কতগুলো বিয়ে উদিত নারায়ণের? স্ত্রীদের একসঙ্গে রাখতেও চেয়েছিলেন গায়ক?

Spread the love

উদিত নারায়ণ, বলিউড সংগীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি তার অনন্য কণ্ঠস্বর ও সুরেলা গায়কির মাধ্যমে দশকের পর দশক ধরে সংগীতপ্রেমীদের মন জয় করে চলেছেন। তার নাম উচ্চারণ করলেই মনে পড়ে সেই স্বর্ণযুগের রোমান্টিক গান, যা আজও একই রকম জনপ্রিয়। নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু করে ২০০০ সালের প্রথম দশক পর্যন্ত বলিউড প্লেব্যাক ইন্ডাস্ট্রিতে তার আধিপত্য ছিল অবিসংবাদিত।

১৯৫৫ সালের ১ ডিসেম্বর নেপালের সুন্সারি জেলায় এক সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন উদিত নারায়ণ ঝা। তার বাবা ছিলেন একজন কৃষক এবং মা ছিলেন একজন লোকসংগীত শিল্পী। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি তার ছিল গভীর ভালোবাসা। মায়ের কাছ থেকেই তিনি প্রথম সংগীতের শিক্ষা লাভ করেন এবং ধীরে ধীরে গানের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। স্থানীয় অনুষ্ঠান ও রেডিওতে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়ে তিনি সংগীতজগতে নিজের পথ খুঁজতে শুরু করেন।

পরবর্তী সময়ে, সংগীতের উচ্চতর শিক্ষা নিতে তিনি ভারতের পাটনা শহরে আসেন। এখানেই তার আনুষ্ঠানিক সংগীত প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তবে তার স্বপ্ন ছিল বলিউডে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। সেই স্বপ্ন পূরণের আশায় তিনি মুম্বাই পাড়ি দেন এবং সেখানে ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনে সংগীত বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। কিন্তু বলিউডে জায়গা পাওয়া এত সহজ ছিল না।

১৯৮০ সালে উদিত নারায়ণের ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ আসে, যখন সংগীত পরিচালক রাজেশ রোশন তাকে সিনেমার জন্য গান গাওয়ার সুযোগ দেন। ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “উনিস-বিশ” ছবিতে তিনি প্রথম প্লেব্যাক করার সুযোগ পান। তবে এই গান তাকে খুব একটা খ্যাতি এনে দিতে পারেনি। এরপর কয়েক বছর তিনি বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান।

তার ক্যারিয়ারে বড়সড় পরিবর্তন আসে ১৯৮৮ সালে, যখন তিনি “কেয়ামত সে কেয়ামত তক” ছবির জন্য গান গাওয়ার সুযোগ পান। এই ছবির জনপ্রিয় গান “পাপা কেহতে হ্যায়” উদিত নারায়ণকে রাতারাতি তারকা বানিয়ে দেয়। আমির খানের অভিষেক সিনেমার এই গান বলিউডের অন্যতম আইকনিক গান হয়ে ওঠে এবং উদিতের কণ্ঠ প্রশংসিত হয় সর্বত্র। এরপর থেকে তিনি বলিউডের অন্যতম প্রধান গায়ক হয়ে ওঠেন এবং একের পর এক সুপারহিট গান উপহার দিতে থাকেন।

নব্বইয়ের দশক ছিল উদিত নারায়ণের ক্যারিয়ারের স্বর্ণযুগ। এই সময় তিনি শাহরুখ খান, আমির খান, সলমন খান, অক্ষয় কুমারের মতো বড় তারকাদের জন্য প্লেব্যাক করেছেন। তার গাওয়া কিছু অমর গান হলো “পেহলা নাশা” (জো জিতা ওহি সিকান্দার), “মেঁয়্যায় হুং না” (ম্যায়ঁ প্রেমন), “জাদু তেরি নজর” (ডর), “তুম পাস আয়ে” (কুছ কুছ হোতা হ্যায়), “দিল তো পাগল হ্যায়” (দিল তো পাগল হ্যায়) এবং আরও অসংখ্য জনপ্রিয় গান।

২০০০ সালের পরেও উদিত নারায়ণের জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ ছিল। তিনি “বীরে জারা”, “কহো না প্যায়ার হ্যায়”, “দিল চাহতা হ্যায়” এবং “লগান” ছবির জন্য বেশ কিছু হিট গান উপহার দেন। তার কণ্ঠে এক ধরনের সজীবতা ও প্রাণবন্ত আবেগ ছিল, যা শ্রোতাদের মনে দাগ কাটত।

তার সংগীত প্রতিভার জন্য তিনি একাধিক জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন, যা তাকে বলিউড সংগীতের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান দিয়েছে। এছাড়াও তিনি ফিল্মফেয়ার, পদ্মশ্রীসহ একাধিক সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

তবে উদিত নারায়ণের ব্যক্তিগত জীবন বিতর্কমুক্ত ছিল না। তার একাধিক বিয়ে এবং সম্পর্ক নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। তার স্ত্রী দীপা নারায়ণের কথা সকলেই জানেন এবং তাদের ছেলে আদিত্য নারায়ণও একজন সংগীতশিল্পী ও টেলিভিশন সঞ্চালক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ২০০৬ সালে প্রকাশ্যে আসে যে, ১৯৮৫ সালে উদিত বিহারের এক নারী, রঞ্জনা নারায়ণকে বিয়ে করেছিলেন, যেটা তিনি দীর্ঘদিন গোপন রেখেছিলেন। এই তথ্য সামনে আসার পর মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয় এবং আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। প্রথমদিকে তিনি রঞ্জনার সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে আইনি চাপের মুখে তা স্বীকার করতে বাধ্য হন।

সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে এক অনুরাগীকে আলিঙ্গন করে চুমু খাওয়ার ঘটনায় আবারও সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনি। সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে, যা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে নেট দুনিয়ায়। যদিও এই প্রসঙ্গে তিনি সাফাই দিয়েছেন, তবে এটি প্রথমবার নয় যখন উদিত নারায়ণ তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিতর্কে পড়লেন।

উদিত নারায়াণের জীবনে বিতর্কের কোনো অভাব নেই। সংগীত জগতে তার অবদানের পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত জীবনের নানা কাহিনি বারবার শিরোনামে এসেছে। বিশেষ করে, তার একাধিক বিয়ে ও আইনি জটিলতায় ফেঁসে যাওয়ার ঘটনা বহুবার আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। উদিতের বর্তমান স্ত্রী দীপা নারায়ণের কথা সকলেই জানেন। তাদের ছেলে আদিত্য নারায়ণও বলিউডের সংগীত দুনিয়ায় পরিচিত নাম। দীপা নিজেও সংগীতশিল্পী এবং তিনি নেপাল থেকে মুম্বাই এসেছিলেন নিজের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য। উদিত ও দীপার পরিচয়, প্রেম এবং পরবর্তীতে তাদের বিয়ে সংগীত প্রেমীদের জন্য পরিচিত ঘটনা। কিন্তু এর বাইরেও এমন এক সত্য আছে, যা অনেক বছর ধরে অনেকের কাছেই অজানা ছিল।

১৯৮৫ সালে উদিত নারায়ণ বিহারের এক নারী, রঞ্জনা নারায়ণকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু সে বিয়ের কথা তিনি বহুদিন লোকচক্ষুর আড়ালে রেখেছিলেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে বিহারে রেখে তিনি মুম্বাই চলে আসেন এবং এখানে এসে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে মনোনিবেশ করেন। তার সংগীত প্রতিভার কারণে তিনি দ্রুত বলিউডে নিজের জায়গা করে নেন এবং একের পর এক হিট গান উপহার দিতে থাকেন। এই সময়েই তার পরিচয় হয় দীপা নারায়ণের সঙ্গে এবং কিছুদিন পর তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

বিয়ের কয়েক বছর পর উদিত ও দীপার সংসারে জন্ম নেন আদিত্য নারায়ণ। তাদের সুখী পরিবার ও সংগীত জগতে তাদের প্রতিষ্ঠা নিয়ে যখন চারিদিকে প্রশংসা চলছিল, তখনই হঠাৎ করে ফাঁস হয় এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২০০৬ সালে যখন উদিত নারায়ণ বিহারের পাটনায় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যান, তখন রঞ্জনা সংবাদমাধ্যমের সামনে হাজির হন এবং উদিতের দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি ফাঁস করে দেন। তার দাবি ছিল, উদিত নারায়ণ তার প্রথম স্ত্রী এবং তাদের সম্পর্কের বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন রেখেছিলেন।

সেই সময় রঞ্জনা প্রকাশ্যে দাবি করেন, উদিত নারায়ণ তাকে প্রতারণা করেছেন এবং দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি লুকিয়েছেন। রঞ্জনার অভিযোগ ছিল, উদিত তাকে হুমকি দিয়েছিলেন যে তিনি যদি সত্যিটা ফাঁস করেন, তাহলে তিনি আত্মহত্যা করবেন। শুধু তাই নয়, দীপার সঙ্গে বিয়ের খবরও তিনি দীর্ঘদিন গোপন রেখেছিলেন। যখন এই বিতর্ক প্রকাশ্যে আসে, তখন প্রথমে উদিত নারায়ণ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিন্তু পরিস্থিতি যখন তার বিপক্ষে যেতে থাকে এবং আইনি চাপ বাড়তে থাকে, তখন তিনি শেষ পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হন যে রঞ্জনা তার প্রথম স্ত্রী।

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর বলিউড এবং সংগীত জগতে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদমাধ্যমে এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। উদিত নারায়ণের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠতে থাকে এবং আইনি জটিলতার কারণে তাকে অনেক চাপের মুখে পড়তে হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি স্বীকার করেন যে রঞ্জনাকে তিনি বিয়ে করেছিলেন এবং তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চান।

রঞ্জনা দাবি করেন, উদিত তাকে এবং দীপা দুজনকেই সমান মর্যাদা দিতে চেয়েছিলেন। তার কথায়, তিনি কখনোই উদিতের কাছ থেকে কোনো অবহেলা পাননি, কিন্তু তিনি চাননি যে তার স্বামী তার বৈবাহিক সম্পর্ক লুকিয়ে রাখুন। এই বিতর্ক নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছিল এবং উদিত নারায়ণের ব্যক্তিগত জীবন বারবার সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে আসে।

উদিত নারায়ণের জীবনে এই ধরনের বিতর্ক নতুন কিছু নয়। তার পেশাদার জীবনে তিনি যতই সফল হোন না কেন, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বারবার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তবে এত বিতর্কের পরেও তার জনপ্রিয়তায় কোনো ঘাটতি পড়েনি। আজও তিনি বলিউডের অন্যতম সফল গায়ক, যার কণ্ঠ শুনে অগণিত ভক্ত মুগ্ধ হন। তবে ব্যক্তিগত জীবনের এই সমস্ত বিতর্ক তার জীবনকে এক জটিল এবং চর্চিত অধ্যায়ে পরিণত করেছে।

এই ঘটনাগুলি তার ব্যক্তিগত জীবনকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে। তবে এত বিতর্কের পরেও তার সংগীত ক্যারিয়ারে কোনো প্রভাব পড়েনি। তিনি তার কাজের প্রতি সবসময়ই নিবেদিত ছিলেন এবং শ্রোতাদের একের পর এক সেরা গান উপহার দিয়ে গেছেন।

বর্তমানে, উদিত নারায়ণ আগের মতো প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে এতটা সক্রিয় না থাকলেও সংগীত জগতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সংগীত রিয়েলিটি শোতে বিচারকের ভূমিকা পালন করেন এবং তার সুরেলা কণ্ঠস্বর এখনো সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে জায়গা করে রাখে।

উদিত নারায়ণের যাত্রা শুধুমাত্র একজন গায়কের নয়, এটি সংগ্রাম, পরিশ্রম এবং প্রতিভার এক অনন্য কাহিনি। নেপালের এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে বলিউডের অন্যতম সফল প্লেব্যাক গায়ক হওয়া সত্যিই এক বিরল কীর্তি। তার গাওয়া গানগুলি আজও মানুষের মনে একই রকম আবেগ সৃষ্টি করে এবং ভবিষ্যতেও তার সুরেলা কণ্ঠ সংগীত জগতের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *