা দেখা গেছে যেখানে তারকারা প্রেমে পড়েছেন, ধুমধাম করে বিয়ে করেছেন, কিন্তু কিছুদিন পরই সম্পর্কে চিড় ধরেছে। আবার অনেকেই গোপনে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন যা একসময় প্রকাশ্যে এসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে।
বলিউডে বিয়ে মানেই আড়ম্বরপূর্ণ উৎসব। অভিষেক-ঐশ্বরিয়া, রণবীর-আলিয়া, দীপিকা-রণবীর থেকে শুরু করে ক্যাটরিনা-ভিকির বিয়ে পর্যন্ত সবই রাজকীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শাহী হোটেল, বড়সড় পার্টি, দামী পোশাক, বিশেষ অতিথিদের উপস্থিতি, সবমিলিয়ে বলিউডের বিয়ে যেন এক স্বপ্নের গল্পের মতো। কিন্তু বাস্তব জীবনে সব সম্পর্ক সিনেমার মতো সুখী হয় না।
বলিউডের অনেক তারকার প্রেম শুরু হয় ছবির সেটে কাজ করতে গিয়ে। একসঙ্গে কাজ করতে করতে তৈরি হয় ঘনিষ্ঠতা, আর সেখান থেকেই প্রেমের সূচনা। কিন্তু ব্যস্ত শিডিউল, মানসিক চাপ, ক্যারিয়ারের চাহিদা এবং ব্যক্তিগত মতপার্থক্যের কারণে অনেকেই সম্পর্কে সমস্যা অনুভব করেন। কিছু তারকা সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন, আবার কেউ কেউ অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
অমিতাভ বচ্চন এবং রেখার প্রেমকাহিনী আজও বলিউডের সবচেয়ে চর্চিত বিষয়গুলোর একটি। তাদের প্রেমের গুঞ্জন তখনকার সময়ে সংবাদ শিরোনামে ছিল, যদিও অমিতাভ কখনও তা প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি। জয়া বচ্চনের সাথে তার দাম্পত্য জীবনের মাঝে রেখার উপস্থিতি বহুবার আলোচনার বিষয় হয়েছে। একইভাবে ধর্মেন্দ্র এবং হেমা মালিনীর প্রেমের গল্পও কম রোমাঞ্চকর নয়। ধর্মেন্দ্র যখন হেমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেন, তখন তিনি ছিলেন বিবাহিত এবং চার সন্তানের পিতা। পরবর্তীতে হিন্দু আইনের কারণে দ্বিতীয় বিয়ে করতে না পারায় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
সাইফ আলি খান এবং অমৃতা সিংয়ের সম্পর্কও বলিউডের অন্যতম আলোচিত প্রেমকাহিনী। তাদের বয়সের ব্যবধান ছিল বিশাল, তবুও ভালোবাসার টানে তারা বিয়ে করেছিলেন। তবে দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার পর বিচ্ছেদ ঘটে এবং পরবর্তীতে সাইফ কারিনা কাপুরকে বিয়ে করেন। এই ধরণের সম্পর্ক ভাঙার পেছনে অনেক সময় একজন তৃতীয় ব্যক্তির ভূমিকা থাকে।
হৃত্বিক রোশন এবং সুজান খানের সম্পর্কও একসময় উদাহরণ হিসেবে ধরা হতো, কিন্তু তা টেকেনি। শোনা যায়, হৃত্বিকের ব্যক্তিগত জীবনে অন্য কোনো সম্পর্ক থাকায় এই বিচ্ছেদ হয়েছিল। মালাইকা অরোরা এবং আরবাজ খানের বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হিসেবে অভিনেত্রীকে অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার গুঞ্জনও শোনা গিয়েছিল। পরে মালাইকা অর্জুন কাপুরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান।

কিছু তারকা গোপনে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, যা ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসে। আমির খান ও কিরণ রাওয়ের বিচ্ছেদের পর তার ব্যক্তিগত জীবনের নানা আলোচনা শুরু হয়। এমনকি সালমান খানের জীবনের বিভিন্ন নারী সঙ্গ সম্পর্কেও বহুবার গুঞ্জন উঠেছে।
বলিউডের এই প্রেম, বিয়ে এবং বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের গল্পগুলো সাধারণ মানুষের কাছে বিনোদনের এক আকর্ষণীয় দিক হলেও, এই সম্পর্কের জটিলতা তারকাদের জন্য কঠিন বাস্তবতা। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা, পারিবারিক এবং পেশাগত চাপ সামলানো, ব্যক্তিগত জীবনকে মিডিয়ার আলো থেকে দূরে রাখা, সবকিছু মিলিয়ে বলিউডের সম্পর্কগুলো এক ধরনের মানসিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। কিছু সম্পর্ক শেষ হয় কষ্ট দিয়ে, আবার কিছু নতুন শুরুর দিকে এগিয়ে যায়। বলিউডের গ্ল্যামারের আড়ালে থাকা এই সম্পর্কের বাস্তব চিত্রই হয়তো আসল গল্প।
পবিত্র পুনিয়া হলেন ভারতীয় টেলিভিশন ও বিনোদন জগতের একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তার প্রকৃত নাম নেহা সিং হলেও, তিনি বিনোদন জগতে পবিত্র পুনিয়া নামেই বেশি পরিচিত। জন্ম ১৯৮৬ সালের ২২ আগস্ট, ভারতের উত্তর প্রদেশের বিজনোরে। তার পিতা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। পরিবারের সাথে তিনি দিল্লিতে চলে আসেন এবং সেখানেই তার শৈশব কাটে। দিল্লিতে তিনি স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। কলেজে পড়াকালীন সময়ে মডেলিংয়ের প্রতি আগ্রহী হন এবং সেই পথেই তার ক্যারিয়ার শুরু হয়।ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তার বিশেষ ঝোঁক ছিল, যা তাকে বিনোদন দুনিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে।
অভিনয় জীবনের শুরুটা হয়েছিল মডেলিংয়ের মাধ্যমে। ২০০৯ সালে রিয়েলিটি শো “স্প্লিটসভিলা”র মাধ্যমে তিনি প্রথমবার আলোচনায় আসেন। এরপর ২০১০ সালে জনপ্রিয় ধারাবাহিক “গীত – হুইস পারফেক্ট ব্রাদার” সিরিজে অভিনয়ের মাধ্যমে তার টেলিভিশন যাত্রা শুরু হয়। তার অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তিনি ধীরে ধীরে ছোট পর্দায় নিজের জায়গা তৈরি করেন। “লাভ ইউ জিন্দেগি”, “নাগিন ৩”, “ডায়ান”, “বালবীর রিটার্নস” এবং “ইয়ে হ্যায় মহব্বতে” সহ একাধিক জনপ্রিয় সিরিয়ালে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
পবিত্র পুনিয়ার ব্যক্তিগত জীবনও বেশ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। তিনি রিয়েলিটি শো “বিগ বস ১৪”-তে অংশ নিয়ে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেন এবং এই শো চলাকালীন তার ও অভিনেতা এজাজ খানের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে বেশ চর্চা হয়। তবে তার প্রেমজীবন শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। অতীতেও বিভিন্ন অভিনেতার সঙ্গে তার নাম জড়িয়েছে, যার মধ্যে পারস ছাবড়ার নামও শোনা যায়।
তার অভিনয় ক্যারিয়ার যেমন উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, তেমনই ব্যক্তিগত জীবনও বিতর্কের বাইরে থাকেনি। বিভিন্ন সময়ে তার সাহসী মন্তব্য এবং ব্যক্তিগত জীবনের কিছু সিদ্ধান্ত তাকে শিরোনামে এনেছে। তবে অভিনয়ে তার প্রতিভা সবসময়ই দর্শকদের মন জয় করেছে এবং তিনি নিজেকে বিনোদন জগতে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
পবিত্র পুনিয়া, যিনি নেহা সিং নামেও পরিচিত, হিন্দি টেলিভিশন জগতের একটি সুপরিচিত নাম। তার অভিনয় দক্ষতা এবং ব্যক্তিগত জীবনের নানা বিতর্কের কারণে তিনি প্রায়শই আলোচনায় থাকেন। তার জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়, কর্মজীবন এবং বিতর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
২০১০ সালে পবিত্র পুনিয়া “গীত হুই সবসে পরায়ী” ধারাবাহিকের মাধ্যমে টেলিভিশনে অভিষেক করেন। এরপর তিনি “লভ ইউ জিন্দেগি”, “হোগে জুদা না হম”, “ডর সবকো লগতা হ্যায়”, “ইয়ে হ্যায় মহব্বতে”, “নাগিন ৩”, এবং “বালবীর রিটার্নস” সহ একাধিক জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করেন। তার অভিনয় দক্ষতা এবং চরিত্রের বৈচিত্র্য তাকে দর্শকদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলে।
পবিত্র পুনিয়ার ব্যক্তিগত জীবন বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। ২০১৫ সালে তিনি সুমিত মাহেশ্বরী নামের এক হোটেল ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন, তবে এই বিয়ের খবর তিনি গোপন রেখেছিলেন। পরে সুমিত অভিযোগ করেন যে, পবিত্র বিয়ের পরেও তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং চারজন পুরুষের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
পবিত্রর জীবনে পরশ ছাবরা এবং প্রতীক সহজপালের মতো অভিনেতারাও এসেছেন। পরশ এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন যে, পবিত্র তার বিয়ের তথ্য গোপন করে তার সাথে সম্পর্ক রেখেছিলেন। ২০২০ সালে “বিগ বস ১৪” তে অংশগ্রহণের সময় পবিত্রর সাথে এজাজ খানের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তবে ২০২৪ সালে সেই সম্পর্কেরও সমাপ্তি ঘটে।
একটি সাক্ষাৎকারে পবিত্র জানান যে, স্কুলে পড়ার সময় তার শিক্ষকরা তাকে “চরিত্রহীনা” বলতেন, যা তার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। বর্তমানে তিনি সিঙ্গেল জীবনযাপন করছেন এবং বিয়ে করার ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছেন। তার মতে, পরিবারের সদস্যদের কষ্ট দেখতে দেখতে তিনি বিয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছেন।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে খবর আসে যে, পবিত্র পুনিয়া এবং এজাজ খান তাদের দুই বছরের সম্পর্কের ইতি টেনেছেন। তারা পাঁচ মাস আগে থেকেই আলাদা থাকছিলেন, তবে বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। পরে এজাজ নতুন ফ্ল্যাটে চলে যান, আর পবিত্র পুরনো ফ্ল্যাটেই থাকছেন।
পবিত্র পুনিয়ার জীবন এবং ক্যারিয়ার নানা উত্থান-পতনে ভরা। তার অভিনয় দক্ষতা তাকে জনপ্রিয়তা এনে দিলেও, ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্ক প্রায়শই তাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। তবে তিনি তার কাজের প্রতি নিবেদিত এবং দর্শকদের বিনোদন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বর্তমানে তিনি একাধিক প্রজেক্টে কাজ করছেন এবং তার অনুরাগীরা তার ভবিষ্যৎ কাজের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। বিনোদন জগতে তার যাত্রা এখনও অব্যাহত এবং তিনি তার অভিনয় দক্ষতা দিয়ে আরও অনেক নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখছেন।