শুটিং স্পটেই ঠাঁটিয়ে চড়! করিনা কাপুরকে এক চড় মেরেছিলেন এই অভিনেতার স্ত্রী! কেন জানেন?

Spread the love

বলিউড ইন্ডাস্ট্রি শুধুমাত্র তার ঝলমলে সিনেমা ও গ্ল্যামারের জন্যই বিখ্যাত নয়, বরং এর অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক, প্রতিযোগিতা এবং মাঝেমধ্যেই ঘটে যাওয়া নানা বিতর্কের জন্যও পরিচিত। বলিউডের ইতিহাসে বহুবার এমন ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ব্যক্তিগত মতভেদ, পেশাদার প্রতিযোগিতা এবং পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপোড়েন বড় আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে ৯০-এর দশক এবং ২০০০-এর শুরুর দিকে, যখন বলিউডে বহু জনপ্রিয় অভিনেত্রীর মধ্যেই ক্যাটফাইটের গুঞ্জন শোনা যেত।

বলিউডের অভিনেত্রীদের মধ্যে সম্পর্ক সব সময় মধুর ছিল না। বড় পর্দায় তারা যতই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ছাপ রেখে যান, বাস্তব জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই সেই সম্পর্ক এতটা সহজ ছিল না। গ্ল্যামার ও খ্যাতির দুনিয়ায় টিকে থাকার জন্য বলিউড তারকারা সব সময় নিজেদের আলাদা করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। এর ফলে অনেক সময় ব্যক্তিগত আক্রমণ ও অপমানজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বলিউডে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রা এতটাই তীব্র যে কোনো নায়িকা যদি কারও থেকে একটু বেশি লাইমলাইট পান বা পরিচালকদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পান, তাহলে তা অন্যদের জন্য অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে, যখন পোশাক, মেকআপ, সংলাপ, স্ক্রিন টাইম বা চরিত্রের গুরুত্ব নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়, তখনই শুরু হয় অন্তর্দ্বন্দ্ব।

এমনই এক আলোচিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকের এই আলোচনা—যেখানে জড়িয়ে আছেন বলিউডের দুই জনপ্রিয় নায়িকা করিনা কাপুর ও বিপাশা বসু এবং সেইসঙ্গে ববি দেওলের স্ত্রী তানিয়া দেওল। ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘আজনবী’-এর শুটিং সেটে এই তিনজনের মধ্যে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, তা আজও বলিউডের অন্যতম আলোচিত ক্যাটফাইটের মধ্যে পড়ে। এই বিতর্ক শুধু তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে নয়, বরং পুরো ইন্ডাস্ট্রির দৃষ্টিভঙ্গিতেও একটি আলোড়ন তুলেছিল।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, বলিউডে শুধুমাত্র প্রতিভাই নয়, বরং সম্পর্কের জটিলতাও তারকাদের ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। আজ আমরা সেই ঘটনার বিস্তারিত বিশ্লেষণ করব এবং দেখব কীভাবে করিনা কাপুর, বিপাশা বসু এবং তানিয়া দেওলের দ্বন্দ্ব শুটিং সেটের পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তুলেছিল।
২০০১ সালের শুরুতে ‘আজনবী’ সিনেমার শুটিং শুরু হয়। এটি ছিল একটি থ্রিলার ঘরানার সিনেমা, যেখানে প্রধান চরিত্রে ছিলেন অক্ষয় কুমার, ববি দেওল, করিনা কাপুর ও বিপাশা বসু। এই সিনেমার মাধ্যমেই বিপাশা বসু বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তবে সিনেমার কাজ যতই এগোতে থাকে, ততই এর পেছনের ঘটনা রঙিন হতে শুরু করে।

শুটিং চলাকালীন করিনা কাপুর এবং বিপাশা বসুর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। প্রথমদিকে তারা একে অপরের সঙ্গে ভালোই মিশতেন, তবে ক্রমেই তাদের মধ্যে মতানৈক্য বাড়তে থাকে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, সিনেমার পোশাক ও চরিত্রায়নের ক্ষেত্রে কিছু পার্থক্য ছিল, যা নিয়ে করিনা এবং বিপাশার মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিল।
সিনেমার পোশাক ডিজাইনের দায়িত্বে ছিলেন ববি দেওলের স্ত্রী তানিয়া দেওল। তিনি একজন অভিজ্ঞ ফ্যাশন ডিজাইনার ছিলেন এবং তিনি এই সিনেমার জন্য বিশেষভাবে কাজ করছিলেন। কিন্তু সমস্যা তখনই শুরু হয়, যখন করিনা অনুভব করেন যে তানিয়া বিপাশার প্রতি বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন এবং করিনার পোশাকের ক্ষেত্রে সেভাবে নজর দিচ্ছেন না। করিনার ধারণা ছিল যে তানিয়া পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন, যা নিয়ে তিনি সরাসরি প্রতিবাদ জানান।

এই বিষয়ে করিনা প্রথমে সিনেমার পরিচালক এবং অন্যান্য টিম মেম্বারদের কাছে অভিযোগ জানান। তবে বিষয়টি সহজে সমাধান হয়নি, বরং দিন দিন এটি আরও জটিল হয়ে ওঠে। করিনা অনুভব করেন যে তার প্রতি সুবিচার করা হচ্ছে না এবং এটি নিয়ে তিনি ক্রমাগত ক্ষুব্ধ হতে থাকেন। তানিয়া দেওল বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব না দিলেও, করিনার মনোভাব ক্রমেই আরও কঠোর হতে থাকে।

একদিন শুটিং সেটে এই নিয়ে সরাসরি বাকবিতণ্ডা শুরু হয় করিনা ও তানিয়ার মধ্যে। করিনা রেগে গিয়ে অভিযোগ করেন যে তানিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে অবহেলা করছেন এবং শুধুমাত্র বিপাশার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন। তানিয়াও পাল্টা যুক্তি দেন যে তিনি কেবল নিজের কাজ করছেন এবং এতে কোনো ব্যক্তিগত পক্ষপাত নেই। তবে করিনা এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি। কথোপকথন একপর্যায়ে এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে করিনা এবং তানিয়া একে অপরকে অপমানজনক কথা বলতে থাকেন। শুটিং সেটে উপস্থিত সবাই তখন হতবাক হয়ে যান এই পরিস্থিতি দেখে।

একপর্যায়ে এই উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা চরমে পৌঁছায় এবং তানিয়া দেওল রাগের মাথায় করিনা কাপুরকে সপাটে চড় মেরে বসেন! এটি ছিল অত্যন্ত বিস্ময়কর একটি মুহূর্ত, যা শুটিং সেটে উপস্থিত সবাইকে হতভম্ব করে দেয়। এই ঘটনার পর সেটের পরিবেশ আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। করিনাও প্রচণ্ড অপমানিত বোধ করেন এবং এই ঘটনার প্রভাব দীর্ঘদিন ধরে বলিউডে আলোচিত হয়।

শুটিং সেটে করিনা কাপুর ও তানিয়া দেওলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এক পর্যায়ে চরমে পৌঁছে যায়। প্রথমদিকে এটি শুধুমাত্র পেশাদারিত্বের উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া একটি মতানৈক্য ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি ব্যক্তিগত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়। করিনা অভিযোগ করেন যে তানিয়া তার মা ববিতা কাপুরের সঙ্গেও অশোভন আচরণ করছিলেন। বিষয়টি করিনার একেবারেই পছন্দ হচ্ছিল না এবং সেটে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়।

প্রথমে করিনা নরম ভাষায় নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করলেও, ক্রমেই তার রাগ প্রকাশ্যে চলে আসে। তিনি সরাসরি তানিয়াকে বলেন, “তুমি আমার পোশাকের প্রতি ন্যূনতম মনোযোগও দিচ্ছ না, সবটাই বিপাশার জন্য রাখছ। এটা কী ধরনের আচরণ?” তানিয়া পাল্টা উত্তর দেন, “আমি একজন ডিজাইনার, আমি আমার কাজ করছি। কাকে কীভাবে সাজাব, তা আমার সিদ্ধান্ত।”

করিনার রাগ তখন আরও বেড়ে যায়। তিনি সোজা বলে বসেন, “তুমি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার অপমান করছ। আমার মা পর্যন্ত তোমার ব্যবহারে অপমানিত বোধ করছেন।” এই কথা শুনে তানিয়াও ক্ষেপে যান এবং তিনি করিনাকে বলেন, “তুমি সবসময় তোমার মতো করে সবকিছু পাওয়ার চেষ্টা করো। কিন্তু এখানে সেটা হবে না।”

তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে, কথোপকথন এতটাই গুরুতর হয়ে ওঠে যে তানিয়া দেওল রাগের মাথায় করিনা কাপুরকে সপাটে চড় মেরে বসেন! এই ঘটনায় সেটে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে যান। করিনাও এই ঘটনায় প্রচণ্ড অপমানিত বোধ করেন এবং কেঁদে ফেলেন। শুটিং সেটে উপস্থিত অন্যান্য সহ-অভিনেতা এবং টিম মেম্বাররা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু এই ঘটনাটি শুটিং সেটে দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার সৃষ্টি করে।

করিনা কাপুর

পরে করিনা এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “ববির স্ত্রী তানিয়ার সঙ্গে একটা সমস্যা হয়েছিল। তিনি আমার মায়ের সঙ্গে ঠিক আচরণ করতেন না। আর বিষয়টি আমিও পছন্দ করতাম না।”
শুটিং সেটে করিনা এবং বিপাশার সম্পর্ক ধীরে ধীরে আরও খারাপ হতে থাকে। প্রথম থেকেই করিনা বিপাশাকে সহ্য করতে পারছিলেন না। কিন্তু দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায় যখন করিনা বিপাশার পোশাক, অভিনয়শৈলী এবং ব্যক্তিত্ব নিয়ে কটাক্ষ করতে শুরু করেন। শোনা যায়, করিনা একবার বিপাশাকে তার গায়ের রং নিয়ে অপমান করে ‘কালি বিল্লি’ বলে মন্তব্য করেন।

এই মন্তব্য বিপাশাকে ভীষণভাবে আহত করেছিল। তিনি প্রকাশ্যে কিছু না বললেও, তার অভ্যন্তরীণ রাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। শুটিং সেটে দুই নায়িকার মধ্যে কোনো কথোপকথনই প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি একাধিক দৃশ্যের সময় পরিচালককে দুই নায়িকার মধ্যে সমঝোতা করাতে হিমশিম খেতে হয়েছিল।

বিপাশার এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, “বিপাশা এই ঘটনায় খুবই অপমানিত বোধ করেছিলেন। করিনার মন্তব্য তাকে মানসিকভাবে কষ্ট দিয়েছিল। কিন্তু তিনি কখনও সেটে প্রকাশ করেননি, বরং নিজের কাজে মনোযোগ দিয়েছিলেন।”

এরপর আরও কয়েকটি ঘটনার ফলে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য বাড়তে থাকে। করিনা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি বিপাশার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইনি। সে আমার ধরণ-ধারণের সঙ্গে একদমই যায় না।” অন্যদিকে, বিপাশা বলেন, “আমি কখনোই করিনার মতো হতে চাইনি। আমি আমার নিজের মতো।”

তাদের এই তিক্ত সম্পর্ক এতটাই প্রসারিত হয়েছিল যে, বহু বছর পরেও তারা একে অপরের সঙ্গে কোনো সিনেমায় কাজ করেননি। করিনা ও বিপাশা একে অপরকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতেন এবং কোনো বড় ইভেন্টেও তারা একে অপরকে পাত্তা দিতেন না।
যদিও শুটিং সেটে এই বিতর্ক ও উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তবে শেষ পর্যন্ত সিনেমার কাজ সম্পন্ন হয় এবং ২০০১ সালে ‘আজনবী’ মুক্তি পায়। সিনেমাটি বক্স অফিসে ভালোই সাড়া ফেলে এবং বিপাশা বসু এই সিনেমার জন্য ‘ফিল্মফেয়ার সেরা নবাগতা অভিনেত্রীর’ পুরস্কারও লাভ করেন।

অন্যদিকে, করিনা কাপুর ও বিপাশা বসুর মধ্যে বহু বছর ধরেই মনোমালিন্য চলতে থাকে। বহু বছর পরেও তারা একসঙ্গে কোনো সিনেমায় কাজ করেননি। তবে ২০১৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে বিপাশা বলেন যে পুরনো ঘটনা নিয়ে তিনি আর চিন্তা করেন না এবং জীবনে এগিয়ে যাওয়াই তার মূল লক্ষ্য।

বলিউডে তারকাদের মধ্যে সম্পর্কের উত্থান-পতন নতুন কিছু নয়। প্রতিযোগিতা, ঈর্ষা এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণেই অনেক সময় এমন ঘটনা ঘটে। করিনা কাপুর, বিপাশা বসু এবং তানিয়া দেওলের মধ্যকার এই বিতর্ক বলিউডের অন্যতম আলোচিত ক্যাটফাইটগুলোর মধ্যে একটি হয়ে রয়ে গেছে। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবাই তাদের নিজ নিজ ক্যারিয়ারে মনোযোগ দিয়েছেন, তবে এই ঘটনা বলিউডের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হয়ে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *