অ্যাপল তাদের জনপ্রিয় সিই সিরিজের নতুন স্মার্টফোন, আইফোন SE 4, আজ, ১১ ফেব্রুয়ারি লঞ্চ করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও অ্যাপল আনুষ্ঠানিকভাবে লঞ্চের তারিখ নিশ্চিত করেনি, তবে বেশ কিছু সূত্রে জানা গেছে যে এটি আজই উন্মোচিত হতে পারে। এই ফোনটি অ্যাপলের গ্রাহকদের মধ্যে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়, কারণ এটি সিই সিরিজের নতুন মডেল হওয়ার পাশাপাশি এতে অনেক নতুন ফিচার যোগ করা হয়েছে যা সাধারণত অ্যাপলের প্রিমিয়াম মডেলগুলির মধ্যে থাকে।
আইফোন SE 4-এ অ্যাপল একটি বড় ডিজাইন পরিবর্তন করেছে। পূর্বের SE সিরিজের ফোনগুলিতে বেশিরভাগ সময় মোটা বেজেল এবং হোম বাটন সহ পুরানো ডিজাইন ব্যবহার করা হত, যা অনেকের কাছে কিছুটা অপ্রস্তুত মনে হতে পারত। তবে আইফোন SE 4 এখন আইফোন ১৪ এর মতো আধুনিক ডিজাইন নিয়ে আসছে। এতে থাকবে একটি স্লিম বেজেল এবং পুরোপুরি ফ্ল্যাট বডি, যা আগের তুলনায় আরও পুরু এবং কঠিন, কিন্তু দেখতে অনেক বেশি প্রিমিয়াম। এই নতুন ডিজাইনে অ্যাপল পুরানো রাউন্ডেড এজের পরিবর্তে আরও বক্সি এবং স্টাইলিশ এজ ব্যবহার করেছে, যা দেখতে আইফোন ১৪ বা আইফোন ১২ এর মতো।
এছাড়া, আইফোন SE 4 এর কোণগুলি এবং বডি ফিনিশিং যথেষ্ট স্টাইলিশ এবং আধুনিক। ফোনটির বডি শক্তিশালী অ্যালুমিনিয়াম বা গ্লাস মেটেরিয়াল দিয়ে তৈরি, যা পরিধানে টেকসই এবং মসৃণ অনুভূতি দেয়।
আইফোন SE 4 এর ডিসপ্লেতে একটি বড় আপগ্রেড করা হয়েছে। পূর্ববর্তী SE মডেলগুলিতে ৪.৭ ইঞ্চি LCD স্ক্রীন ব্যবহার করা হতো, তবে আইফোন SE 4-এ অ্যাপল একটি ৬.১ ইঞ্চি OLED ডিসপ্লে যুক্ত করেছে। OLED প্রযুক্তি LCD-এর তুলনায় অনেক বেশি উন্নত, কারণ এতে আরও উজ্জ্বল রঙ, আরও গা dark ় কালো এবং আরো ভালো কন্ট্রাস্ট পাওয়া যায়। এর মানে হল যে আপনি ভিডিও দেখা, গেম খেলা বা ছবি দেখা যেকোনো কাজই করুন, ডিসপ্লেটি অনেক বেশি আকর্ষণীয় এবং বাস্তবসম্মত হবে।
এছাড়া, আইফোন SE 4-এ ৬০Hz রিফ্রেশ রেট থাকবে, যা প্রতিদিনের ব্যবহার এবং স্ক্রোলিংয়ে একটি স্মুথ এবং আরামদায়ক অভিজ্ঞতা দেবে। আইফোন ১৪ এবং ১৫ সিরিজে যে ধরনের ডিসপ্লে রয়েছে, তার মতোই এটি উন্নত মানের একটি ডিসপ্লে।
আইফোন SE 4-এ একটি অত্যাধুনিক ক্যামেরা সিস্টেম যোগ করা হয়েছে। এই ফোনে একটি ৪৮ মেগাপিক্সেল রিয়ার ক্যামেরা থাকবে, যা আগের SE মডেলগুলির তুলনায় অনেক উন্নত। অ্যাপল এই ক্যামেরার সাহায্যে অত্যন্ত পরিষ্কার এবং বিস্তারিত ছবি ধারণের ক্ষমতা বাড়িয়েছে, বিশেষ করে স্বল্প আলোতে বা ডিপথ ফিল্ডের মধ্যে। এটির ক্যামেরা সেন্সর আরও বড় এবং শক্তিশালী, যা আপনাকে ভালো মানের ছবি এবং ভিডিও রেকর্ড করার সুযোগ দেবে।
আরেকটি বড় আপগ্রেড হলো সেলফি ক্যামেরা। আগের আইফোন SE মডেলগুলিতে ৭ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা ছিল, কিন্তু আইফোন SE 4-এ এটি ২৪ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে উন্নত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আপনার সেলফি ছবি আরও স্পষ্ট, উজ্জ্বল এবং বিস্তারিত হবে।
আইফোন SE 4-এ যে প্রসেসর ব্যবহার করা হচ্ছে, তা প্রযুক্তির দুনিয়ায় এক বিশাল আপগ্রেড হিসেবে দেখা যাচ্ছে। অ্যাপলের নতুন A18 চিপসেটটি এই ফোনটিতে ব্যবহৃত হবে, যা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে যে এটি শুধুমাত্র গতির দিক থেকে নয়, শক্তি দক্ষতাতেও দুর্দান্ত। A18 চিপটি ব্যবহারকারীদের জন্য এক নতুন যুগের ফোনের অভিজ্ঞতা তৈরি করবে, যা বিশেষত মডার্ন স্মার্টফোনের জন্য অপরিহার্য।
অ্যাপল সিলিকন চিপসেটগুলো তাদের উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের জন্য খ্যাত। A18 চিপসেট এমন একটি শক্তিশালী এবং দক্ষ প্রসেসর, যা ব্যবহারকারীদেরকে এক নতুন স্তরের অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। A18 চিপটি একাধিক উন্নত ফিচার এবং প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে যা ফোনের পারফরম্যান্সে পরিবর্তন আনবে।
A18 চিপের মধ্যে উন্নত CPU কোর রয়েছে, যার মাধ্যমে আইফোন SE 4 দ্রুত কাজ করতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, মাল্টিটাস্কিং করার সময় বা হেভি অ্যাপস চালানোর সময় ফোনটি একদমই হ্যাং বা স্লো হবে না। A18 চিপের শক্তিশালী কোরের মাধ্যমে ভারী গেম, ভিডিও এডিটিং, এবং গ্রাফিক্যালি ইন্টেনসিভ কাজগুলোও অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। ফোনটি সঠিকভাবে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR) বা অগমেন্টেড রিয়ালিটি (AR) অ্যাপসও সাপোর্ট করবে, যা A18 চিপের বিশেষ দক্ষতার কারণে।এটি শুধু দ্রুত নয়, বরং শক্তি সঞ্চয়েও চমৎকার। A18 চিপসেটটি শক্তি খরচের দিক থেকেও অনেক উন্নত। এতে ব্যবহৃত 5nm (ন্যানোমিটার) প্রযুক্তির মাধ্যমে, এটি পূর্ববর্তী চিপসেটগুলির তুলনায় আরও দক্ষভাবে শক্তি ব্যবহারের জন্য অপটিমাইজড। এর ফলে, ফোনটি দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা যাবে এবং ব্যাটারি দ্রুত খালি হবে না।
A18 চিপের গ্রাফিক্স প্রসেসর (GPU) ইতিমধ্যে আধুনিক গেমিং এবং গ্রাফিক্যাল অ্যাপ্লিকেশনগুলো চালানোর জন্য প্রস্তুত। এর ফলে আইফোন SE 4-এ গেমিং এক্সপেরিয়েন্স হবে আরও উন্নত, এবং গ্রাফিক্স সেম্পলিং ও রেন্ডারিং আরও বাস্তবসম্মত হবে। শক্তিশালী GPU এর কারণে গেমিংয়ে ল্যাগ বা ড্রপফ্রেমের কোনো সমস্যা হবে না। এটি গ্রাফিকাল কাজগুলোর যেমন ভিডিও এডিটিং বা 3D রেন্ডারিং, সেসব ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী হবে।আইফোন SE 4-এ ব্যবহৃত A18 চিপ মেশিন লার্নিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (AI) এর ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাবে। এই চিপে কাস্টম মেশিন লার্নিং কোপ্রসেসরের উপস্থিতি থাকবে, যা ফোনকে আরো বুদ্ধিমান করে তুলবে। স্মার্টফোনের বিভিন্ন কাজ যেমন ফটো এডিটিং, প্রেডিকটিভ টেক্সট, ভাষার অনুবাদ, এবং অন্যান্য AI-ভিত্তিক কার্যাবলী অত্যন্ত দ্রুত এবং সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে।
আইফোন SE 4-এ থাকবে ৮GB RAM, যা ফোনটির মাল্টিটাস্কিং ক্ষমতাকে অনেক উন্নত করবে। এর মানে হল, ব্যবহারকারীরা একসাথে একাধিক অ্যাপ খুলে সেগুলোর মধ্যে সুইচ করতে পারবেন, এবং ফোনটি সেই সময়েও স্লো হবে না। এতে ব্যবহারকারীদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক হবে, যেমন একসাথে সঙ্গীত শোনা, ভিডিও দেখার সময় ইন্টারনেট ব্রাউজিং, বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপস চালানো।
এটি আইফোন SE 4-কে আরও কর্মক্ষম এবং সক্ষম করে তুলবে, বিশেষ করে প্রফেশনাল কাজের জন্য। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ একসাথে গুগল ডক্স, ইমেইল অ্যাপ, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, এবং ব্রাউজার খুলে রাখেন, ফোনটি কোনও একটিতেও স্লো বা ল্যাগ হবে না, যা একটি বড় সুবিধা।
প্রথম থেকেই, অ্যাপল তাদের প্রতিটি নতুন চিপে পারফরম্যান্সের পাশাপাশি শক্তি সঞ্চয়ের দিকে মনোযোগ দেয়। A18 চিপ তার পূর্বসূরিদের থেকে অনেক দ্রুত এবং শক্তিশালী। যদি আপনি আইফোন SE 4-এ ভারী কাজ যেমন ৪K ভিডিও এডিটিং বা বড় অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেন, তবে এর শক্তিশালী প্রসেসর এবং GPU আপনাকে সেই কাজগুলো দ্রুত এবং কম সময়ে করার সুযোগ দিবে।
এছাড়া, অ্যাপলের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম iOS এর সঙ্গে এই চিপের সমন্বয়ে ফোনটির কার্যকারিতা আরও উন্নত হবে। আইওএস অ্যাপসের সঙ্গে চমৎকার সামঞ্জস্য রেখে কাজ করবে, যার ফলে ব্যবহারকারীরা কোনোরকম বাধা বা বিরক্তি ছাড়াই স্মার্টফোনটি ব্যবহার করতে পারবেন।
আইফোন SE 4-এ নতুনভাবে ফেস আইডি ফিচার যোগ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের মুখ দিয়ে ফোন আনলক করতে পারবেন, যা পূর্বের মডেলগুলির টাচ আইডি-এর তুলনায় আরও নিরাপদ এবং সুবিধাজনক। এছাড়া, এটি অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স বা AI সিস্টেম সমর্থন করবে, যার মাধ্যমে এটি আরও স্মার্ট হবে এবং গ্রাহকদের আরও পেশাদারী এবং সঠিক ফিচার প্রদান করবে। এই ফিচারের সাহায্যে ফোনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন কাজ করতে সক্ষম হবে, যেমন ফটোগ্রাফি, মেসেজিং, ন্যাভিগেশন এবং আরও অনেক কিছু।
আইফোন SE 4 এর দাম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি প্রায় ৪৯৯ ডলারে (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৪,০০০ টাকা ) লঞ্চ হতে পারে। যদিও আগের মডেল আইফোন SE 3 এর দাম ভারতীয় বাজারে কিছুটা বেড়ে ৪৯,৯০০ রুপি হয়েছে, সেই তুলনায় আইফোন SE 4 এর দাম কিছুটা কম হতে পারে। তবে এটি বাজারের বিভিন্ন শর্ত এবং সরকারী করের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
ভারতের বাজারে আইফোন SE সিরিজের জনপ্রিয়তা সর্বজনবিদিত। এই সিরিজটি সাশ্রয়ী দামের মধ্যে শক্তিশালী ফিচার প্রদান করে, যা ভারতের গ্রাহকদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আইফোন SE 4 এর লঞ্চের মাধ্যমে, অ্যাপল আরো অনেক নতুন গ্রাহককে আকৃষ্ট করতে পারবে, কারণ এটি তাদেরকে একটি প্রিমিয়াম ফোনের অভিজ্ঞতা প্রদান করবে, তবে তুলনামূলক কম দামে।
আইফোন SE 4 যে সময়ের সাথে সাথে উন্নত প্রযুক্তি এবং নতুন ফিচারের সংমিশ্রণ নিয়ে আসবে, তা বলাই যায়। এটি অ্যাপলের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ, কারণ এটি সস্তা দামের মধ্যে প্রিমিয়াম ফিচার অফার করছে, যা ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ করবে। এর নতুন ডিজাইন, শক্তিশালী ক্যামেরা, উন্নত পারফরম্যান্স এবং ফেস আইডি সহ এটি বাজারে অ্যাপলের এক নতুন মাইলফলক হতে পারে।