ব্রেকআপ হওয়ার পরেও বন্ধুত্ব রাখতে চান? ভুল করছেন না তো? জেনে নিন

Spread the love

পুরনো প্রেম এবং সেই প্রেমের যাবতীয় মানসিক বোঝা ভুলে কি সত্যিই দু’জন প্রাক্তন প্রেমিক এবং প্রেমিকা বন্ধু হতে পারেন! সেই বন্ধুত্বে কি কখনও পুরনো স্মৃতি চলে এসে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করবে না?

প্রেমের সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়া মানে কি একেবারে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়া? অনেকেই মনে করেন, প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা সম্ভব। আবার অনেকের মতে, এটি শুধু কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব। কারণ, এক সময়ে যে সম্পর্ক গভীর রোমান্টিক আবেগ দিয়ে গড়ে উঠেছিল, তা থেকে বেরিয়ে এসে প্রাক্তনকে শুধুমাত্র বন্ধু হিসেবে দেখা বেশ কঠিন হতে পারে।

অবশ্য হলিউড-বলিউডের সিনেমায় আমরা প্রায়ই দেখি, প্রাক্তন প্রেমিক-প্রেমিকারা পরে খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছেন। সিনেমার মতো বাস্তবেও কি এমনটা সম্ভব? মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেদের আবেগ ও পরিস্থিতি নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করা জরুরি। কারণ, এই বন্ধুত্ব সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ভালো বা খারাপ, উভয় রকমের প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বন্ধুত্ব করার আগে নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

কেন প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চান?

প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কেন প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখতে চাইছেন? এটি কি সত্যি একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করার জন্য, নাকি আপনার ভেতরে এখনও পুরোনো সম্পর্ক ফিরিয়ে আনার কোনো ইচ্ছা বা আশা রয়ে গেছে? মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি বন্ধুত্বের কারণ হয় মানসিক নির্ভরতা বা প্রাক্তনকে ফেরানোর চেষ্টা, তাহলে এটি আপনার জন্য স্বাস্থ্যকর হবে না।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিচ্ছেদের পরে একাকিত্বের কারণে প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চান মানুষ। কিন্তু এটি আসলে আপনাকে আরও হতাশ করে তুলতে পারে। তাই আগে নিজের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করুন।

পর্যাপ্ত সময় কেটেছে তো?

বিচ্ছেদের পর প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইলে আপনাকে এই প্রশ্নটি করতে হবে। সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর মানসিক আঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক সময় লাগে। কারও ক্ষেত্রে এটি কয়েক মাস, আবার কারও ক্ষেত্রে কয়েক বছরও লাগতে পারে। যদি আপনার মনে হয়, এখনও সেই ক্ষত শুকোয়নি, তবে বন্ধুত্ব করার কথা ভাববেন না।

মনোবিদদের মতে, আগে নিজেকে সময় দিন। নিশ্চিত হন যে, আপনি পুরোনো রোমান্টিক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছেন এবং সেই সম্পর্কের সমাপ্তি মেনে নিতে পেরেছেন। না হলে এই বন্ধুত্ব আপনার জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।

কষ্টের স্মৃতি এখনও তাড়া করে কি?

আপনারা কীভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া যদি আঘাতমূলক হয়, তবে সেই স্মৃতি এখনও আপনার মন থেকে মুছে যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে বন্ধুত্বের চেষ্টা করলে পুরোনো আঘাত আবার ফিরে আসতে পারে।

যদি প্রাক্তনের সঙ্গে দেখা করার সময় আপনার ভেতরে পুরোনো কষ্ট জেগে ওঠে, তবে বুঝবেন বন্ধুত্বের সিদ্ধান্ত নেওয়া আপনার জন্য উপযুক্ত নয়।

বন্ধুত্ব কি দুই পক্ষের সম্মতিতে হচ্ছে?

বন্ধুত্ব কখনও একতরফা হতে পারে না। যদি আপনি বন্ধুত্ব করতে চান, কিন্তু প্রাক্তন এটি এড়িয়ে যেতে চান, তাহলে জোর করে সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবেন না।

মনোবিদদের মতে, এ ক্ষেত্রে দু’পক্ষের মধ্যে খোলাখুলি আলোচনা প্রয়োজন। যদি প্রাক্তন রাজি না থাকেন, তবে বন্ধুত্বের চেষ্টা করা অযথা সময় নষ্ট করার মতো হবে।

ব্রেকআপ হওয়ার পরেও বন্ধুত্ব রাখতে চান ভুল করছেন না তো জেনে নিন (2)

বন্ধুত্বের জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক সমতা রয়েছে কি?

বন্ধুত্ব এবং প্রেমের মধ্যে বড় পার্থক্য হল মানসিক সমতা। প্রেমে অনেক সময় না বলা কথাও বোঝা যায়। কিন্তু বন্ধুত্বে সেই জায়গায় পারস্পরিক বোঝাপড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি যদি দেখেন, আপনারা কথা বলার মতো বিষয় খুঁজে পাচ্ছেন না, বা কথার প্রসঙ্গ বারবার পুরোনো সম্পর্কের দিকে চলে যাচ্ছে, তাহলে বুঝবেন বন্ধুত্ব সম্ভব নয়।

আপনার কি অন্য বন্ধু আছে?

যদি আপনার প্রাক্তন একমাত্র বন্ধু হন, তবে এটি আরও জটিল হতে পারে। প্রেমের সম্পর্কে থাকা অবস্থায় আমরা প্রায়ই সবকিছু নিয়ে বিশেষ মানুষটির সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু বন্ধুত্বে এই সমীকরণ বদলে যায়।

তাই নিজের জীবনে অন্য বন্ধুদের গুরুত্ব দিন। দেখুন, আপনি কি অন্য কারও কাছে নিজের সমস্যার কথা বলতে পারেন? যদি প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব আপনার জন্য একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায়, তবে এটি স্বাস্থ্যকর হবে না।

প্রাক্তনের নতুন সম্পর্ক মেনে নিতে পারবেন কি?

প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার সময় এই প্রশ্নটি অবশ্যই নিজেকে করুন। যখন আপনার প্রাক্তন একা থাকবেন, তখন হয়তো বন্ধুত্ব স্বাভাবিক মনে হবে। কিন্তু যদি তিনি নতুন সম্পর্কে যান, তখন আপনার মনের অবস্থা কী হবে?

নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, আপনি কি সেই সম্পর্ককে মেনে নিতে পারবেন? যদি উত্তর না হয়, তাহলে প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা ভালো।

ব্রেকআপ হওয়ার পরেও বন্ধুত্ব রাখতে চান ভুল করছেন না তো জেনে নিন (1)

আপনার বর্তমান সঙ্গীর প্রতিক্রিয়া কেমন হবে?

আপনার যদি নতুন সঙ্গী থাকে, তবে তাঁর মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি প্রাক্তনের সঙ্গে আপনার বন্ধুত্বে অস্বস্তি বোধ করেন, তাহলে সেই সম্পর্ক আপনার বর্তমান জীবনে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। খোলাখুলি আলোচনা করুন এবং তাঁর মনের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করুন।

সম্পর্ক আগের মতো হবে না, তা মেনে নিতে পারবেন?

প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বুঝে নিন, সেই সম্পর্ক আর আগের মতো হবে না। একান্তে দেখা করা বা দীর্ঘসময় একসঙ্গে কাটানো এড়িয়ে চলুন। মনোবিদরা বলছেন, বন্ধুত্ব রাখার ক্ষেত্রে দলগত মেলামেশা ভালো। এতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়ানো যায়।

সীমারেখা টানতে পারবেন কি?

বন্ধুত্বের জন্য সীমারেখা থাকা অত্যন্ত জরুরি। একে অপরের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি অযথা হস্তক্ষেপ এড়িয়ে চলুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কি সেই সীমারেখাগুলি বজায় রাখতে পারবেন? যদি দেখেন, একা দেখা করলে পুরোনো আবেগ ফিরে আসতে পারে, তবে সেই পরিস্থিতি এড়িয়ে চলাই ভালো।

বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখুন:

  • পুরোনো স্মৃতি থেকে দূরে থাকুন: বন্ধুত্বের সময় পুরোনো স্মৃতি এড়িয়ে চলুন। এটি নতুন বন্ধুত্বের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
  • নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করুন: পুরোনো সম্পর্কের আবেগ আপনার বন্ধুত্বের মধ্যে জায়গা করে নিতে দেবেন না।
  • নতুন সঙ্গীকে সব জানুন: যদি আপনি নতুন সম্পর্কে থাকেন, তবে প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা নতুন সঙ্গীকে জানানো উচিত।

প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা অসম্ভব নয়, তবে এর জন্য মানসিক প্রস্তুতি এবং পরিপক্বতা প্রয়োজন। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেকে কিছু কঠিন প্রশ্ন করুন এবং সঠিক উত্তর খুঁজুন। যদি মনে করেন, পুরোনো সম্পর্কের বোঝা ভুলে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোতে পারবেন, তবেই বন্ধুত্ব সম্ভব। অন্যথায়, এ বিষয়ে আরও ভাবনাচিন্তা করা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *