ছোটবেলায় অপর্ণা সেন-দিলীপ রায় অভিনীত একটি ছবি দেখেছিলাম, ‘নীলকন্ঠ’। গল্পটি সম্ভবত সোনাগাছির বেদনার গল্প। পুরনো দিনের অভিনেত্রী আলপনা দেবীর একটি প্রবাদ সংলাপ, সেই ছোট্ট বয়স থেকে আজ এই পরিণত বয়সেও আমার মধ্যে মোক্ষম ভাবে গেঁথে রয়েছে, “মাছ খাই না, মাছ খাই না পাতে তিনটে খলসে/ নাং করি না, নাং করি না, ঘরে তিনটে মিনসে!
এই প্রবাদটির কথা মনে পড়ছে পরিবারতন্ত্র নিয়ে ট্রাম্পের ফাঁকা বুলি শুনে! ট্রাম্পের পরিবারতন্ত্রের ফাঁকা বুলি আসলে পতিতাপল্লির রমরমা ব্যবসা ফাঁদার নেপথ্য গল্প! বাঙালি গণতন্ত্র এখন মজা করছে এই কথা বলে, “কেউ বলেনি কমলা জিতিস / সবাই বলেছে কমলা হারিস!”
ওদের দেশে মানে আমেরিকায় বাদী-বিবাদী সবটাই রিপাবলিক অথবা ডেমোক্রেটিক! নাম দিয়ে সাইনবোর্ড হয়, কাম দিয়ে যায় চেনা! এখানে কাম মানে ট্রাম্পের, “অতি বড় বৃদ্ধ পতি সিদ্ধিতে নিপুণ” কামের কথা বলা হচ্ছে না, বলা হচ্ছে ‘কাম’ মানে কাজের কথা! আমেরিকার রূপান্তরিত নারী সারা, সারা বিশ্বকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দায় নিয়েছেন!ট্রাম্পের মতো মানুষদের লক্ষ্যই, ভূপেন হাজারিকার গানের কথা, “মানুষ মানুষকে পণ্য করে মানুষ মানুষকে জীবিকা করে!”আমেরিকা মহাদেশের মুক্তচিন্তা আর উদার রাষ্ট্রনীতি আমাদের তৃতীয় বিশ্বের কাছে এক কল্পিত স্বপ্ন! অথচ সেখানে এখনও লড়ে যাচ্ছেন সারা ব্রাইড নামে এক রূপান্তরিত নারী, ওখানকার এলজিবিটিদের সমানাধিকার লক্ষ্যের লড়াইয়ে! দেশটি আমেরিকা বলেই সততার লড়াই করে নিরপেক্ষ মানুষের সমর্থনে উঠে আসা যায় দেশের প্রশাসনিক কংগ্রেস আসনে! সারাও সে ভাবে উঠে এসেছেন। যদিও এই ডেমোক্রেটিক মহিলা রিপাবলিকান পুরুষ সহকর্মীর দেশের প্রেসিডেন্টের চক্ষুশূল হয়েছেন। আবার বলছি, দেশটি আমেরিকা, প্রতিটি মানুষ তাঁদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য দিয়ে নিজস্ব ভাবনা ভাবেন। তাই প্রেসিডেন্টের চক্ষুশূল জনগণের চোখের মণি হয়ে উঠতে পারেন!সারাকে ভয় পেয়েই কি ট্রাম্প সে দেশে সেক্স রি-অ্যাসাইমেন্ট সার্জারি বন্ধের ফতোয়া জারি করেছেন? কিন্তু ‘তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে’!
ট্রাম্পের দেশে রূপান্তরিত নারী যৌনকর্মী হবেন, প্রচুর টাকা রোজগার করবেন, প্রমোদে ঢালিয়া দেবেন তনু-মন দেহ-প্রাণ, তা নয়! কুর্সি নিয়ে টানটানি করছেন, এত সাহস?
‘বেদ ব্রাহ্মণ রাজা ছাড়া / আর কিছু নাই ভবে পূজা করিবার / এই কটি কথা যেন মনে সার / ভুলিলে বিপদ হবে’— ট্রাম্প ফতোয়া দিলেন লিঙ্গ মাত্র দু’টি, পুরুষ আর নারী। এটাই সার কথা, এর বাইরে গেলে বিপদ আছে!
এটা ট্রাম্পের সার কথা হলেও, রূপান্তরিত নারী সারার কথা নয়! ওদের দেশে যৌন লিঙ্গ বিভিন্নতার মানুষের একতা, সততা বার বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে! ট্রাম্পের অন্তরাত্মা সেখান থেকেও ভয় পেতে পারে। কারণ, এ বার আর এলজিবিটি নেপথ্যে থেকে নির্বাচন জেতায়নি। সরাসরি মুখোমুখি উঠে এসেছে। চ্যালেঞ্জ নিয়ে, রূপান্তরিত নারী সারার রূপ ধরে!
ট্রাম্পের ফতোয়া, ট্রাম্পের ভয় পাওয়া, রূপান্তরিত নারী সমাজকে! বাথরুম, পাবলিক টয়লেটের অধিকার লড়াই থেকে যে সারার মতো রূপান্তরিত নারী সংসদের আসনে উঠে আসবেন তা কখনও ভাবতে পারেননি ট্রাম্প বা তাঁর পূর্বপুরুষ! যৌনকর্মীরা যে আন্দোলনের আন্তর্জাতিক আগুন জ্বালিয়ে তুলতে পারেন, ইতিহাস থেকে সে শিক্ষা পিতৃতন্ত্র কখনওই নিতে পারেনি, কোনও দেশে! আর তাই জন্মসূত্রে নারী এবং রূপান্তরিত নারী— সকল নারীকেই যৌনকর্মী বানানোর আন্তর্জাতিক চক্র জারি থাকার পরেও কুন্তীর মতো উঠে আসেন আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সারার মতো রূপান্তরিত নারী!
আমেরিকা প্রথম শিখিয়েছিল সারা বিশ্বকে, স্কুল অফ সেক্স চেঞ্জ লার্নিং। যেখানে একজন রূপান্তরকামীকে একটি প্রশিক্ষণ বা অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে নিয়ে গিয়ে তাঁর রূপান্তরকামী সত্তার সঠিক হদিস পেলে তবেই তাঁকে দেওয়া হত সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারির অনুমতি। এ সব গত শতকের আট, নয়, দশের ইতিহাস!
তখনও আমাদের ভারতবর্ষে অসহায় রূপান্তরকামী নারীদের ‘ক্যাসট্রেশন’ ছাড়া অন্য কোনও গতি, অন্য কোনও পন্থা ছিল না!