India’s Got Latent: রণবীর আলহাবাদীয়া ও সামাই রায়নার নয়া কেচ্ছা সামনে!

Spread the love

ভারতে ডিজিটাল কনটেন্টের জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন অনলাইন রিয়েলিটি শো মানুষের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছে। এরকমই একটি শো হল ‘ইন্ডিয়াজ গট ল্যাটেন্ট’, যেখানে প্রতিযোগীরা তাদের অদ্ভুত ও মজার প্রতিভা প্রদর্শন করেন। কিন্তু সম্প্রতি এই শো নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। শো-এর বিচারক ও অংশগ্রহণকারীদের কিছু মন্তব্য এবং উপস্থাপনা নিয়ে আইনি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, যা শো-এর ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

‘ইন্ডিয়াজ গট ল্যাটেন্ট’ ইউটিউবে সম্প্রচারিত একটি রিয়েলিটি শো, যা ভারতীয় প্রতিযোগীদের অদ্ভুত ও হাস্যকর প্রতিভা প্রদর্শনের জন্য একটি মঞ্চ প্রদান করে। এই শো-এর মূল লক্ষ্য হল মজার, ব্যতিক্রমী এবং কখনও কখনও অপ্রচলিত প্রতিভাকে তুলে ধরা। শো-এর ফরম্যাট জনপ্রিয় টেলিভিশন রিয়েলিটি শো ‘ইন্ডিয়াজ গট ট্যালেন্ট’ থেকে অনুপ্রাণিত হলেও, এখানে প্রতিযোগীদের প্রতিভার ধরন সম্পূর্ণ ভিন্ন।

এই শো-এর বিচারকদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রিয় র‌্যাপার রাফতার, কৌতুক অভিনেতা অতুল খত্রি, এবং কমেডিয়ান নীতি পাল্টা। এছাড়া শো-এর সঞ্চালক হিসেবে রয়েছেন কৌতুক অভিনেতা সময় রায়না, যিনি তার অনন্য রসবোধের জন্য পরিচিত।

শো-এর বৈশিষ্ট্য

প্রতিযোগীরা এখানে তাদের অদ্ভুত এবং মজার প্রতিভা প্রদর্শন করেন।

বিচারকরা বিভিন্ন প্রতিযোগীদের পারফরম্যান্স নিয়ে রসিকতা করেন এবং মন্তব্য করেন।

শো-এর ভাষা বেশ অনানুষ্ঠানিক, যেখানে অনেক সময় খোলামেলা আলোচনা ও মজার মন্তব্য করা হয়।

এটি ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচারিত হওয়ায় এখানে টেলিভিশন সেন্সরশিপের বাধা নেই, ফলে ভাষার ব্যবহার ও বিষয়বস্তু অনেক সময় নির্দ্বিধায় উপস্থাপিত হয়।

বিতর্ক ও আইনি অভিযোগ

‘ইন্ডিয়াজ গট ল্যাটেন্ট’ শো সম্প্রচারের পর থেকেই কিছু বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তবে সম্প্রতি এটি আরও বড় আকার ধারণ করেছে।

মুম্বাইয়ের বান্দ্রা আদালতে ইউটিউবার রণবীর আল্লাহবাদিয়া (যিনি ‘বিয়ারবাইসেপস’ নামেও পরিচিত) এবং কমেডিয়ান সময় রায়নার বিরুদ্ধে অশ্লীলতা ও অনৈতিক বিষয়বস্তুর প্রচারের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এই অভিযোগটি করেছেন ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া (NSUI)-এর সদস্য নিখিল রূপারেল। অভিযোগে বলা হয়েছে যে, ‘ইন্ডিয়াজ গট ল্যাটেন্ট’ শো-তে বিচারক ও প্রতিযোগীরা নিয়মিতভাবে অশ্লীল ভাষা ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, যা সমাজের নৈতিকতার পরিপন্থী।

বিশেষত, একটি পর্বে রণবীর আল্লাহবাদিয়া এক প্রতিযোগীকে জিজ্ঞাসা করেন –

“আপনি কি আপনার বাবা-মাকে সারা জীবন যৌনমিলন করতে দেখবেন, নাকি একবার তাদের সাথে যোগ দিয়ে এটি চিরতরে বন্ধ করবেন?”

এই মন্তব্যটিই সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৬ (অশ্লীল কার্যকলাপ) এবং ৩৫২ (ইচ্ছাকৃত অপমান) ধারাসহ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা দায়েরের অনুরোধ করা হয়েছে।

এছাড়া, বিজেপি সদস্য নীলোৎপল মৃণাল পাণ্ডে খার থানায় রণবীর আল্লাহবাদিয়া, সময় রায়না, আশীষ চঞ্চলানি এবং শো-এর অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগে পৃথক মামলা দায়ের করেছেন। এই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলেছেন, এটি শুধুমাত্র অশালীন নয়, বরং সংস্কৃতি ও পারিবারিক মূল্যবোধের বিরোধী।

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া:

  • অল ইন্ডিয়া সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন (AICWA) শো-এর সম্প্রচার বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে।
  • মহারাষ্ট্র মহিলা কমিশন শো-এর বিষয়বস্তুকে আপত্তিকর বলে চিহ্নিত করেছে এবং মুম্বাই পুলিশকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
  • কিছু ইউটিউব ক্রিয়েটর এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার শো-এর বিচারকদের ভাষার ব্যবহার নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন।

অনেকেই বলছেন যে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নৈতিকতার প্রশ্ন উঠছে।

সমালোচনার মুখে পড়ে রণবীর আল্লাহবাদিয়া একটি ক্ষমাপ্রার্থনা বার্তা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন –

“আমার মন্তব্য শুধু অনুপযুক্তই নয়, এটি মোটেও মজার ছিল না। কমেডি আমার শক্তি নয়। আমি শুধু ক্ষমা চাইতে এসেছি।”

“আমি কখনও পরিবার বা সমাজের নৈতিকতাকে অসম্মান করতে চাইনি। আমি বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত এবং ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।”

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস এই বিতর্ক নিয়ে মন্তব্য করেছেন –

“আমি এ সম্পর্কে অবগত হয়েছি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকলেও আমাদের কিছু সামাজিক দায়িত্বও আছে। যদি কেউ নীতি লঙ্ঘন করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এই বিতর্কের ফলে ‘ইন্ডিয়াজ গট ল্যাটেন্ট’ শো-এর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।

অল ইন্ডিয়া সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন শো বয়কট করার ঘোষণা দিয়েছে।

মুম্বাই পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।

ইউটিউব নীতিমালার আওতায় শো-এর কয়েকটি এপিসোড ডিমোনেটাইজ করা হয়েছে এবং কিছু অংশ সেন্সর করা হয়েছে।

এই বিতর্কটি কেবলমাত্র একটি শো-কে কেন্দ্র করে নয়, বরং বৃহত্তর পরিসরে ডিজিটাল কনটেন্টের নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

ইউটিউবে কনটেন্ট সেন্সর করার দরকার আছে কি?

কমেডির নামে অশ্লীলতা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

ভারতের আইন ও সামাজিক মূল্যবোধের সাথে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সামঞ্জস্য কতটা আছে?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখন খোঁজা হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে এই বিতর্ক ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
‘ইন্ডিয়াজ গট ল্যাটেন্ট’ একদিকে যেমন মানুষের জন্য বিনোদনের উৎস, অন্যদিকে এই বিতর্ক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সীমা ও নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে ধরেছে। আইনি ব্যবস্থা এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়ার পরিণতি কী হবে, তা এখন দেখার বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *