যদি জিজ্ঞাসা করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বত কোনটি, তাহলে বেশিরভাগ মানুষই উত্তর দেবেন—মাউন্ট এভারেস্ট। ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার উচ্চতার এই পর্বতশৃঙ্গ শুধুমাত্র পৃথিবীর ভূ-প্রকৃতির একটি বিস্ময় নয়, এটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে এক চূড়ান্ত লক্ষ্য। তবে আপনি কি জানেন, এমন একটি পর্বতও রয়েছে, যা উচ্চতায় এভারেস্টকে ছাপিয়ে যেতে পারে? এমনকি এই শৃঙ্গটি আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে, তবুও এটি নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না।
মাউন্ট এভারেস্ট বনাম মাওনা কেয়া
পর্বতের উচ্চতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে—সাগরপৃষ্ঠ থেকে মাপা উচ্চতা এবং গোড়া থেকে চূড়ার মধ্যবর্তী উচ্চতা। মাউন্ট এভারেস্ট সাগরপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত হলেও, হাওয়াইয়ের মাওনা কেয়া নামের একটি আগ্নেয়গিরি, গোড়া থেকে চূড়া পর্যন্ত মাপলে এভারেস্টের থেকেও উঁচু।
- মাওনা কেয়ার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে: ৪,২০৭ মিটার
- সমুদ্রের নিচ থেকে গোড়া ধরলে: প্রায় ১০,২০৬ মিটার
যা মাউন্ট এভারেস্টের থেকেও বেশি! এই বিস্ময়কর তথ্য আমাদের পৃথিবীর বৈচিত্র্যময় ভূগোলকে নতুন করে চেনায়।
নতুন আবিষ্কার: এভারেস্টের ১০০ গুণ উঁচু পর্বত!
সম্প্রতি নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, মাউন্ট এভারেস্টের থেকেও ১০০ গুণ বেশি উচ্চতার একটি পর্বতশৃঙ্গ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এটি আফ্রিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের সীমানায় অবস্থিত।
🔹 পর্বতটি সমুদ্রতলের নিচে একটি বিশাল আগ্নেয়গিরি, যা উচ্চতায় এভারেস্টকে বহুগুণে ছাড়িয়ে যায়।
🔹 গবেষকরা ভূগর্ভস্থ প্লেট টেকটোনিকস এবং আগ্নেয়গিরির গঠন নিয়ে গভীর অনুসন্ধান চালিয়ে এই পর্বতের অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন।
🔹 সমুদ্রতলের নিচে থাকা এই বিশাল শৃঙ্গ এতদিন মানুষের নজর এড়িয়ে ছিল, কারণ সাধারণত আমরা সাগরপৃষ্ঠ থেকে পর্বতের উচ্চতা মাপি।
🔹 মাটির গভীর থেকে চূড়া পর্যন্ত উচ্চতা পরিমাপ করে দেখা গেছে, এটি প্রায় ৮৮৪,৮৬০ মিটার, যা এভারেস্টের চেয়ে ১০০ গুণ উঁচু!
পর্বতের গঠন ও বৈশিষ্ট্য
গবেষণায় আরও জানা যায়, এই বিশাল পর্বতশৃঙ্গটি মূলত একটি আগ্নেয়গিরি, যা মিলিয়ন বছর ধরে গঠিত হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরের বিশাল প্রান্তরে থাকা এই পর্বতশৃঙ্গের চারপাশ ঘন সাগরজলে ঘেরা, যার কারণে এতদিন এটি আবিষ্কার করা কঠিন ছিল।
বিজ্ঞানীদের প্রতিক্রিয়া
এই আবিষ্কার ভূতাত্ত্বিক গবেষকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এটি শুধুমাত্র ভূতাত্ত্বিকদের জন্য নয়, বরং আমাদের সবার জন্য এক বিরল তথ্য। পৃথিবীর অজানা প্রান্তে লুকিয়ে থাকা এই পর্বত প্রকৃতির এক নতুন রহস্য উন্মোচন করেছে।
👉 প্রশ্ন থেকে যায়—এই পর্বত কি সত্যিই মাউন্ট এভারেস্টকে পেছনে ফেলে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হিসেবে স্থান পাবে?
👉 বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে আরও গবেষণা চালাচ্ছেন, কারণ এই আবিষ্কার ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করেছে।
পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক গঠন ও ভবিষ্যৎ গবেষণা
গবেষকদের মতে, এই পর্বতশৃঙ্গটি পৃথিবীর ভূত্বক এবং আবরণের (mantle) সংযোগস্থলে অবস্থিত। এটি গঠিত হয়েছে টেকটোনিক প্লেটগুলোর সংঘর্ষ, ভূমিকম্প, এবং ভূপৃষ্ঠের গভীরে থাকা উচ্চচাপ ও তাপমাত্রার কারণে।
🔸 গবেষণার প্রধান গবেষক আরওয়েন ডিউস বলেন:
“মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতার তুলনায় ১০০ গুণ বেশি উচ্চতার একটি বিশাল পর্বত পৃথিবীর ভূগর্ভে লুকিয়ে রয়েছে। তবে এর বয়স ও উৎপত্তি সম্পর্কে এখনও সঠিকভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।”

নতুন আবিষ্কারের গুরুত্ব
📌 এই আবিষ্কার শুধু ভূতাত্ত্বিকদের জন্য নয়, বরং সাধারণ মানুষের জন্যও এক অত্যাশ্চর্য তথ্য।
📌 এটি আমাদের দেখায় যে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে আরও কত রহস্য লুকিয়ে আছে, যা আমাদের জানা ও বোঝার বাইরে।
📌 ভূতাত্ত্বিক প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এই বিশাল পর্বতের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও নতুন গবেষণার দরজা খুলে দেবে।
উপসংহার
এই নতুন আবিষ্কার আমাদের পৃথিবীর বিস্ময়কর ভূ-প্রকৃতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আমরা দীর্ঘদিন ধরে মাউন্ট এভারেস্টকেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বলে জানতাম, কিন্তু এই গবেষণা দেখিয়ে দিল—পৃথিবীর গভীরে আরও কত অজানা বিস্ময় লুকিয়ে রয়েছে! হয়তো ভবিষ্যতে আরও এমন বহু আবিষ্কার হবে, যা আমাদের জ্ঞানের সীমানাকে আরও বিস্তৃত করবে।
🌍 আপনার মতামত কী? আপনি কি বিশ্বাস করেন, মাউন্ট এভারেস্টকে ছাড়িয়ে যেতে পারে এই নতুন পর্বত? কমেন্টে জানান! ✍️