পেন্টাগনকেও গিলে খাবে! মাটির নিচে এটা ঠিক কী বানাচ্ছে চিন? এবার ফাঁস হয়ে গেল চিনের আসল ফন্দি!

Spread the love

বেইজিং শহরের কাছেই চীন সরকার গোপনে একটি বিশাল সামরিক কমান্ড সেন্টার তৈরি করছে, যা আকারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের চেয়ে ১০ গুণ বড় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর স্যাটেলাইট ইমেজে এই তথ্য উঠে এসেছে। বিশাল এই সামরিক প্রকল্পকে এখন “বেইজিং মিলিটারি সিটি” নামে ডাকা হচ্ছে।

গোপন এই সামরিক ঘাঁটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের এক জায়গায় ১,৫০০ একরের বিশাল এলাকাজুড়ে অসংখ্য গর্ত খোঁড়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই গর্তগুলোর মধ্যেই নির্মিত হবে চীনের সামরিক সদর দপ্তর এবং বাঙ্কারগুলো।

কী থাকবে এই সামরিক ঘাঁটিতে?

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই প্রকল্পে কয়েকশ’ বহুতল ভবন থাকবে, যার মধ্যে থাকবে উন্নত প্রযুক্তির সামরিক দপ্তর, কমান্ড সেন্টার এবং অত্যাধুনিক বাঙ্কার। পারমাণবিক যুদ্ধ বা বড় ধরনের সামরিক হামলার সময় চীনের শীর্ষ রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা এই বাঙ্কারগুলোতে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চীনা গবেষক জানিয়েছেন, পেন্টাগনের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বড় হবে এই সামরিক প্রকল্প। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের স্বপ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে বিশ্বে চীনকে সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এই সামরিক ঘাঁটি সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।

এই সামরিক প্রকল্পের বিষয়ে চীন সরকার খুব সতর্ক। এখন পর্যন্ত প্রকল্প এলাকায় সামরিক কর্মকর্তাদের আনাগোনা তেমনভাবে দেখা যায়নি। তবে প্রকল্প এলাকার ৪ কিলোমিটারের মধ্যে ড্রোন উড়ানো কিংবা ছবি তোলার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। চারপাশে সতর্কবার্তা সংবলিত বোর্ড টাঙানো হয়েছে, যেখানে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে, “নিষিদ্ধ এলাকা – প্রবেশ করা যাবে না।”

প্রকল্প এলাকাটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই কঠোর যে, সাধারণ নাগরিক তো দূরের কথা, সামরিক বাহিনীর বাইরের কেউই প্রকল্প সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাচ্ছে না।

মার্কিন গোয়েন্দারা চীনের এই সামরিক প্রকল্প নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র চীন বিষয়ক বিশ্লেষণ শাখার প্রাক্তন প্রধান ডেনিস ওয়াইল্ডার বলেন,

“যদি সত্যিই এমন বিশাল সামরিক কমান্ড সেন্টার তৈরি করা হয়, তাহলে এটা স্পষ্ট যে, চীন শুধু একটা সাধারণ সেনাবাহিনী তৈরি করতে চায় না। তারা বিশ্বমানের আধুনিক সামরিক প্রযুক্তি ও কৌশলে দক্ষ হয়ে উঠতে চাইছে।”

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, চীন তার সামরিক শক্তি এত দ্রুত বাড়িয়ে তুলছে যে, ২০৩৫ সালের মধ্যে তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার ১,৫০০ ওয়ারহেড ছাড়িয়ে যেতে পারে।

চীনের সামরিক বাজেট ক্রমাগত বাড়ছে

চীনের সামরিক ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। ২০২৩ সালে চীন সামরিক বাজেট ৭.২% বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল, যা প্রায় ১.৫৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ২২৪ বিলিয়ন ডলার)। বিশ্লেষকদের মতে, চীন কৌশলগতভাবে নিজের সামরিক বাজেট বাড়িয়ে যাচ্ছে, যাতে তারা ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে।

চীনের নতুন সামরিক পরিকল্পনার কারণ কী?

বিশ্লেষকদের মতে, এই সামরিক প্রকল্পের পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে –

১. যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিযোগিতা: চীন বরাবরই সামরিক শক্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ হতে চায়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা সামরিক শক্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে যেতে চায়।

  • তাইওয়ান ইস্যু: চীন বহুদিন ধরে তাইওয়ানকে নিজের অংশ দাবি করে আসছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের সামরিক প্রস্তুতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, তারা ভবিষ্যতে তাইওয়ান দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
  • পারমাণবিক শক্তির সম্প্রসারণ: চীন তার পারমাণবিক শক্তিকে আরও উন্নত করতে চাইছে, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটের দেশগুলোর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
  • দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য বিস্তার: চীন দক্ষিণ চীন সাগরের বেশিরভাগ এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে এবং সেখানে তারা ক্রমাগত সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে চলেছে। নতুন সামরিক কমান্ড সেন্টার এই সামরিক সম্প্রসারণেরই অংশ।

বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের প্রভাব

চীনের এই সামরিক প্রকল্প শুধু যুক্তরাষ্ট্রকেই নয়, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোকেও উদ্বেগে ফেলেছে। বিশেষ করে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত বিরোধের কারণে ভারতও এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করছে। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীনের সামরিক শক্তির এই দ্রুত উন্নয়ন ভারতীয় উপমহাদেশের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তাইওয়ানের প্রতিক্রিয়া

তাইওয়ান বরাবরই চীনের সামরিক সম্প্রসারণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। চীনের এই নতুন সামরিক প্রকল্প তাইওয়ানের জন্য আরও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা চীনের সামরিক কার্যক্রমের ওপর কড়া নজর রাখছে এবং যে কোনো হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রস্তুত রয়েছে।

চীনের এই বিশাল সামরিক কমান্ড সেন্টার শুধুমাত্র প্রতিরক্ষামূলক নয়, বরং এটি তাদের বিশ্ব সামরিক শক্তি হয়ে ওঠার কৌশলেরই অংশ। বিশ্লেষকদের মতে, চীনের এই প্রকল্প ভবিষ্যতে বৈশ্বিক সামরিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *