মুনমুন সেনের স্বামী তিনি। টলিপাড়া তাঁকে চিনত ‘হাবি’ বলে। মুনমুন নিজের স্বামীকে ওই নামেই ডাকতেন। তবে, কোনও মতেই ভরতের একমাত্র পরিচয় হতে পারে না মুনমুন সেনের স্বামী, বা সুচিত্রা সেনের জামাতা হিসাবে। বরং তিনি ত্রিপুরা রাজ পরিবারের সন্তান, রাজকুমার। তাঁর বাবা মহারাজা রমেন্দ্রকিশোর দেব, মা ত্রিপুরার রাজমাতা ইলা দেবী। অন্য দিকে, ভরতের মাসি জয়পুর রাজমাতা গায়ত্রী দেবী। শেষ দিন পর্যন্ত ভরত কাটিয়ে গেলেন কলকাতায়।
মুনমুন সেনের চলনবলন নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। মা সুচিত্রা সেনের মতো অভিনয় সাফল্য তিনি পাননি কোনও দিনই। তবু, তাঁর স্টারডমে ঘাটতি হয়নি। আর তারই পাশে ভরত ছিলেন দৃঢ়চেতা নাবিকের মতো। সংসার সামলেছেন দায়িত্ব নিয়ে। বড় মেয়ে রাইমা আনন্দবাজার অনলাইনকে এক সময় সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তিনি কলকাতার বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকেন। তাই বেশি রাত করে বাড়ি ফেরার আগে দু’বার ভাবেন। “বাবা- মায়ের সঙ্গে থাকতে গেলে তো ওদের কথা শুনতেই হবে” বলেছিলেন রাইমা। বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্লোড়, তাও রাইমা বাড়িতে করতে পছন্দ করেন। আর এ বিষয়ে তাঁর অতিথিবৎসল বাবার ভূমিকা অনেকখানি।
রাইমা কেন বিয়ে করছেন না, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। প্রাথমিক ভাবে তাঁর বাবাও চেয়েছিলেন রাইমা সংসারী হোন। তা নিয়ে দীর্ঘ দিন চিন্তিতও ছিলেন ভরত, জানিয়েছিলেন রাইমা। কিন্তু পরে তিনিই নাকি বলেছিলেন, “তোমার বাড়ি আছে, স্বচ্ছল অবস্থা, অভিনয় জগতেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছো, আর কী চাই। বিয়ে করতেই হবে এমন কোনও মানে নেই।” বিয়ে নিয়ে বাবার মতামত সহজে বোঝা গেলেও রাইমা জানতেন, এর অর্থ একত্র বাসের সিলমোহর নয়। বাবা যে মেয়ের একত্র বাস মেনে নিতে পারবেন না, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন রাইমা।
আপাদমস্তক সংসারী ভরত সামলে রাখতেন শাশুড়ি সুচিত্রা সেনকেও। আশির দশকে অভিনয় জীবনকে বিদায় জানিয়ে অন্তরালবাসে চলে যান বাঙালির ‘রিনা ব্রাউন’। ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, সুচিত্রার এই নিশ্ছিদ্র অন্তরালবাস সম্ভব হয়েছিল ভরতের ঐকান্তিক সহযোগিতায়। তিনি না থাকলে হয়তো এ ভাবে এত দিন জীবন কাটাতেই পারতেন না, বাঙালির প্রিয় নায়িকা।