ভারত, আমেরিকা এবং চীনের রাজনৈতিক সম্পর্ক একটি জটিল এবং পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটের মধ্যে বিকশিত হয়েছে। এই তিন দেশের মধ্যে সম্পর্কের গতিবিধি কেবল তাদের নিজস্ব স্বার্থের উপর নির্ভর করে না, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটেও প্রভাবিত হয়।
ভারত ও চীনের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত বিরোধ, বাণিজ্য অসমতা এবং পাকিস্তানের সাথে চীনের কৌশলগত অংশীদারিত্বের কারণে উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পর এই সম্পর্ক আরও খারাপ হয়ে যায়। তবে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে একটি সামরিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়, যা ২০২৫ সালে সম্পর্কের উন্নতির সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে রাশিয়ার ব্রিকস সম্মেলনে বৈঠক হয়, যা দুই দেশের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনার সূচনা করে।
অন্যদিকে, ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কও শক্তিশালী হচ্ছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাম্প্রতিক মার্কিন সফর এবং সেখানে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকগুলি এই সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে। মার্কিন প্রশাসন ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখতে শুরু করেছে, যা ভারতকে প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সুযোগ প্রদান করছে। এই প্রেক্ষাপটে, ট্রাম্প প্রশাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ভারত-আমেরিকা সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে।
চীন এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক বৃদ্ধি পেলে তা তাদের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে। চীন মনে করে যে ভারত যদি আমেরিকার প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ে, তাহলে তা তাদের জন্য একটি বড় সমস্যা সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে যখন আমেরিকা চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করছে।
এই তিন দেশের মধ্যে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে তাদের কৌশলগত স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির উপর। ২০২৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির চীন সফরের সম্ভাবনা এবং দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ সমাধানের প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে, এই সম্পর্কগুলি স্থিতিশীল রাখতে হলে সকল পক্ষকে একে অপরের স্বার্থকে সম্মান করতে হবে এবং সহযোগিতামূলক মনোভাব গ্রহণ করতে হবে।
সুতরাং, ভারত, আমেরিকা ও চীনের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক একটি জটিল সমীকরণ, যেখানে প্রতিটি দেশের স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির পরিবর্তনশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চিনের অর্থনৈতিক আধিপত্যের দিন কি শেষের পথে? সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে এবং এতে বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে চিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির ফলে চিনের বিরুদ্ধে আমেরিকার কড়াকড়ি বাড়তে থাকায় ভারতের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আমেরিকায় ভারতের রফতানি ৫.৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৯.৯৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। শুধু ডিসেম্বরে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৮.৪৯ শতাংশ, যেখানে মোট শিপমেন্ট ৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। অপরদিকে, আমেরিকা থেকে ভারতের আমদানির পরিমাণও ১.৯১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩.৪ বিলিয়ন ডলারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী মাসগুলোতে ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে, যা চিনের জন্য এক অশনিসংকেত।
এই মুহূর্তে ভারত ও আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৯৩.৪ বিলিয়ন ডলার, যা প্রায় চিন-আমেরিকা বাণিজ্যের সমান। তবে চিনের বিরুদ্ধে আমেরিকার কৌশলগত পদক্ষেপ ও শুল্ক নীতির কড়াকড়ি বাড়ার ফলে ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকা ও চিনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য দ্বন্দ্বের ফলে ভারতের জন্য বিশাল রফতানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ভারতের মোট পণ্য রফতানির ১৮ শতাংশই আমেরিকায় যাচ্ছে, যা আগামী দিনে আরও বাড়তে পারে। পাশাপাশি, আমেরিকা থেকে ভারতের আমদানির পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করছে।
তবে এই পরিস্থিতিতে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। মার্কিন প্রশাসন যদি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে, তবে তা ভারতের রফতানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে যে, ভারত বেশ কিছু আমেরিকান পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছে এবং এই কারণে আমেরিকাও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি চিনের জন্য বড়সড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে, আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে, চিনের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক বৃদ্ধির ফলে তাদের বাণিজ্যিক পরিধি সংকুচিত হচ্ছে। চিন দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার প্রধান বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে পরিচিত থাকলেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে যে, ভারত এই জায়গায় দ্রুত এগিয়ে আসছে।
বিশ্ব বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তনের ফলে ভারতের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে যাচ্ছে। যদি ভারত এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাণিজ্য নীতি ঠিকঠাক পরিচালনা করতে পারে, তবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই চিনকে টপকে আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠতে পারে। এখন দেখার বিষয়, ভারত কীভাবে এই সাফল্যকে ধরে রাখে এবং কীভাবে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিনের ওপর শুল্ক আরোপের প্রসঙ্গের আবহেই ভারতের জন্য এক বড় সুখবর সামনে এসেছে যা নিঃসন্দেহে চিনের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হবে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আমেরিকায় ভারতের রফতানির পরিমাণ ৫.৫৭ শতাংশ বেড়ে ৫৯.৯৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। মূলত, আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এই রফতানি বেড়েছে। ডিসেম্বরে শিপমেন্টের পরিমাণ ৮.৪৯ শতাংশ বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে বলে জানা গিয়েছে যা ভারতের বাণিজ্যের জন্য এক ইতিবাচক দিক।

ভারতের রফতানির পাশাপাশি আমদানির পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪-২৫ সালের প্রথম ৯ মাসে আমদানি ১.৯১ শতাংশ বেড়ে ৩৩.৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ডিসেম্বরে আমদানির পরিমাণ ৯.৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩.৭৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতা দেখে অনুমান করা হচ্ছে যে আগামী মাসগুলোতে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও বাড়বে। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আমেরিকা ও ভারতের মোট দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৯৩.৪ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভারত ও চিনের মধ্যে একই সময়ে এই পরিসংখ্যান ছিল ৯৪.৬ বিলিয়ন ডলার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকা ও চিনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য দ্বন্দ্ব ভারতীয় রফতানিকারীদের জন্য বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করছে। ট্রাম্প প্রশাসন চিনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে আমেরিকায় ভারতীয় পণ্যের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে আমেরিকা ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে উঠে এসেছে। ভারতের মোট পণ্য রফতানির প্রায় ১৮ শতাংশই আমেরিকায় রফতানি হয়। পাশাপাশি, আমেরিকা থেকে ভারতের আমদানির হার ৬ শতাংশের বেশি, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রায় ১১ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রবণতা আগামী দিনে ভারতের অর্থনীতিকে আরও মজবুত করবে এবং আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
তবে এই পরিস্থিতিতে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, আমেরিকা যদি কিছু ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে তবে তা ভারতের রফতানিতে প্রভাব ফেলতে পারে। গত বছরের ডিসেম্বরে ট্রাম্প বলেছিলেন যে, ভারত বিভিন্ন আমেরিকান পণ্যের ওপর প্রচুর শুল্ক আরোপ করছে যা আমেরিকার জন্য ক্ষতিকর। তিনি ভারত কর্তৃক আরোপিত শুল্কের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কিছু আমেরিকান পণ্যের আমদানিতে শুল্ক বসানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
ভারতের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক সাফল্য চিনের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমেরিকা-চিন দ্বন্দ্বের কারণে যদি আমেরিকার সঙ্গে চিনের বাণিজ্য কমে যায় তবে তার সরাসরি প্রভাব ভারতীয় বাণিজ্যে পড়বে এবং এটি ভারতের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ হয়ে উঠবে। তবে ভারতকে অবশ্যই বাণিজ্যিক কৌশল ঠিক রেখে আগাম পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় থাকে।
বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান এখন আরও শক্তিশালী হচ্ছে এবং এটি ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হলে নীতি নির্ধারণীদের আরও কৌশলী পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও মজবুত হয়, তবে ভারতের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে ভারতের উপস্থিতি আরও সুসংহত হবে।