ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন যে নাম শুনলেই সৌন্দর্য, প্রতিভা, এবং বিশ্বজোড়া খ্যাতির কথা মাথায় আসে। মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব জয় থেকে শুরু করে বলিউডে সুপারস্টার হওয়া, হলিউডে অভিনয় করা, এবং বচ্চন পরিবারের পুত্রবধূ হওয়া—সব মিলিয়ে তার জীবন যেন এক স্বপ্নের গল্প। তবে তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই যেমন গৌরবময়, তেমনি বিতর্কেরও অভাব নেই।
এবার তার নাম জড়াল আরেকটি চাঞ্চল্যকর বিতর্কে। গুঞ্জন উঠেছে, পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির আমন্ত্রণে তিনি ২০০৮ সালে পাকিস্তানে গিয়ে পারফর্ম করেছিলেন এবং বিনিময়ে ১০ কোটি রুপি নিয়েছিলেন! যদিও এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ নেই, কিন্তু বিষয়টি নিয়ে একাধিক সংবাদমাধ্যমে আলোচনা হয়েছে, যা তার ভক্তদের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।
Table of Contents
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ভবনে পারফর্ম! কতটা সত্য?
গণমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, ২০০৮ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও শিল্পজগতের নামিদামি ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সেই অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন।
অনুষ্ঠানের গোপনীয়তা এতটাই কড়া ছিল যে, সেখানে কোনো ছবি তোলা বা ভিডিও রেকর্ড করার অনুমতি ছিল না। ফলে ঐশ্বরিয়ার পারফরম্যান্সের কোনো ভিজ্যুয়াল প্রমাণ নেই। শুধু পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক শাহিদ মাসুদের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করেই এই খবরটি ছড়িয়ে পড়ে।
শাহিদ মাসুদ দাবি করেন, ঐশ্বরিয়া এই পারফরম্যান্সের জন্য ১০ কোটি রুপি নিয়েছিলেন। তার মতে, পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ব্যক্তিগতভাবে ঐশ্বরিয়ার বড় ভক্ত ছিলেন এবং তিনি চাইতেন ঐশ্বরিয়া পাকিস্তানে এসে একটি ব্যক্তিগত পার্টিতে পারফর্ম করুন। তবে বচ্চন পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। ঐশ্বরিয়া নিজেও কখনো এই বিষয়ে মুখ খোলেননি।
গোপন অনুষ্ঠানের বিতর্ক: সত্য নাকি গুজব?
এ ধরনের খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই নানা বিতর্ক শুরু হয়।
- কেউ কেউ বলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রপতি ভবনের মতো জায়গায় বলিউড তারকার পারফর্ম করা অসম্ভব কিছু নয়।
- আবার অনেকে বলেন, এত বড় একজন অভিনেত্রী কি শুধুমাত্র পারফরম্যান্সের জন্য অন্য দেশে যাবেন?
- আরেকটি বড় প্রশ্ন উঠে—যদি এটি সত্য হত, তবে কোনো ছবি বা ভিডিও কেন প্রকাশ্যে আসেনি?
এই বিতর্কের কোনো শক্ত প্রমাণ না থাকলেও বলিউড ও পাকিস্তানের মিডিয়ায় এটি নিয়ে ব্যাপক চর্চা হয়।
ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের ক্যারিয়ার শুরু হয় মডেলিং দিয়ে। ১৯৯৪ সালে তিনি মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন এবং রাতারাতি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। এরপর তিনি বলিউডে পা রাখেন এবং একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দেন।
ঐশ্বরিয়ার কিছু সুপারহিট সিনেমা:
- হাম দিল দে চুকে সনম (১৯৯৯)
- দেবদাস (২০০২)
- ধুম ২ (২০০৬)
- জোধা আকবর (২০০৮)
- গুরু (২০০৭)

তার সৌন্দর্য, অভিনয় দক্ষতা, এবং ব্যক্তিত্বের জন্য তিনি শুধু ভারত নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসিত হন।
ঐশ্বরিয়ার ব্যক্তিগত জীবন সবসময়ই মিডিয়ার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। বিশেষ করে, সালমান খানের সঙ্গে তার প্রেম ও ব্রেকআপ ছিল বলিউডের অন্যতম আলোচিত ঘটনা।
সালমান খানের সঙ্গে সম্পর্ক ও তিক্ত বিচ্ছেদ
- ১৯৯৯ সালে ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় সালমান ও ঐশ্বরিয়ার প্রেম শুরু হয়।
- কয়েক বছর প্রেমের পর তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
- ঐশ্বরিয়া দাবি করেন, সালমান তার ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছিলেন।
- ২০০২ সালে তাদের সম্পর্কের ইতি ঘটে, যা বলিউডের সবচেয়ে বিতর্কিত ব্রেকআপ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
জোরপূর্বক ঠোঁট-কামড়ে চুমু খেয়ে নিয়েছিলেন বাঙালি নায়ক, বিরাট কান্ড ঘটেছিল সেদিন সেটে! চমকে উঠবেন
অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে বিয়ে ও দাম্পত্য জীবন
- ২০০৭ সালে ঐশ্বরিয়া রাই অভিষেক বচ্চনকে বিয়ে করেন।
- তাদের বিয়ে বলিউডের অন্যতম রাজকীয় বিয়ে হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
- তাদের একমাত্র কন্যা আরাধ্যা বচ্চন, যার জন্ম ২০১১ সালে।
আরও পড়ুন : তবে মাঝে মাঝেই তাদের বিবাহিত জীবনে টানাপোড়েনের গুজব শোনা যায়।
ঐশ্বরিয়ার অন্যান্য বিতর্ক
পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারি
২০১৬ সালে ঐশ্বরিয়ার নাম পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারিতে উঠে আসে। অভিযোগ ছিল, তিনি অফশোর কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং কর ফাঁকি দিয়েছিলেন। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাকে এই বিষয়ে দীর্ঘ সময় জিজ্ঞাসাবাদ করে।
বচ্চন পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন
শোনা যায়, বচ্চন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঐশ্বরিয়ার সম্পর্ক সবসময় মসৃণ ছিল না। বিশেষ করে, তার শাশুড়ি জয়া বচ্চনের সঙ্গে মাঝে মাঝেই মনোমালিন্যের কথা শোনা যায়।
ঐশ্বরিয়া রাই আজ কোথায় দাঁড়িয়ে?
ঐশ্বরিয়া এখন আর আগের মতো নিয়মিত সিনেমায় অভিনয় করেন না। তিনি বর্তমানে নিজের মেয়ে আরাধ্যার বড় হওয়ার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। তবে মাঝে মাঝে তিনি বিশেষ কিছু প্রজেক্টে কাজ করেন।
ভবিষ্যতে বড় পর্দায় ফেরা?
অনেকেই আশা করছেন, ঐশ্বরিয়া খুব শিগগিরই বড় কোনো সিনেমায় ফিরবেন। তার শেষ বড় রিলিজ ছিল ২০২২ সালের ‘পন্নিয়িন সেলভান’, যা তামিল সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম ব্লকবাস্টার।