ডাইনোসর, যারা প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, আজও আমাদের কল্পনার জগতে বিশাল আকৃতির, শক্তিশালী এবং ভয়ঙ্কর প্রাণী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ডাইনোসরের গল্প এখানেই শেষ নয়। কিছু আধুনিক প্রাণীর মধ্যে তাদের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, যা বিজ্ঞানীদের মতে ডাইনোসরের বিবর্তিত রূপ হতে পারে।
আধুনিক যুগের ডাইনোসরের উত্তরসূরি প্রাণী
১. এমু – ডাইনোসরের মতো পাখি
এমু পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পাখি, যা উড়তে পারে না। এরা ঘণ্টায় ৫০ কিমি বেগে দৌড়াতে পারে এবং এদের লম্বা পা এবং শক্তিশালী পেশি অনেকটা সরোপোড ডাইনোসরের মতো। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পাখিদের বিবর্তন ডাইনোসরের একটি বিশেষ গোষ্ঠী থেরোপড থেকে হয়েছে।

২. রাইনোসোরাস ইগুয়ানা – ছোট আকৃতির ডাইনোসরের প্রতিচ্ছবি
এই প্রাণী ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে পাওয়া যায় এবং দেখতে অনেকটা ছোট আকারের ডাইনোসরের মতো। এদের শক্তিশালী পা, মাথার শিঙের মতো গঠন এবং শক্ত খোলস ডাইনোসরের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তুলনাযোগ্য।
৩. আর্মাডিলো – শক্ত খোলসযুক্ত প্রতিরক্ষামূলক প্রাণী
আর্মাডিলোর শরীর শক্ত খোলসে ঢাকা, যা শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করে। তাদের গতি প্রায় ৩৫ কিমি/ঘণ্টা এবং বৈজ্ঞানিকরা মনে করেন, ডাইনোসরের মতোই, এরা নিজেদের রক্ষা করতে দেহের বিশেষ গঠন ব্যবহার করে।
৪. ফ্রিলড লিজার্ড – আধুনিক ডাইলোফোসরাস
অস্ট্রেলিয়ার এই প্রাণী বিপদের সময় গলার চারপাশে থাকা ঝালর ফুলিয়ে বড় আকার ধারণ করে, যা ডাইলোফোসরাসের সঙ্গে তুলনাযোগ্য। এই বিশেষ আচরণ শিকারিদের ভয় দেখানোর জন্য কার্যকর।

৫. গ্রিন বাসিলিস্ক – পানির উপর দৌড়ানো লিজার্ড
এটি “জেসাস ক্রাইস্ট লিজার্ড” নামেও পরিচিত কারণ এটি পানির উপর দিয়ে দ্রুত দৌড়াতে সক্ষম। এর লম্বা লেজ এবং শক্তিশালী পা বিজ্ঞানীদের মতে ডাইনোসরের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিল রাখে।
৬. কোমোডো ড্র্যাগন – বিশাল আকৃতির টিকটিকি
বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকটিকি কোমোডো ড্র্যাগন, যা ইন্দোনেশিয়ার কোমোডো দ্বীপপুঞ্জে পাওয়া যায়। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে এবং মাংসাশী প্রাণী হিসেবে এরা ডাইনোসরের কাছাকাছি বিবেচিত হয়।
৭. সামুদ্রিক কচ্ছপ – ডাইনোসরের প্রাচীন আত্মীয়
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সামুদ্রিক কচ্ছপদের পূর্বপুরুষরা ডাইনোসরের যুগেও ছিল। তাদের শক্ত খোলস এবং দীর্ঘ আয়ু ডাইনোসরের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ডাইনোসরের উত্তরসূরিদের সংরক্ষণ করা জরুরি
যদিও ডাইনোসর আজ বিলুপ্ত, তাদের বৈশিষ্ট্য বহন করা আধুনিক প্রাণীগুলোর অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তন, বনাঞ্চল ধ্বংস এবং মানুষের হস্তক্ষেপের কারণে এদের সংখ্যা দ্রুত কমছে। তাই আমাদের উচিত এদের সংরক্ষণে মনোযোগ দেওয়া।
প্রকৃতি সবসময় পরিবর্তিত হয়, কিন্তু জীবনের টিকে থাকার জন্য প্রাণীগুলো নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয়। এই আধুনিক ডাইনোসররা আমাদের জীববৈচিত্র্যের মূল্যবান অংশ, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন।