টলিউডের বিভিন্ন সময়ে কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় সেলিব্রিটিদের নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য বিতর্কের কথা উল্লেখ করা হলো:
২০২৪ সালের জুলাই মাসে, বাংলা চলচ্চিত্র পরিচালক রাহুল মুখার্জির একটি নতুন ছবির শুটিং শুরু হওয়ার সময়, টেকনিশিয়ানরা তার শুটিংয়ে অংশ নেননি। এর ফলে টলিউডে একটি বড় বিতর্কের সৃষ্টি হয়। রাহুলকে পূর্বে বাংলাদেশি সিরিজ ‘লহু’ এর শুটিংয়ে বিদেশি টেকনিশিয়ান ব্যবহার করার জন্য তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পরিচালক ও অভিনেতারা একত্রিত হন এবং টেকনিশিয়ানদের আচরণকে “অপমানজনক” বলে অভিহিত করেন।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে, একজন জনপ্রিয় টেলিভিশন অভিনেত্রী পরিচালক আরিন্দম শীলের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয় যে, শুটিংয়ের সময় তিনি অভিনেত্রীকে “কিস” করেন একটি দৃশ্য ব্যাখ্যা করার প্রেক্ষিতে। এই অভিযোগের পর পরিচালককে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় এবং পরে তাকে পরিচালকদের গিল্ড থেকে অস্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়।
অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি তার ব্যক্তিগত জীবন এবং সম্পর্ক নিয়ে অনেক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। ২০১৪ সালে, তিনি তার প্রেমিকের গ্রেফতারের প্রতিবাদে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এবং একই বছর সিঙ্গাপুরে একটি দোকান থেকে সোনালী কানের দুল চুরি করার জন্য ক্যামেরায় ধরা পড়েন।
অভিনেতা ভিক্রম চ্যাটার্জি তার বন্ধু ও মডেল সোনিকা চৌহানের মৃত্যুর ঘটনায় কার দুর্ঘটনার কারণে আটক হন। এই ঘটনার পর তার খ্যাতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তিনি জনসমক্ষে কম উপস্থিত হতে শুরু করেন।
এই ধরনের বিতর্কগুলি টলিউডের সেলিব্রিটিদের জীবন এবং কাজের উপর গভীর প্রভাব ফেলে এবং বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পকে বিভিন্ন দিক থেকে আলোচনায় নিয়ে আসে।
শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় (Srabanti Chatterjee) হলেন একজন প্রখ্যাত বাংলা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, যিনি ১৩ আগস্ট ১৯৮৭ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে “মায়ার বাঁধন” সিনেমার মাধ্যমে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় জীবন শুরু করেন। শ্রাবন্তী ২০০৩ সালে “চ্যাম্পিয়ন” সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার ক্যারিয়ারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে “অমানুষ” (২০১০), “বলো না তুমি আমার” (২০১০), “শিকারী” (২০১৬) এবং “ভূতচক্র প্রাইভেট লিমিটেড” (২০১৯)। শ্রাবন্তী তার রোমান্টিক ও পারিবারিক নাটকীয় চরিত্রের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন এবং পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন স্থানে তার একটি বিশাল ভক্তবৃন্দ রয়েছে।
শ্রাবন্তীর ব্যক্তিগত জীবনও গণমাধ্যমের নজরে এসেছে। তিনি তিনবার বিবাহিত এবং তার একটি ছেলে রয়েছে, যার নাম অভিমান্যু চট্টোপাধ্যায়। ২০২১ সালে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেন এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তবে নির্বাচনে পরাজিত হন। তার জীবনে কিছু বিতর্কও রয়েছে, যেমন ২০১৭ সালে তার তৃতীয় স্বামীর বিরুদ্ধে আবেগগত নির্যাতনের অভিযোগ। শ্রাবন্তী বর্তমানে টলিউডে একটি পরিচিত মুখ এবং তার অভিনয় দক্ষতার জন্য তিনি এখনও জনপ্রিয়তা অর্জন করছেন।
দিনকয়েক আগেই শ্রাবন্তীর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতে দেখা যায়, মধ্যরাতে এক অজানা বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন শ্রাবন্তী, বিবৃতি চট্টোপাধ্যায় ও অর্জুন চক্রবর্তী। পাপারাজ্জিরা প্রশ্ন করলেও কোনো উত্তর দেননি নায়িকা। ইশারায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কিছু একটা ঘটতে চলেছে। অবশেষে জানা গেল সেই কারণ। এর সঙ্গে মিশে আছে তার অভিনেত্রীর স্বপ্ন পূরণের কথা। বাতাসে পূজার গন্ধ। তবে অন্য অনেকের মতো তার হাতে শপিং ব্যাগ নেই। এর বদলে আছে তলোয়ার।
কারণ এখন তিনি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘দেবী চৌধুরানী’ সিনেমার নাম-ভূমিকায় অভিনয় করছেন। এটি পরিচালনার দায়িত্বে আছেন শুভ্রজিৎ মিত্র। তাই নিজের সবটুকু উজাড় করে নিজেকে তৈরি করছেন। আর হবে নাই বা কেন, অভিনেত্রীর জীবনের সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট বলা চলে এটিকে।
ছবি প্রসঙ্গে ভারতীয় গণমাধ্যমকে শ্রাবন্তী বলেন, ‘আমার জীবনের অন্যতম অধ্যায় এটি। নিজেকে তৈরি করার জন্য সবটকু দিচ্ছি। পরিচালককে খুশি করতে রাত জেগে চেষ্টা করছি। এত অভিনয় করেছি, কিন্তু কখনও ঘোড়ায় চড়িনি, তলোয়ার চালাইনি। সব কিছু শিখতে হচ্ছে ধরে-ধরে। কঠিন লাগছে ঠিকই। কিন্তু একটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।’
তার মতে, ‘দেবী চৌধুরানী’ কেবল ছবি নয়, এটি একটা অস্ত্র। এর মাধ্যমে অনেককে জবাব দেওয়ার আছে তার। তা ছাড়া ছবির বাজেটও এত বেশি যে, কোনোরকম খামতি তিনি রাখতে পারবেন না। বাংলা ছাড়াও মোট ছয়টি ভাষায় মুক্তি পেতে চলেছে এই ছবি। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক শুভ্রজিতের কাছেও এটি একটি ড্রিম প্রজেক্ট। আর তাই তো নায়ক-নায়িকার ট্রেনিং থেকে শুরু করে, গোটা বিষয়টির তদারকির দায়িত্ব নিয়েছেন নিজে থেকেই।
পরিচালকের হাতের তুরুপের তাস হচ্ছেন শ্রাবন্তী। কারণ প্যান ইন্ডিয়ান ছবিতে কোনো বলিউড তারকাকে না এনে বাংলার তারকাদের দিয়েই ইতিহাস গড়তে চান তিনি। শ্রাবন্তীও প্রাণপন চেষ্টা করে চলেছেন পরিচালক এবং তার স্বপ্ন পূরণের।
শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় টলিউডের একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং সম্প্রতি তাঁর জীবনে বেশ কিছু বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছেন। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে শ্রাবন্তী মধ্যমগ্রামে তিনজন তারকা সহ একটি জিম খুলেছিলেন। তবে নতুন সেশন শুরু হওয়ার পর হঠাৎই জিমটি বন্ধ হয়ে যায়, যা অনেক প্রশিক্ষণার্থীকে অসুবিধায় ফেলে। তারা বেশ বড় অঙ্কের ফি প্রদান করেছিল। শ্রাবন্তী জিমের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই এবং আর্থিক প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন।
শ্রাবন্তী ভূতের ভয় সম্পর্কে খোলাখুলি স্বীকার করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কেউ যদি ভূতের রসিকতা করে তাঁকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে তবে তিনি খুব ভয় পেয়ে যান।
শ্রাবন্তীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনেক গুজব এবং জল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তাঁর সম্পর্ক এবং সম্ভাব্য বিয়ের পরিকল্পনা। শ্রাবন্তী প্রায়ই এই গুজবগুলির মুখোমুখি হয়ে থাকতে হয়।
এই সমস্ত ঘটনার পরও, শ্রাবন্তী এখনও টলিউডের একটি প্রধান মুখ এবং তাঁর শক্তিশালী ভক্তদের ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়ে যাচ্ছেন। তাঁর কাজ এবং জীবন দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখে।
বলিউডে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য বিতর্ক তুলে ধরা হলো:
২০২০ সালের ১৪ জুন সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু পুরো দেশকে স্তম্ভিত করে দেয়। মুম্বাইয়ের বাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁকে। তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। কেউ কেউ দাবি করেন, শোবিজের চাপের কারণে এটি আত্মহত্যা, আবার কেউ কেউ বলেন এটি হত্যা। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা হিসেবে প্রকাশিত হয়। এই ঘটনায় অনেক সেলিব্রিটি সমালোচনার মুখে পড়েন, বিশেষ করে চলচ্চিত্র নির্মাতা করণ জোহর। এই বিতর্কে নেপোটিজমের বিষয়টিও উঠে আসে।
২০২৪ সালে বলিউড সুপারস্টার সালমান খান এবং গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। বিষ্ণোই গ্যাং সালমানের মুম্বাইয়ের বাসভবনে গুলি চালায়, যার ফলে তার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। এই বিরোধ ১৯৯৮ সালের ব্ল্যাকবাক শিকার মামলার সময় থেকে শুরু হয়েছিল।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে কঙ্গনা রানাউত, যিনি সদ্য নির্বাচিত এমপি, দিল্লি ফেরার পথে চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে সিআইএসএফ কনস্টেবল কুলবিন্দর কৌর দ্বারা থাপ্পড় খেয়েছিলেন। কঙ্গনা পরে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করেন এবং জানান, কনস্টেবল কৃষক আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন এবং কৌরকে পরে বরখাস্ত করা হয়।
২০২৪ সালে শাহরুখ খানকে নিয়ে আরেকটি বিতর্ক ঘটে যখন তিনি মৃত্যু হুমকি পান। বান্দ্রা পুলিশ স্টেশনে একটি হুমকি বার্তা আসে, যেখানে শাহরুখের উপর একটি চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয়। তদন্তে জানা যায়, ছত্তিশগড়ের এক আইনজীবী ফয়জান খান এই হুমকি দিয়েছিলেন এবং তিনি শাহরুখ ও তাঁর ছেলে আরিয়ান খানের দৈনন্দিন কার্যকলাপের উপর নজর রাখছিলেন।
২০২৪ সালে পুনম পাণ্ডের মৃত্যু নিয়ে একটি অদ্ভুত গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর সামাজিক মাধ্যম ম্যানেজার তাঁর মৃত্যুর ঘোষণা দেন, যা পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং এটি ক্যান্সার সচেতনতা প্রচারের একটি কৌশল ছিল। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা পাণ্ডেকে সমালোচনা করেন এবং বলেন, তিনি জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য তাঁর মৃত্যুর ভান করেছিলেন।
এই বিতর্কগুলি বলিউডের জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং প্রমাণ করে যে সেলিব্রিটিদের জীবন সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। উর্বশী রাউতেলার জীবনের সাম্প্রতিক বিতর্কগুলি এবং বলিউডের অন্যান্য বিতর্কগুলি আমাদের দেখায় যে সেলিব্রিটিদের জীবন কতটা জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
বলিউডের এই বিতর্কগুলি আমাদের জন্য একটি অনুস্মারক যে সেলিব্রিটিদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং তাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সমাজের মধ্যে আলোচনা ও সমালোচনা হয়।