দক্ষিণী সিনেমার জনপ্রিয়তা গত এক দশকে আকাশছোঁয়া হয়েছে। একসময় যা শুধু আঞ্চলিক বিনোদনের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল, তা আজ গোটা দেশ তথা আন্তর্জাতিক স্তরেও ছড়িয়ে পড়েছে। ‘বাহুবলী’ থেকে ‘কেজিএফ’, ‘পুষ্পা’ থেকে ‘লিও’—এই সমস্ত ব্লকবাস্টার ছবি গোটা ভারত জয় করেছে। এর ফলে দক্ষিণী তারকাদের জনপ্রিয়তা যেমন আকাশছোঁয়া হয়েছে, তেমনি বেড়েছে তাদের সম্পত্তির পরিমাণও। প্রভাস, রজনীকান্ত, অল্লু অর্জুন, চিরঞ্জীবী, কমল হাসান, ধানুষ, নাগার্জুনের মতো তারকারা শুধু অভিনয় করেই নয়, বিভিন্ন ব্যবসায়িক বিনিয়োগের মাধ্যমেও বিপুল সম্পদ তৈরি করেছেন।
তাহলে দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ধনীতম অভিনেতা কে? কার সম্পত্তির পরিমাণ কত? এক নজরে দেখে নিন তালিক
দক্ষিণী চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও আইকনিক অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রজনীকান্ত। ‘থালাইভা’ নামে পরিচিত এই মহাতারকা শুধু ভারতের নয়, আন্তর্জাতিক সিনেমা জগতেও একজন পরিচিত মুখ। তার অনবদ্য অভিনয় দক্ষতা, ক্যারিশমা এবং অসাধারণ স্টাইল তাকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তুলেছে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে একের পর এক ব্লকবাস্টার সিনেমা উপহার দিয়ে তিনি নিজেকে দক্ষিণী চলচ্চিত্রের শীর্ষ আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে শুধুমাত্র অভিনয় নয়, ব্যবসা, ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট এবং বিভিন্ন বিনিয়োগের মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদও অর্জন করেছেন।
রজনীকান্ত
রজনীকান্ত শুধুমাত্র দক্ষিণী চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নন, তিনি ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব। তার ২০০০ কোটি টাকার সাম্রাজ্য প্রমাণ করে যে কঠোর পরিশ্রম, প্রতিভা এবং দর্শকদের ভালোবাসার মাধ্যমে একজন অভিনেতা কীভাবে কিংবদন্তি হয়ে উঠতে পারেন।

প্রভাস
প্রভাস, যার পুরো নাম উপ্পলাপতি ভেঙ্কট সুর্যনারায়ণ প্রভাস রাজু, ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা। ‘বাহুবলী’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি রাতারাতি তারকাখ্যাতি অর্জন করেন। যদিও তার অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল ২০০২ সালে, তবে ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বাহুবলী: দ্য বিগিনিং’ তাকে ভারতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরেও জনপ্রিয় করে তোলে। ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বাহুবলী: দ্য কনক্লুশন’ ইতিহাস সৃষ্টি করে এবং ভারতীয় সিনেমার সর্বোচ্চ আয় করা চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে স্থান পায়। এই সিনেমার সুবাদে প্রভাস শুধু দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নয়, গোটা ভারতের অন্যতম বড় সুপারস্টারে পরিণত হন।
তবে ‘বাহুবলী’-এর পর বলিউডে তার যাত্রা খুব একটা মসৃণ হয়নি। তিনি ‘সাহো’, ‘রাধে শ্যাম’ এবং ‘আদিপুরুষ’—এই কয়েকটি বড় বাজেটের সিনেমায় অভিনয় করেন, কিন্তু এগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি বক্স অফিসে প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি। যদিও দক্ষিণী সিনেমায় তার জনপ্রিয়তা এখনও অটুট, বলিউডে তার সিনেমাগুলি দর্শকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
বর্তমানে প্রভাসের মোট সম্পত্তির পরিমাণ আনুমানিক ৫০০ কোটি টাকা। তার আয়ের প্রধান উৎস হল সিনেমার পারিশ্রমিক, ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট, রিয়েল এস্টেট ও অন্যান্য ব্যবসায়িক বিনিয়োগ। দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা হিসেবে তিনি প্রতিটি সিনেমার জন্য ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত নেন। ‘আদিপুরুষ’ সিনেমার জন্য তিনি ১৫০ কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন, যা ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম সর্বোচ্চ।
শুধু সিনেমা নয়, প্রভাস রিয়েল এস্টেট ও বিভিন্ন ব্যবসায়ও বিনিয়োগ করেছেন। হায়দরাবাদে তার একটি বিলাসবহুল বাংলো রয়েছে, যার বাজারমূল্য ৬০ কোটি টাকা। এছাড়া, তার সংগ্রহে রয়েছে রোলস রয়েস, ল্যাম্বরগিনি, রেঞ্জ রোভার, জ্যাগুয়ারসহ একাধিক দামি গাড়ি।
প্রভাস সাধারণত খুব বেশি ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট করেন না, তবে যেসব ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন, সেগুলির থেকে তিনি মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক নেন। প্রতি বিজ্ঞাপনের জন্য তার চার্জ ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তিনি Mahindra, Lux, Gionee-এর মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি প্রভাস ব্যক্তিগত জীবনেও বেশ বিনয়ী ও শান্ত স্বভাবের। তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন করলেও খুব একটা প্রচারের আলোয় আসতে পছন্দ করেন না। ভবিষ্যতে তার বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে, যা তাকে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। যদিও বলিউডে তার মিশ্র সাফল্য এসেছে, তবে দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তার জনপ্রিয়তা এখনো অটুট রয়েছে।
চিরঞ্জীবী
দক্ষিণী চলচ্চিত্রের অন্যতম কিংবদন্তি অভিনেতা চিরঞ্জীবী, যার আসল নাম কোনিদেলা শিবশঙ্কর বরপ্রসাদ, টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রে রাজত্ব করছেন। শুধু অভিনয় নয়, প্রযোজনা, রাজনীতি এবং ব্যবসায়িক বিনিয়োগের মাধ্যমেও তিনি বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

বর্তমানে চিরঞ্জীবীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ₹৩,০০০ কোটি, যা তাকে দক্ষিণী চলচ্চিত্র জগতের সর্বাধিক সম্পত্তির মালিক অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার আয়ের প্রধান উৎস সিনেমা, প্রোডাকশন হাউস, ব্যবসা, রিয়েল এস্টেট এবং ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট।
চিরঞ্জীবী শুধুমাত্র একজন কিংবদন্তি অভিনেতাই নন, তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং সমাজসেবকও। তার ৩,০০০ কোটি টাকার বিশাল সম্পত্তি প্রমাণ করে যে কঠোর পরিশ্রম, প্রতিভা এবং কৌশলী বিনিয়োগের মাধ্যমে কীভাবে একজন তারকা নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে পারেন। তিনি দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ধনীতম তারকা এবং তার জনপ্রিয়তা আজও অক্ষুণ্ণ।
কমল হাসান
ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পরিচিত কমল হাসান চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয়ের জগতে দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করছেন। শুধু অভিনেতা নয়, তিনি একজন দক্ষ পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, গায়ক এবং প্রযোজকও। তার অভিনয়ের বহুমাত্রিকতা ও চরিত্রের গভীরতা তাকে ভারতীয় সিনেমার অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেতাদের কাতারে স্থান দিয়েছে।
কমল হাসান এমন একজন তারকা, যিনি বাণিজ্যিক সিনেমার পাশাপাশি আর্ট ফিল্মেও অভিনয় করে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। ‘নায়াকন’, ‘ইন্ডিয়ান’, ‘বিশ্বরূপম’, ‘দশাবতারম’–এর মতো সিনেমা তার অভিনয় দক্ষতার পরিচয় বহন করে। এখনও তিনি পূর্ণদৈর্ঘ্য কিংবা ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করলেও কোটি কোটি টাকা পারিশ্রমিক নেন।
বর্তমানে তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১০০০ কোটি টাকা, যা তাকে দক্ষিণ ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম ধনী অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অল্লু অর্জুন
ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় এবং প্রতিভাবান অভিনেতাদের মধ্যে একজন অল্লু অর্জুন। তার দুর্দান্ত অভিনয় দক্ষতা, অনন্য নাচের স্টাইল এবং ক্যারিশম্যাটিক উপস্থিতি তাকে দক্ষিণ ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষস্থানীয় অভিনেতাদের মধ্যে স্থান করে দিয়েছে। ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ তাকে সর্বভারতীয় সুপারস্টারে পরিণত করেছে এবং এখন ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’ সিনেমার জন্য তাকে দক্ষিণের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা বলা হচ্ছে।
বর্তমানে অল্লু অর্জুনের মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১০০০ কোটি টাকা, যা তাকে দক্ষিণী সিনেমার অন্যতম ধনী অভিনেতাদের কাতারে স্থান দিয়েছে। সিনেমার পারিশ্রমিক, ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট, রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ ও ব্যবসা থেকে তার বিপুল পরিমাণ আয় আসে।

দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র নাগার্জুন। দীর্ঘ কয়েক দশকের ক্যারিয়ারে তিনি শুধু দক্ষিণী চলচ্চিত্র নয়, বলিউডেও তার অভিনয় দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। তার কর্মজীবনে একাধিক সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন, যার মধ্যে ‘অলেশান’, ‘রাজা’, ‘গেতু’, ‘ঝুঁটি’র মতো সিনেমাগুলি অন্যতম। তিনি অভিনেতা, প্রযোজক, ব্যবসায়ী এবং রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারীরূপেও পরিচিত।
বর্তমানে নাগার্জুনের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২০০০ কোটি টাকা, যা তাকে দক্ষিণের অন্যতম ধনী অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার ব্যাপক আয়, বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য, এবং সাফল্যের কারণে তিনি শুধু তার ক্যারিয়ার নয়, পরিবার এবং কাছের মানুষের জন্যও একটি বিশাল সম্পদ তৈরি করেছেন। তার ছেলে নাগা চৈতন্য এবং প্রাক্তন পুত্রবধূ সামান্থা রুথ প্রভুও অভিনয় জগতের পরিচিত মুখ।