সিয়াং নদীতে ভারতের বৃহত্তম বাঁধ, ভয়ে কাঁপছে চীন! ভারতের নয়া পদক্ষেপে রাতের ঘুম উড়ল চীনের!

Spread the love

সিয়াং নদীতে ভারতের বৃহত্তম বাঁধ : ভারত ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা চলছে। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা এখন শুধু সীমান্ত বা কূটনীতিতে সীমাবদ্ধ নেই, জলসম্পদ নিয়েও দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন বাড়ছে। সম্প্রতি চীন তিব্বতে ইয়ারলুং জাংপো নদীর উপর বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এই প্রকল্পের ফলে ভারতের ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারত অরুণাচল প্রদেশে সিয়াং নদীর উপর দেশের সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এটি শুধু ভারতের জলসম্পদ রক্ষা নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সিয়াং নদীর গুরুত্ব এবং প্রভাব

সিয়াং নদী, যা চীনে ইয়ারলুং জাংপো নামে পরিচিত, হিমালয়ের তিব্বত অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়। এটি ভারতের অরুণাচল প্রদেশ এবং আসামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত হয়। এই নদী উত্তর-পূর্ব ভারতের কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের অন্যতম প্রধান উৎস। নদীর জল সরাসরি কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়, এবং এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা।

চীনের বাঁধ নির্মাণের ফলে সিয়াং নদীর জলপ্রবাহে ব্যাপক পরিবর্তন আসার আশঙ্কা রয়েছে। শুকনো মৌসুমে চীন যদি এই বাঁধে জল সংরক্ষণ করে, তবে ভারতে সেচের জন্য জলের অভাব দেখা দিতে পারে। আবার বর্ষার সময় অতিরিক্ত জল ছেড়ে দিলে হঠাৎ করে বন্যা হতে পারে, যা ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গ্রামাঞ্চলগুলিতে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

চীনের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প: ভারতের জন্য হুমকি

চীন ইয়ারলুং জাংপো নদীর উপর একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণ করছে, যা বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হতে চলেছে। এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৬০,০০০ মেগাওয়াট। চীনের এই প্রকল্প কেবলমাত্র তাদের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করবে না, এটি তাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। তবে ভারতের জন্য এটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

চীনের এই বাঁধ নির্মাণের ফলে ভারতের ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর নির্ভরশীল অঞ্চলে জলসম্পদ সংকট দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন এই বাঁধের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদীর জল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যা ভারতের জন্য কৌশলগত হুমকি তৈরি করবে।

ভারতের পাল্টা পদক্ষেপ: সিয়াং নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারত অরুণাচল প্রদেশে সিয়াং নদীর উপর একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এটি হবে ভারতের সবচেয়ে বড় বাঁধ, যার উচ্চতা হবে ৪৬৫ মিটার এবং যা ৯.২ বিলিয়ন ঘনমিটার জল সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে।

এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হলো:

  • সিয়াং নদীর জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা।
  • চীনের বাঁধ থেকে আসা আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি কমানো।
  • জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো।
  • উত্তর-পূর্ব ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখা।

যে কোনও বড় বাঁধ প্রকল্পের মতো, সিয়াং নদীর উপর এই বাঁধ নির্মাণেরও পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় বাঁধের কারণে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত হতে পারে। এর ফলে নদীর জীববৈচিত্র্য, মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এছাড়া, বাঁধ নির্মাণের জন্য বড় আকারে জমি অধিগ্রহণ এবং বনাঞ্চল কেটে ফেলতে হতে পারে। এর ফলে স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তদুপরি, এই অঞ্চলে ভূমিকম্প প্রবণতা বেশি হওয়ায় এত বড় একটি বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।

তবে ভারত সরকার বলছে যে, প্রকল্পটি পরিবেশগত নিয়ম মেনে এবং যথাযথ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাস্তবায়ন করা হবে। পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় জনজীবনের প্রভাব কমানোর জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় জনগণের উদ্বেগ

সিয়াং নদীর উপর বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। পারং এবং তার আশপাশের অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের জীবিকা মূলত কৃষি ও অরেঞ্জ চাষের ওপর নির্ভরশীল। বাঁধ নির্মাণের জন্য অনেক কৃষিজমি এবং বাড়িঘর অধিগ্রহণ করতে হবে, ফলে বহু পরিবার স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হবে।

স্থানীয়রা দাবি করছে, তাদের পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হোক। অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, বাঁধ নির্মাণ হলে তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা এবং জীবিকার উৎস হারিয়ে যাবে।

ভারত সরকার আশ্বস্ত করেছে যে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামত নিয়ে প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা তৈরি করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

এই বাঁধ প্রকল্পটি শুধুমাত্র চীনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার একটি পদক্ষেপ নয়, এটি ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রকল্পটি নির্মাণের ফলে অরুণাচল প্রদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

বাঁধ থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ দেশের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াবে। এছাড়া, প্রকল্পটির মাধ্যমে অরুণাচল প্রদেশে নতুন অবকাঠামো নির্মাণ হবে, যা এই অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

আন্তর্জাতিক জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং চুক্তি

ব্রহ্মপুত্র নদ একটি আন্তর্জাতিক নদী, যা চীন, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত। এই নদীর জল ব্যবস্থাপনা নিয়ে এখনো তিন দেশের মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট চুক্তি নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই নদীর জল ব্যবহারের জন্য একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একটি কার্যকর চুক্তির মাধ্যমে নদীর জল ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা বাড়ানো সম্ভব। এটি শুধু জলসম্পদ রক্ষার ক্ষেত্রে নয়, তিন দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নেও সহায়ক হবে।

সিয়াং নদীর উপর ভারতের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা শুধুমাত্র চীনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য নয়, দেশের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী করতেও সহায়ক হবে।

তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। স্থানীয় জনগণের উদ্বেগ, পরিবেশগত প্রভাব, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখা—এই সবকিছুই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিবেশ সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে এটি ভারতের জন্য একটি বড় সাফল্য হয়ে উঠবে। এটি শুধু ভারতের জলসম্পদ রক্ষা করবে না, বরং উত্তর-পূর্ব ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *