সবই টাকার খেল! রিয়েলিটি শো-এর এবার সব কুকীর্তি ফাঁস করে দিলেন কৈলাস খের!

Spread the love

বর্তমানে টেলিভিশন ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নানান ধরনের রিয়েলিটি শো প্রচারিত হয়, যা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গানের প্রতিযোগিতা, নাচের লড়াই, কমেডি শো থেকে শুরু করে আরও নানা ধরনের রিয়েলিটি শো এখন বিনোদনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের এবং নাচের রিয়েলিটি শো। অনেক নতুন প্রতিভাবান শিল্পী এসব শো থেকে উঠে আসেন, রাতারাতি তারকা হয়ে যান। কিন্তু এসব রিয়েলিটি শো কি সত্যিই ‘রিয়েল’? না কি এর আড়ালে চলে কোটি কোটি টাকার খেলা?

শুধু সাধারণ দর্শকরাই নন, ইদানিং অনেক তারকাও এসব রিয়েলিটি শোর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কিছুদিন আগেই গায়িকা সুনিধি চৌহান দাবি করেছিলেন, এসব শোতে সত্যিকারের প্রতিভার চেয়ে নাটকীয়তা বেশি থাকে। এবার একই অভিযোগ তুললেন জনপ্রিয় গায়ক কৈলাস খের। তিনি তো আরও এক ধাপ এগিয়ে বললেন, এই রিয়েলিটি শোগুলোর আসল উদ্দেশ্যই কিছু বড় বড় নামের বিনিয়োগকে সুরক্ষিত রাখা।

কেন বিচারক হলেন না কৈলাস খের?

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে কৈলাস খেরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন তাকে কোনও রিয়েলিটি শোতে বিচারকের আসনে দেখা যায় না? এর উত্তরে তিনি বলেন, “এই রিয়েলিটি শো গুলো আদতে গানের শো নয়, এগুলো ব্যবসা। সিনেমার গানের প্রচার করতেই এসব শো বানানো হয়। আর বিনিয়োগকারীরা এই শোগুলোর মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসা চালান।”

কৈলাস খের আরও বলেন, “ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বড় বড় নাম এসব শোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। তাদের নিজেদের স্বার্থ আছে। এখানে সত্যিকারের গানের চেয়ে বাজারের খেলা বেশি চলে। যারা এসব শোর মাধ্যমে নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করার দাবি করেন, তারাই আসলে সব নিয়ন্ত্রণ করেন।”

কৈলাস খের সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, “এই রিয়েলিটি শোগুলোকে গানের শো বলা হলেও, আদতে এসব কেবল ফিল্মি মিউজিকের প্রচার মাধ্যম। এখানে আসল গানের কোনও গুরুত্ব নেই। একে তো প্লেব্যাক গানের উপর বেশি জোর দেওয়া হয়, তার ওপর প্রতিযোগীদের দিয়ে যা খুশি গাওয়ানো হয়, যা দর্শকদের আবেগের সঙ্গে খেলে।”

তিনি আরও বলেন, “যারা আসল গানের শিল্পী, তারা এখানে টিকতে পারেন না। এখানে সব সাজানো গল্প চলে। বিচারকেরাও বাধ্য থাকেন অনেক কিছু করতে। অনেক সময় এমন কিছু প্রতিযোগীদের এগিয়ে দেওয়া হয়, যাদের বাস্তবে বড় মঞ্চের জন্য প্রস্তুতই নয়।”

সুনিধি চৌহানের বিস্ফোরক অভিযোগ

শুধু কৈলাস খের নন, কিছুদিন আগেই গায়িকা সুনিধি চৌহানও একই কথা বলেছিলেন। তিনি ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এর বিচারক ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি নিজেই সেই শো ছেড়ে দেন। কারণ কী?

সুনিধি জানান, “প্রথম দুই বছর ‘ইন্ডিয়ান আইডল’ পুরোপুরি খাঁটি ছিল। সত্যিকারের প্রতিভাদের জায়গা দেওয়া হত, কোনও নাটক ছিল না। কিন্তু তারপর থেকে সব কিছু বদলে যেতে শুরু করে। এখন প্রতিটি মুহূর্ত সাজানো। প্রতিযোগীদের আবেগ দেখিয়ে দর্শকদের মন জয় করার চেষ্টা করা হয়। কিছু প্রতিযোগীকে ইচ্ছে করে এগিয়ে দেওয়া হয়।”

তিনি আরও জানান, “আমাকে বিচারক হিসেবে বলা হয়েছিল, কিছু প্রতিযোগীদের প্রশংসা করতে, যদিও আমি তাদের পারফরম্যান্স ভালো পাইনি। তখনই আমি বুঝতে পারি, এটা সত্যিকারের প্রতিযোগিতা নয়, বরং একটা ব্যবসার অংশ।”

২০০৯ সালে বিচারের আসনে কৈলাস খের

কৈলাস খের নিজেও ২০০৯ সালে ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এর বিচারক ছিলেন। জাভেদ আখতার, অনু মালিক ও সোনালী বেন্দ্রের সঙ্গে তিনি বিচারকের আসনে বসেছিলেন। তখনও তিনি বুঝতে শুরু করেন, এখানে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রিত হয়। এরপর তিনি আরও কয়েকটি রিয়েলিটি শোতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকলেও ধীরে ধীরে তিনি এসব শো থেকে দূরে সরে যান।

গত ১৫ বছর ধরে তিনি কোনও রিয়েলিটি শোর বিচারক হননি। তিনি বলেছেন, “আমি গানের মানুষ, আমি শিল্পী। ব্যবসার এই গেমের অংশ হতে চাই না। তাই আমি ইচ্ছে করেই এসব শো থেকে দূরে থাকি।”

তিনি আরও বলেন, “এগুলো এখন কেবল টাকা বানানোর মেশিন। প্রতিযোগীদের দিয়ে যা খুশি করানো হয়, তাদের দিয়ে আবেগের নাটক করানো হয়, যা আসলে গানের সঙ্গে সম্পর্কহীন। আসল প্রতিভারা অনেক সময় হারিয়ে যায়। তারা আলোচনায় আসে না, কারণ তারা এসব নাটকের অংশ হতে চায় না।”

তাহলে রিয়েলিটি শো কি মিথ্যা?

এই প্রশ্নের উত্তর একেকজনের কাছে একেক রকম। কিছু দর্শক এখনও বিশ্বাস করেন, রিয়েলিটি শো প্রতিযোগীদের জীবনে বড় পরিবর্তন আনে। অনেকে বলেন, এসব শো না থাকলে অনেক প্রতিভাবান মানুষ উঠে আসতে পারতেন না।

কিন্তু তারকাদের বক্তব্য যদি সত্যি হয়, তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়— এসব শো কি প্রতিযোগীদের ভবিষ্যত গড়ে তুলতে তৈরি নাকি বড় বড় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে?

কৈলাস খের, সুনিধি চৌহান এবং আরও অনেক শিল্পীর অভিযোগ অনুযায়ী, এগুলোর মূল উদ্দেশ্য ব্যবসা। প্রকৃত প্রতিভার চেয়ে ক্যামেরার সামনে কে কেমন দেখতে লাগছে, কে কতটা আবেগ দেখাতে পারছে, সেটাই বেশি গুরুত্ব পায়।

অনেক সমালোচনা সত্ত্বেও রিয়েলিটি শো-এর জনপ্রিয়তা এখনও কমেনি। দর্শকরা এখনও এই শোগুলো দেখেন, প্রতিযোগীদের জন্য ভোট দেন, আবেগে ভাসেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়— যদি সবকিছুই আগে থেকে নির্ধারিত হয়, তাহলে দর্শকদের ভোটের মূল্য কতটুকু?

অনেকেই মনে করেন, যদি সত্যিকারের প্রতিযোগিতা চালাতে হয়, তাহলে এসব শো-এর নিয়ম পাল্টানো দরকার। বিচারকদের স্বাধীনভাবে মত দেওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। প্রতিযোগীদের সত্যিকারের প্রতিভার বিচার হতে হবে, কেবল আবেগের উপর নয়।

কৈলাস খেরের মতো একজন বড় মাপের শিল্পী যখন বলেন, রিয়েলিটি শোগুলো কেবল ব্যবসা, তখন বিষয়টি একবার ভাবারই হয়। তিনি ১৫ বছর ধরে এসব শো থেকে দূরে আছেন কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, এখানে সত্যিকারের গানের কোনও মূল্য নেই।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সত্যিই কি এসব শোতে প্রতিযোগীদের প্রতিভার মূল্য দেওয়া হয়? নাকি কোটি কোটি টাকার খেলার মধ্যে সব হারিয়ে যাচ্ছে? সাধারণ দর্শক কি সত্যিটা জানেন? নাকি তারা যা দেখানো হয়, সেটাই বিশ্বাস করতে বাধ্য হন?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ভবিষ্যতই দেবে। তবে একের পর এক শিল্পী যখন এসব শোর অন্ধকার দিক ফাঁস করছেন, তখন বিষয়টি অবশ্যই ভাবার মতো!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *