আমিষ খাওয়া কি সত্যিই পাপের? গরুড় পুরাণ যা বলছে তা শুনলে গায়ে কাঁটা দেবে!

Spread the love

গরুড় পুরাণ হিন্দু ধর্মের অন্যতম আঠারোটি মহাপুরাণের একটি। এটি প্রধানত বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বিষ্ণু মহাত্ম্য, জীবন-মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থা, পাপ ও পুণ্যের ফল, যমরাজের বিচার প্রক্রিয়া, আত্মার পরিণতি, সদ্গতি লাভের উপায় ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। গরুড় পুরাণ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, এটি জীবনের নৈতিক দিক, আধ্যাত্মিক শিক্ষা এবং পরলোকগত অবস্থার একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করে। এই পুরাণ মূলত বিষ্ণুর বাহন গরুড়ের নামে নামাঙ্কিত, এবং এতে বিষ্ণুর উপাসনা ও গুণগান বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

গরুড় পুরাণের রচনা সম্পর্কে মনে করা হয় যে, এটি মহর্ষি ব্যাসদেব কর্তৃক সংকলিত হয়েছিল এবং এটি মূলত বিষ্ণুর বাহন গরুড়ের নামে নামাঙ্কিত। এই পুরাণে শ্রীবিষ্ণুর গুণ, লীলা, উপাসনা, মৃত্যুর পরবর্তী জীবন এবং বিভিন্ন ধর্মীয় নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে। গরুড় পুরাণকে দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
আচার সংহিতা (পূর্বখণ্ড), এতে ধর্ম, পূজা-পদ্ধতি, ব্রত, বিভিন্ন দেবতার মাহাত্ম্য, তীর্থস্থানের গৌরব, যজ্ঞ, হোম ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রেত সংহিতা (পরবর্তীকাণ্ড), এই অংশে মৃত্যুর পরবর্তী জীবন, আত্মার যাত্রা, যমরাজের আদালত, স্বর্গ ও নরকের বিবরণ, বিভিন্ন পাপ ও তার শাস্তি ইত্যাদির বিশদ বিবরণ রয়েছে।
গরুড় পুরাণে আমিষ খাবার সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি, উল্লেখ আছে যে, কোনো প্রাণী হত্যা করে তার মাংস খাওয়া নৈতিকভাবে ভুল এবং ধর্মীয়ভাবে গুরুতর পাপ। এটি অহিংসা এবং সংযমের দর্শনের ওপর গুরুত্ব দেয় এবং নিরামিষ আহার গ্রহণের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে।

শ্রীকৃষ্ণ ও শিকারির গল্প, গরুড় পুরাণের অন্যতম জনপ্রিয় গল্প হল শ্রীকৃষ্ণ এবং এক শিকারির কথোপকথন। একবার শ্রীকৃষ্ণ যমুনার তীরে বসে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন, তখন এক আতঙ্কিত হরিণ তাঁর কাছে ছুটে এসে আশ্রয় নেয়। কিছুক্ষণ পর এক শিকারি এসে শ্রীকৃষ্ণকে জানায় যে, সে হরিণটি শিকার করতে চায়।

শ্রীকৃষ্ণ তখন তাকে বোঝানোর জন্য একটি গল্প বলেন। তিনি মগধ রাজ্যের এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কথা বলেন, যেখানে খাদ্য সংকট দেখা দিলে এক মন্ত্রী রাজাকে আমিষ খাবারের প্রচলন বাড়ানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তখন এক অভিনব কৌশলের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেন যে, মাংস কতটা দুষ্প্রাপ্য এবং মূল্যবান। এই গল্প থেকে শিক্ষা পাওয়া যায় যে, নিরামিষ খাবার গ্রহণ করা সহজ এবং শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের অন্যতম পথ।
গরুড় পুরাণ অনুযায়ী আমিষ আহারের ফল, যে ব্যক্তি আমিষ খাবার গ্রহণ করে, সে তার পরবর্তী জন্মে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হয়। এই পুরাণে বলা হয়েছে, প্রাণ হত্যা মহাপাপ কোনো নির্দোষ প্রাণী হত্যা করা শুধু নিষ্ঠুরতা নয়, এটি আত্মার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

অহিংসাই পরম ধর্ম হল জীবহত্যা না করা, কাউকে কষ্ট না দেওয়া, এবং সকলের কল্যাণ কামনা করা শ্রেষ্ঠ ধর্ম।

খাদ্যাভ্যাস মনোভাবকে প্রভাবিত করে: যে ব্যক্তি আমিষ খাবার খায়, তার চিন্তাভাবনাও রুক্ষ ও হিংস্র হয়ে যায়।

পরজন্মের প্রতিফল আমিষ খাবারের কারণে ব্যক্তির আত্মা পরবর্তী জন্মে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে।
গরুড় পুরাণে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কোনো প্রাণী হত্যা করে তার মাংস খাওয়া নৈতিকভাবে অন্যায় এবং ধর্মীয়ভাবে গুরুতর পাপ। এতে অহিংসা এবং সংযমের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং নিরামিষ আহারের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মে জীবহত্যাকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, এবং গরুড় পুরাণেও একই আদর্শের প্রচার করা হয়েছে।

গরুড় পুরাণের অন্যতম জনপ্রিয় গল্প হল শ্রীকৃষ্ণ এবং এক শিকারির কথোপকথন। একবার শ্রীকৃষ্ণ যমুনার তীরে বসে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন, তখন এক আতঙ্কিত হরিণ তাঁর কাছে ছুটে এসে আশ্রয় নেয়। কিছুক্ষণ পর এক শিকারি এসে শ্রীকৃষ্ণকে জানায় যে, সে হরিণটি শিকার করতে চায়।

শ্রীকৃষ্ণ তখন তাকে বোঝানোর জন্য একটি গল্প বলেন। তিনি মগধ রাজ্যের এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কথা বলেন, যেখানে খাদ্য সংকট দেখা দিলে এক মন্ত্রী রাজাকে আমিষ খাবারের প্রচলন বাড়ানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তখন এক অভিনব কৌশলের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেন যে, মাংস কতটা দুষ্প্রাপ্য এবং মূল্যবান। এই গল্প থেকে শিক্ষা পাওয়া যায় যে, নিরামিষ খাবার গ্রহণ করা সহজ এবং শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের অন্যতম পথ।

গরুড় পুরাণ অনুযায়ী আমিষ আহারের ফল, যে ব্যক্তি আমিষ খাবার গ্রহণ করে, সে তার পরবর্তী জন্মে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হয়। এই পুরাণে বলা হয়েছে। প্রাণ হত্যা মহাপাপ কোনো নির্দোষ প্রাণী হত্যা করা শুধু নিষ্ঠুরতা নয়, এটি আত্মার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অহিংসাই পরম ধর্ম জীবহত্যা না করা, কাউকে কষ্ট না দে

ওয়া, এবং সকলের কল্যাণ কামনা করা শ্রেষ্ঠ ধর্ম। খাদ্যাভ্যাস মনোভাবকে প্রভাবিত করে যে ব্যক্তি আমিষ খাবারখায়, তার চিন্তাভাবনাও রুক্ষ ও হিংস্র হয়ে যায়।
পরজন্মের প্রতিফল আমিষ খাবারের কারণে ব্যক্তির আত্মা পরবর্তী জন্মে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে।
নরকের যন্ত্রণা গরুড় পুরাণে বলা হয়েছে যে, যারা নিরীহ প্রাণী হত্যা করে, তাদের মৃত্যু হলে কঠিন নরক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তারা যমরাজের আদালতে কঠিন শাস্তি পায় এবং পুনর্জন্মেও দুর্ভোগের শিকার হয়।
বর্তমান সময়ে খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, নিরামিষ খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য অধিক উপকারী এবং পরিবেশ বান্ধব।

স্বাস্থ্যগত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পাবে নিরামিষ খাদ্য গ্রহণকারী ব্যক্তিদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিরামিষ খাদ্য উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ওজন নিয়ন্ত্রণে নিরামিষ খাদ্যে ফাইবার বেশি থাকায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
দীর্ঘায়ু বৃদ্ধি: নিরামিষ জীবনধারার ফলে গড় আয়ু বৃদ্ধি পায়।

পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমায় প্রাণীজ খাদ্য উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণে কার্বন নির্গত হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। জল সংকট কমায় নিরামিষ খাদ্য উৎপাদনে তুলনামূলকভাবে কম জল প্রয়োজন হয়। জৈব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রাণী হত্যা কমানোর ফলে বাস্তুসংস্থান রক্ষা করা সম্ভব হয়।
গরুড় পুরাণ এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ অনুসারে নিরামিষ আহার গ্রহণের ফলে মানসিক শান্তি, অহিংসা ও আত্মিক উন্নতি ঘটে। আমিষ আহার আত্মাকে কলুষিত করে এবং নেতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি করে।
গরুড় পুরাণে আমিষ খাবার গ্রহণকে পাপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং নিরামিষ জীবনধারার প্রশংসা করা হয়েছে। এটি মূলত অহিংসা ও সংযমের ওপর গুরুত্ব দেয়। বর্তমান যুগেও এই দর্শন প্রাসঙ্গিক, কারণ নিরামিষ খাদ্য স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিবেশের জন্য ভালো।

আমিষ ও নিরামিষের মধ্যে পার্থক্য শুধু খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক বিষয়ও বটে। নিরামিষ খাবার গ্রহণ কেবলমাত্র শারীরিক সুস্থতার জন্য উপকারী নয়, এটি মানুষের মন ও আত্মারও উন্নতি সাধন করে। যারা নিরামিষ জীবনধারা অনুসরণ করেন, তারা অহিংসা, সংযম এবং মানবিকতার দিকে আরও বেশি ঝুঁকে থাকেন। তাই ব্যক্তি বিশেষের পছন্দ থাকলেও, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য নিরামিষ জীবনযাপন শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *