কোনও মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বুলডোজ়ার অ্যাকশন নেওা আইনসম্মত? প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। দুই ব্যক্তির করা মামলার শুনানিতে দেশের শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, কোনও ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলেও কি তাঁর বাড়ি কিংবা সম্পত্তি বুলডোজ়ার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়? উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে একটা সময় ‘বুলডোজ়ার বাবা’ তকমা দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে এই বুলডোজ়ার অ্যাকশন কি শেষ পর্যন্ত হবে?
দুর্নীতি কিংবা অপরাধে অভিযুক্তদের বাড়ি বুলডোজ়ার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া ইদানিং প্রায়শই ঘটে থাকে। যা নিয়ে একাধিক মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। সোমবার শুনানিতে তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দেশের শীর্ষ আদালতের।সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন শুনানিতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এই ধরনের বুলডোজ়ার অ্যাকশনের আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন, ‘কেবলমাত্র অভিযুক্ত হলে কি কারও বাড়ি ভেঙে ফেলা যায়? এমনকী, কেউ দোষী সাব্যস্ত হলেও তার বাড়ি ভাঙা যায় না।’ একইসঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘বেআইনি নির্মাণ যেমন সমর্থনযোগ্য নয় তেমনই আইনের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কোনও নির্মাণ ভাঙা উচিত নয়।’কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাও সওয়াল করেন, দুর্নীতি বা অন্য অপরাধে অভিযুক্ত হলেই তার সম্পত্তি নষ্ট করা যায় না। পুর আইন মেনে একমাত্র বুলডোজ়ার অ্যাকশন নেওয়া যায়।
ইদানিং ‘বুলডোজ়ার জাস্টিস’ শব্দবন্ধটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। কোনও মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়ি কিংবা সম্পত্তি বুলডোজ়ার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা আখছার ঘটে থাকে বিভিন্ন রাজ্যে।
মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের দুই বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন। তাঁদের অভিযোগ, মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে নাম থাকায় তাদের সম্পত্তি বুলডোজ়ার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। অবিলম্বে শুনানির আর্জিও জানিয়েছিলেন এই মামলাকারীরা।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোদী আদিত্যনাথের একের পর এক পদক্ষেপের জেরে তাঁর জুটেছিল ‘বুলডোজ়ার বাবা’ তকমা। নির্বাচনী প্রচারের সময় এই নামেই প্রচার চলেছিল। এই বুলডোজ়ার উত্তরপ্রদেশের শাসন ক্ষমতার প্রতীক হয়ে ওঠে। নির্বাচনে জেতার পরও বুলডোজ়ার নিয়ে বিজয় মিছিল করতে দেখা গিয়েছে BJP কর্মী-সমর্থকদের। যোগী আদিত্যনাথের দেখানো পথ অনুসরণ করে একাধিক BJP শাসিত রাজ্যেও বুলডোজ়ার অ্যাকশন মডেল চালু করা হয়। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ার বদলে এই নতুন বিচার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্নও ওঠে বিস্তর। যোগী সরকারের এই বুলডোজ়ার অ্যাকশনের সমালোচনায় বারবার সরব হয়েছে বিরোধী শিবির। প্রশ্ন তোলা হয়, বছরের পর বছর পুর কর জমা দেওয়ার পরও একটি বাড়িতে নোটিস টাঙিয়ে সেটিকে বেআইনি ঘোষণা করা হয় কী ভাবে। বাড়িটিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কি আদৌ আইনসম্মত? এই বুলডোজ়ার নীতি স্বৈরাচারের প্রতীক বলেই দাবি বিরোধীদের।