রবিবার জয়নগরকাণ্ডের জরুরি শুনানিতে বিচারপতি বলেন, “বিচার কোনও জাদুকাঠি নয়, এটা ধাপে ধাপে হয়। অনেকেই মনে করছেন, তাঁরা যাঁকে দোষী মনে করছেন, তাঁকেই শাস্তি দিতে হবে।”
“বিচার কোনও জাদুকাঠি নয়, এটা ধাপে ধাপে হয়।” জয়নগরকাণ্ডের শুনানিতে এমনই মন্তব্য করল কলকাতা হাই কোর্ট। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কোনও কেন্দ্রীয় হাসপাতালে মেয়ের দেহের ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন মৃতার বাবা। সেই দাবি মেনে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল পুলিশ। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের নির্দেশ মেনে রবিবারই জরুরি ভিত্তিতে মামলার শুনানি হয় হাই কোর্টে, বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে। আরজি করের ঘটনার পর দ্রুত বিচার চেয়ে গোটা রাজ্যের নানা প্রান্তে পথে নেমেছে মানুষ। এই আবহে হাই কোর্টের ‘বিচার কোনও জাদুকাঠি নয়’ মন্তব্যকে অর্থবহ এবং তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
রবিবারের শুনানিতে নির্যাতিতার বাবার হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য। মায়ের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী শামিম আহমেদ। বিল্বদল জয়নগরের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের আর্জি জানান। নির্যাতিতার বাড়িতে বসেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে আদালতে সওয়াল করেন শামিম। তিনি দ্রুত বিচারের দাবি জানান। দুই আইনজীবীর সওয়ালের পর বিচারপতি বলেন, “বিচার কোনও জাদুকাঠি নয়, এটা ধাপে ধাপে হয়। অনেকেই মনে করছেন, তাঁরা যাঁকে দোষী মনে করছেন, তাঁকেই শাস্তি দিতে হবে। এটা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা।”
ন’বছরের শিশুকে ধর্ষণ-খুনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে শনিবার দিনভর অগ্নিগর্ভ ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর। শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি জলাভূমি থেকে উদ্ধার হয় নাবালিকার দেহ। তার পর শনিবার সকাল থেকেই এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। পরিবার ও গ্রামবাসীদের দাবি, নাবালিকা নিখোঁজ হওয়ার পর পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু প্রথমে পুলিশের ভূমিকা সদর্থক ছিল না। পুলিশ যদি প্রথমেই তৎপর হত, তা হলে নাবালিকার এই পরিণতি হত না। পুলিশ অবশ্য সেই অভিযোগ মানেনি। এক যুবককে গ্রেফতারও করেছে তারা।
রবিবার জরুরি শুনানিতে আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশ-প্রশাসনও। জয়নগরকাণ্ডে কেন শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ (পকসো) আইনে মামলা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। তাঁর প্রশ্ন, মেয়েটির বয়স ১০ বছরের কম হওয়া সত্ত্বেও কেন পকসো আইনে মামলা রুজু করেনি পুলিশ? সুরতহালের পরেও কেন পুলিশ পকসো ধারায় মামলা রুজু করল না? এর পরেই জয়নগরকাণ্ডে পুলিশকে পকসো আইনের ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, আরজি কর-কাণ্ডের পর দ্রুত বিচার চেয়ে রাজ্যের নানা প্রান্তে পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন প্রতিবাদ মিছিল থেকে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান উঠেছে। ব্যক্তি বিশেষের নাম উল্লেখ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফাঁসি দেওয়ার দাবিও উঠেছে। আইনজ্ঞেরা অবশ্য বার বারই জানিয়েছেন, বিচার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে চলে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে। সেখানে আবেগের কোনও স্থান নেই।