৫০ পেরিয়েও টগবগ করবে তারুণ্য, পুরুষদের পাতে রাখুন এই সব খাবার!

Spread the love

বয়স বাড়লেও তারুণ্য ধরে রাখা সম্ভব, যদি সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা যায়। অনেকেই ৫০ পেরিয়ে শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি ও নানা রকম শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট খাবার নিয়মিত খেলে ৫০-এর পরেও ৩০-এর যুবকের মতো ফিট ও চনমনে থাকা সম্ভব। শরীরের শক্তি বজায় রাখা, পেশি সংরক্ষণ এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য পুষ্টিকর খাবার অপরিহার্য।

প্রোটিনযুক্ত খাবার শরীরের পেশি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেশি ক্ষয়ের হারও বাড়ে, তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। ডাল, মাছ, মুরগির মাংস, ডিম, দই, বাদাম এবং বিনস প্রাকৃতিক প্রোটিনের ভালো উৎস। এগুলো খেলে শরীর শক্তিশালী থাকে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। স্যামন, টুনা, আখরোট, চিয়া সিড ও ফ্ল্যাক্স সিড ওমেগা-৩-এর সমৃদ্ধ উৎস। নিয়মিত এই খাবার খেলে শরীরের প্রদাহ কমে, হাড়ের গঠন মজবুত হয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় দুর্বল হতে শুরু করে, তাই ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। দুধ, দই, ছানা, পালং শাক ও বাদাম হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছাড়া প্রতিদিন কিছুক্ষণ রোদে বসা উচিত, কারণ সূর্যালোক থেকে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।

সবুজ শাকসবজি ও ফল শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পালং শাক, ব্রোকলি, গাজর, টমেটো, আপেল, কমলা, পেয়ারা, বেদানা ও বেরি জাতীয় ফল প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এগুলো খেলে শরীরে বয়সের ছাপ পড়তে দেরি হয় এবং হৃদযন্ত্র ভালো থাকে।

শরীরের তারুণ্য ধরে রাখতে ভালো ফ্যাট খাওয়া জরুরি। বাদাম, অলিভ অয়েল, ডার্ক চকলেট, অ্যাভোকাডো ও নারকেল তেল থেকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট পাওয়া যায়, যা শরীরের শক্তি বাড়ায় এবং চামড়ার নমনীয়তা বজায় রাখে।

শরীরকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে হলে পর্যাপ্ত জল পান করাও অত্যন্ত জরুরি। জল শরীর থেকে টক্সিন বের করে, হজমক্রিয়া ভালো রাখে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। অনেকেই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জল কম পান করেন, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল পান করা উচিত।

শুধু খাবার খেলেই হবে না, বরং নিয়মিত ব্যায়াম করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা যোগব্যায়াম শরীরের নমনীয়তা বজায় রাখে এবং রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে। সুস্থ থাকতে চাইলে ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলাও দরকার, কারণ এগুলো শরীরের কোষ ধ্বংস করে এবং অকালবার্ধক্য ডেকে আনে।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ৫০-এর পরেও ৩০-এর যুবকের মতো ফিটনেস ও তারুণ্য ধরে রাখা সম্ভব। তাই এখন থেকেই সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শুরু করা উচিত।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা আরও বেশি জরুরি, কারণ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের পেশি ক্ষয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি। ফলে শরীরের সঠিক যত্ন না নিলে দুর্বলতা, ক্লান্তি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন সঠিক ও টাটকা খাবার নির্বাচন করা। টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল স্বাস্থ্য রক্ষার অন্যতম চাবিকাঠি। মরশুমি ফল ও সবজি খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সরবরাহ হয়, যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাজা খাবার আমাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়া সঠিক রাখে এবং মাংসপেশির স্বাস্থ্য বজায় রাখে। যারা প্রতিদিন ফাস্টফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খান, তাদের ক্ষেত্রে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, যেমন হজমের সমস্যা, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, ওজন বৃদ্ধি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাসে পরিণত করতে হলে টাটকা এবং কম পরিশোধিত খাবার খাওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সম্প্রতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘হোল ৩০ ডায়েট’, যা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখার একটি কার্যকরী উপায়। এই খাদ্যাভ্যাসে মূলত প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ খাবার খেতে বলা হয়, যেখানে শাকসবজি ও ফলমূলকে তার আসল গুণাগুণ বজায় রেখে সামান্য মশলার সঙ্গে রান্না করা হয়। এতে চিনি, দুগ্ধজাত দ্রব্য, শস্য, ডাল ও প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এসব খাবার শরীরে অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট জমিয়ে রাখতে পারে এবং পরিপাকতন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে এই ডায়েট অনুসরণ করলে শরীরে বাড়তি মেদ জমতে পারে না এবং পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে।

ভারতীয় খাদ্যাভ্যাসের বিশেষত্ব হলো এতে সব ধরনের পুষ্টিকর উপাদান বিদ্যমান থাকে। ফলমূল, শাকসবজি, ডাল, মাছ, মাংস সবই ভারতীয় রান্নার অংশ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে মরশুমি শাকসবজি দিয়ে তৈরি খাবার, যেমন খিচুড়ি বা ডালিয়া অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। এই খাবার শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং ফাইবার সমৃদ্ধ, যা হজমক্রিয়া সহজ করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে হালকা ও সহজপাচ্য খাবার বেছে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হজমশক্তি দুর্বল হয়ে যায় এবং ভারী খাবার খেলে সমস্যা হতে পারে।

শুধু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলেই শরীর সুস্থ থাকবে না, তার জন্য প্রতিদিন কিছুটা শারীরিক পরিশ্রমও প্রয়োজন। প্রায় ৩৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষেরই বডি মাস ইনডেক্স কম থাকে, যা তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই প্রতিদিন ব্যায়াম করা জরুরি। হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা বা যোগব্যায়াম শরীরকে সক্রিয় রাখার জন্য অত্যন্ত উপকারী। পাশাপাশি ওজন তোলার মতো কিছু ব্যায়াম করলে পেশির ক্ষয় রোধ করা যায় এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের ক্যালোরি বার্ন হয়, বিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে এবং হৃদরোগসহ নানা অসুখের ঝুঁকি কমে যায়।

শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে গেলে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাবারই যথেষ্ট নয়, অনেক সময় কিছু পরিপূরক গ্রহণ করাও প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সঠিক পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ গ্রহণ না করলে শরীরে নানা ধরনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ভিটামিন ডি, বি১২, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো পুষ্টিকর উপাদান শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে না পৌঁছালে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে, স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। তাই নিয়মিত সুষম খাদ্যের পাশাপাশি প্রয়োজনে কিছু পরিপূরক গ্রহণ করতে হতে পারে, বিশেষত যারা প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম করেন বা যারা নির্দিষ্ট কিছু খাদ্য উপাদান গ্রহণ করতে পারেন না।

সুস্থ থাকতে হলে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাবার ও ব্যায়াম করলেই হবে না, বরং নিয়মিত জল পান করাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করেন না, যার ফলে দেহে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত জল পান করলে শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায়, হজমক্রিয়া ভালো থাকে এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়।

পুরুষদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধূমপান হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, অন্যদিকে অতিরিক্ত মদ্যপান লিভারের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই যারা সুস্থ থাকতে চান, তাদের জন্য এসব অভ্যাস ত্যাগ করাই শ্রেয়।

সার্বিকভাবে সুস্থ জীবনযাত্রা বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক শান্তি প্রয়োজন। পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি জীবনযাপনের অন্যান্য দিকেও মনোযোগ দেওয়া উচিত। নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপ করানো, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং মানসিক চাপ কমানোর উপায় খোঁজা দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার চাবিকাঠি হতে পারে। শুধুমাত্র সুস্থ থাকার জন্য নয়, বরং কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্যও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অপরিহার্য। একটি সুস্থ ও কার্যকরী জীবন গড়ে তুলতে হলে প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাস পরিবর্তন করাই সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *