সামনেই পুজো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলনকারীদের ‘উৎসবে ফেরার’ আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু বিজেপি সেটা হতে দিতে চায় না। এখন থেকেই তৈরি হচ্ছে পুজোয় আন্দোলনের রূপরেখা।
আরজি করের নির্যাতিতার মৃত্যু ঘিরে ‘ক্ষোভ’ বাঁচিয়ে রাখতে হবে। পুজোর আবহেও মানুষকে ভুলতে দিলে চলবে না পথ ও রাত দখলের কথা। এমনই ভাবনা নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি সাজাচ্ছে রাজ্য বিজেপি। এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও এর পরে কোন পথে আন্দোলনকে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে সোমবার রাতেই বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্য কমিটির নেতারা। সেখানে ঠিক হয়েছে, দলের আন্দোলন শুধু কলকাতায় আটকে না রেখে ছড়িয়ে দিতে হবে গোটা রাজ্যে। পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ার আগেই তাই দলের নিচু স্তরে আন্দোলন পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে রাজ্য বিজেপি।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট কী বলে, তার দিকে তাকিয়ে ছিল বিজেপি। সেই হিসাবেই সোমবার সন্ধ্যায় দলের সল্টলেকের রাজ্য দফতরে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। বিজেপির রাজ্য নেতারা ছাড়াও দলের সব মোর্চার প্রধানদেরও সেই বৈঠকে ডাকা হয়। সেখানেই ঠিক হয়েছে, কলকাতায় কিছু বড় আন্দোলনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ বার ‘মূল নজর’ দিতে হবে জেলায়। দলের সাংগঠনিক মণ্ডল (ব্লক) স্তরে নিয়ে যেতে হবে আন্দোলন। সেই লক্ষ্যে খুব তাড়াতাড়ি জেলায় জেলায় ছোট ছোট সভার পরিকল্পনা করা হয়েছে। রেলস্টেশন, বড় বাসস্ট্যান্ড এবং বাজার এলাকায় হবে পথসভা। সেই সব সভায় রাজ্য নেতারা না গেলেও স্থানীয় সাংসদ, বিধায়কেরা যাবেন। সেই সঙ্গে জেলার নেতারা প্রতি দিন কোনও না কোনও সভায় হাজির থাকবেন। সেই সভায় শুধু আরজি করের কথাই নয়, রাজ্য সরকারের সার্বিক দুর্নীতির বিষয় তুলে ধরারও পরিকল্পনা থাকছে বিজেপির। পুজোর সময়েও যাতে রাজ্যে আন্দোলনের পরিবেশ জিইয়ে রাখা যায়, সেটা ভেবেই পদ্মশিবির চাইছে জেলা থেকে মণ্ডলের নেতারা ‘প্রস্তুত’ থাকুন। গা-গরম করার মতো কর্মসূচি এখন থেকেই শুরু হোক।
আরজি কর-কাণ্ডের পরেই শ্যামবাজারে ধর্নার পরিকল্পনা করেছিল বিজেপি। পুলিশের অনুমতি না মেলায় তারা আদালতে যায়। অনুমতি পেয়ে পাঁচ দিনের ধর্নাও করা হয়। তার মধ্যেই স্বাস্থ্য ভবন অভিযান হয়। এর পরে দু’দফায় আদালতের অনুমতি পেয়ে ধর্মতলায় টানা ধর্না এখনও চলছে। তাতে রাজ্য নেতাদের উপস্থিতি ‘সন্তোষজনক’ হলেও জেলা থেকে কর্মীদের বিশেষ আনতে পারেনি বিজেপি। ওই ধর্না চলবে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। পরদিন বিশ্বকর্মা পুজো। সে দিন সুপ্রিম কোর্টে যেমন পরবর্তী শুনানি রয়েছে, তেমনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনও আছে। ফি-বছর মোদীর জন্মদিন উপলক্ষে বিজেপি নানা সেবামূলক কর্মসূচি নেয়। তবে এ বারে আরজি কর নিয়েই থাকতে চায় দল। ঠিক হয়েছে, সে দিন সুপ্রিম কোর্ট কী বলে, তা জেনে নিয়ে সেই মতো দলের বক্তব্য তৈরি হবে। তার আগে সুপ্রিম কোর্টের নিন্দা না করে, সিবিআইয়ের সমালোচনা না করে উল্টে রাজ্য সরকারের উপর ‘চাপ’ তৈরি করতে চাইছে বিজেপি। একই সঙ্গে চাইছে নাগরিক আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে যেতে।
অক্টোবরের ২ তারিখে মহালয়া। প্রতি বছর ওই দিনটিতে বিজেপি নেতারা রাজনৈতিক সংঘাতে দলের নিহত কর্মীদের স্মৃতির উদ্দেশে তর্পণ করেন। আবার গান্ধীজির জন্মদিন উপলক্ষে খাদি পোশাক কেনার কর্মসূচিও থাকে। কিন্তু এ বার কী হবে, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ঠিক হয়েছে, পুজোর সব ক’টি দিনেই দলের নানা কর্মসূচি থাকবে। সেই হিসাবে আন্দোলনের ‘নির্ঘণ্ট’ এবং ‘রাস্তা’ কী হবে, তার ভাবনাচিন্তাও শুরু হয়েছে। প্রতিটি বড় মণ্ডপের সামনে রাজ্য সরকার ও পুলিশের উপর ‘অনাস্থা’ জানিয়ে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানের পরিকল্পনাও রয়েছে পদ্মশিবিরের। এমন কর্মসূচির কথা আগেই জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাতে সিলমোহর দিয়েছে রাজ্য কমিটি। কী কী কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে, তা এখনই জানাতে না চাইলেও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘পুজো তো হবেই। কিন্তু সাধারণ মানুষ কি এ বার উৎসবের মুডে থাকবেন? মুখ্যমন্ত্রী চাইলেও সেটা মনে হয় হবে না। একটা কথা বলতে চাই— চিকিৎসক বোনকে হারানো বিজেপি আনন্দে থাকার অবস্থায় নেই।’’
শুভেন্দু অনেক আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে, একই দিনে নবান্ন-লালবাজার-কালীঘাটে (মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি) অভিযানের কর্মসূচি নেবে দল। তবে এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে দলে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। কবে ওই কর্মসূচি হতে পারে বা আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে সোমবারের বৈঠকে আলোচনা হয়নি বলেই সূত্রের দাবি। ওই বৈঠকে শুভেন্দু অবশ্য ছিলেন না। এক রাজ্য নেতা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘এখনও কিছু আলোচনা হয়নি মানে যে হবে না, তা নয়। আমাদের নেতা একটা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আর তা করা হবে না, তা হয় নাকি? সঠিক সময়ে আমরা কর্মসূচি নেব। তবে আপাতত আমাদের নজর জেলার দিকেই।’’