ত্রিদেব ও তাঁদের অস্ত্র
হিন্দুধর্মের ত্রিদেব সম্পর্কে কে না জানেন। ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর। একজন এই বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, একজন পালনকর্তা এবং অন্যজন রক্ষাকর্তা। এই তিনজনের ক্ষমতার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। এই তিন সর্বোচ্চ দেবতা তিনটি বিশেষ অস্ত্রের অধিকারী। ব্রহ্মার ব্রহ্মাস্ত্র, মহাদেবের ত্রিশূল এবং বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র। শ্রীবিষ্ণু এবং তাঁর অন্যতম অবতার শ্রীকৃষ্ণ এই সুদর্শন চক্র ব্যবহার করে অনেক দানবের হত্যা করেন।
Table of Contents
সুদর্শন চক্রের নাম ও তাৎপর্য
সুদর্শন চক্রের সুদর্শন শব্দটি তৈরি হয়েছে দুটি আলাদা শব্দ জুড়ে, সু এবং দর্শন। এর অর্থ যার দর্শন পাওয়া শুভ। পুরাণে যা কিছু দিব্যঅস্ত্রের কথা জানা যায়, তার মধ্যে একমাত্র সুদর্শন চক্রই সব সময় গতিশীল অবস্থায় থাকে। কী ভবে এই সুদর্শন চক্র তৈরি হল, তা নিয়ে একাধিক কাহিনি পাওয়া যায়। পুরাণে কোথাও পাওয়া যায় যে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর এবং দেবগুরু বৃহস্পতির মিলিত শক্তির ফসল এই সুদর্শন চক্র।
সুদর্শন চক্রের সৃষ্টি সম্পর্কিত পৌরাণিক কাহিনি
আবার অনেক জায়গায় বলা আছে যে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা সুদর্শন চক্র তৈরি করে দিয়েছিলেন। একটি কাহিনি অনুসারে বিশ্বকর্মার কন্যা সঞ্জনার সঙ্গ সূর্যের বিবাহ হয়। কিন্তু সূর্যের প্রচণ্ড তেজের কারণে সঞ্জনা স্বামীর কাছে যেতে পারেন না। তখন বাবাকে এসে বলায় তিন সূর্যের তেজ কিছুটা কমিয়ে দেন। সূর্যের তেজ কমানোর ফলে এই অতিরিক্ত তেজ গুঁড়োর মতো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এই গুঁড়ো সংগ্রহ করে তা দিয়ে তিনটি জিনিস বানান বিশ্বকর্মা। একটি হল পুষ্পক রথ, দ্বিতীয়টি মহাদেবের ত্রিশূল এবং তৃতীয়টি সুদর্শন চক্র।
বিষ্ণুর কঠিন তপস্যা ও মহাদেবের উপহার
পুরাণের অন্য একটি গল্প অনুসারে একবার অসুররা স্বর্গ আক্রমণ করে দেবতাদের হারিয়ে দেয়। তখন বিষ্ণুও অসুরদের হাত থেকে স্বর্গ রক্ষা করতে পারেননি। তখন তিনি হাজার পদ্মফুল দিয়ে মহাদেবের পুজো করেন। শিব মজা করে একটি পদ্মফুল লুকিয়ে ফেলেন। একটি ফুল কম দেখে বিষ্ণু নিজের একটি চোখ উপড়ে মহাদেবকে অর্পণ করতে যান। তখন শিব তাঁকে নিরস্ত করেন এবং সুদর্শন চক্র তাঁকে উপহার দেন। এই চক্র দিয়েই নারায়ণ অসুরদের ধ্বংস করেন।
সুদর্শন চক্র ও কৃষ্ণের অস্ত্ররূপে ব্যবহার
মহাভারত অনুসারে কৃষ্ণ ও অর্জুন অগ্নিদেবকে খাণ্ডব বন দাহ করতে সাহায্য করেছিলেন। তখন অগ্নি কৃষ্ণকে সুদর্শন চক্র উপহার দেন। আবার এক জায়গায় বলা আছে যে পরশুরাম কৃষ্ণকে সুদর্শন চক্র উপহার দিয়েছিলেন।
সুদর্শন চক্রের অলৌকিক ক্ষমতা ও গতি
সুদর্শন চক্রের বিশেষত্ব হল যে এটি মনের গতিতে চলে এবং শত্রুকে ধ্বংস করে তবেই আঙুলে ফিরে আসে। যাঁকে উদ্দেশ্য করে সুদর্শন চক্র ছোঁড়া হবে, গোটা বিশ্বে কোনও স্থানেই তিনি লুকিয়ে পার পাবেন না। পুরাণ অনুসারে এক সেকেন্ডে কয়েক লক্ষ বার ঘুরতে পারে সুদর্শন চক্র। চোখের পলক ফেলার মধ্যেই এটি কয়েক লক্ষ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। এর ওজন প্রায় ২২০০ কেজি বলে মনে করা হয়। এর ব্যাস ১২-৩০ সেন্টিমিটারের মধ্যে। ব্রহ্মাস্ত্রের থেকেও এই অস্ত্র কয়েক গুণ বেশি ক্ষমতাশালী বলে মনে করা হয়।