আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ হতে যাচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ আসর। পাকিস্তানের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে এই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাচ্ছে আটটি শীর্ষস্থানীয় দল। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দল তাদের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে, কিছু খেলোয়াড় ইনজুরির কারণে বাদ পড়েছেন, আবার অনেকেই নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। চলুন এই টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি, খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তি ও বাদ পড়া, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিশদে জানুন।
দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের স্কোয়াডে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। মূলত, পেস বোলার আনরিখ নর্টজে ইনজুরির কারণে বাদ পড়েছেন এবং তার পরিবর্তে দলে যোগ দিয়েছেন অলরাউন্ডার করবিন বোশ। বোশ সাম্প্রতিক এসএ২০ লিগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন এবং তার প্রতিভা দলকে শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া, কিশোর পেসার ক্বেনা মাফাকা ট্রাভেলিং রিজার্ভ হিসেবে দলে যোগ দিয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার দলে ব্যাটিং অর্ডারেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। অভিজ্ঞ ব্যাটার রাসি ভ্যান ডের ডুসেন এবার মিডল অর্ডারে আরও বেশি দায়িত্ব পালন করবেন, যেখানে তার সঙ্গী হতে পারেন মার্কো জানসেন এবং ডেভিড মিলার। এছাড়া, স্পিন বোলিং বিভাগে তাবরাইজ শামসির পাশাপাশি কেশব মহারাজ বড় ভূমিকা পালন করবেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াডে থাকবে তেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক), টনি ডি জর্জি, মার্কো জানসেন, হেইনরিখ ক্লাসেন, কেশব মহারাজ, এইডেন মারক্রাম, ডেভিড মিলার, উইয়ান মুল্ডার, লুঙ্গি এনগিডি, কাগিসো রাবাডা, রায়ান রিকেলটন, তাবরাইজ শামসি, ট্রিস্টান স্টাবস, রাসি ভ্যান ডের ডুসেন, (ইনজুরি বদলি) করবিন বোশ, (ট্রাভেলিং রিজার্ভ) ক্বেনা মাফাকা।
অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে বড় ধরনের ইনজুরি সমস্যায় পড়েছে। অধিনায়ক প্যাট কামিন্স এবং অভিজ্ঞ পেসার জশ হ্যাজলউড চোটের কারণে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছেন। এর পাশাপাশি অলরাউন্ডার মার্কাস স্টোইনিস ও মিচেল মার্শও দল থেকে ছিটকে গেছেন। এসব কারণে অস্ট্রেলিয়ার দলে বড় পরিবর্তন আনতে হয়েছে।
অধিনায়ক কামিন্সের অনুপস্থিতিতে স্টিভ স্মিথ ও ট্রাভিস হেডের মধ্যে একজনকে নতুন অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়া হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড এখনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানায়নি।
অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডে জায়গা করেছেন প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), অ্যালেক্স ক্যারি, নাথান এলিস, অ্যারন হার্ডি, জশ হ্যাজলউড, ট্রাভিস হেড, জশ ইংলিস, মার্নাস লাবুশেন, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ম্যাথিউ শর্ট, স্টিভ স্মিথ, মিচেল স্টার্ক, মার্কাস স্টোইনিস, অ্যাডাম জাম্পা।
২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ী পাকিস্তান এবার ঘরের মাঠে প্রতিযোগিতা করছে। পাকিস্তান তাদের স্কোয়াডে বেশ কিছু পুরনো ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে ফিরিয়ে এনেছে, যার মধ্যে অন্যতম ফখর জামান। তিনি ২০১৭ সালের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন। তার পাশাপাশি অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজ এবং শোয়েব মালিককেও দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যারা দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন।
পাকিস্তানের বোলিং লাইনআপেও এসেছে কিছু পরিবর্তন। নাসিম শাহ ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছেন এবং শাহীন শাহ আফ্রিদির সঙ্গে জুটি বাঁধতে প্রস্তুত। এছাড়া, তরুণ স্পিনার আবরার আহমেদ এবং অভিজ্ঞ পেসার হাসান আলিও স্কোয়াডে ফিরেছেন।
পাকিস্তানের পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াডে জায়গা করেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান (অধিনায়ক), বাবর আজম, ফখর জামান, কামরান গুলাম, সৌদ শাকিল, তৈয়ব তাহির, ফাহিম আশরাফ, খুশদিল শাহ, সালমান আলি আগা (সহ-অধিনায়ক), আবরার আহমেদ, হারিস রউফ, মোহাম্মদ হাসনাইন, নাসিম শাহ, শাহীন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, হাসান আলি।
ভারতীয় দলও বেশ শক্তিশালী স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। বিসিসিআই নিশ্চিত করেছে যে তাদের জার্সিতে পাকিস্তানের নাম সংযুক্ত আইসিসির অনুমোদিত লোগো থাকবে, যা কিছু বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। তবে বিসিসিআই এটিকে সাধারণ বিষয় হিসেবে দেখছে।
ভারতীয় দলে বড় চমক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তরুণ ব্যাটসম্যান তিলক ভার্মাকে, যিনি সম্প্রতি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। রোহিত শর্মার নেতৃত্বে দলটি ব্যাটিং বিভাগে শক্তিশালী হলেও, তাদের বোলিং বিভাগে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ইনজুরির কারণে মোহাম্মদ শামির খেলা অনিশ্চিত, যার ফলে আর্শদীপ সিং এবং শার্দুল ঠাকুর বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন।
ভারতের পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াডে জায়গা করেছে রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমান গিল (সহ-অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, কেএল রাহুল (উইকেটকিপার), ঋষভ পান্ত (উইকেটকিপার), হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, কুলদীপ যাদব, ওয়াশিংটন সুন্দর, জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি, অর্জদীপ সিং, যশস্বী জয়সওয়াল, তিলক ভার্মা, শার্দুল ঠাকুর।
বাংলাদেশ দল কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। অধিনায়কত্বে ফিরেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে বাজে ফর্মের কারণে লিটন দাস বাদ পড়েছেন। তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান থাকছেন পেস বোলিং বিভাগে।
বাংলাদেশের স্কোয়াড: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদী হাসান মিরাজ, আফিফ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ।
নিউজিল্যান্ড তাদের স্কোয়াডে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন, যা দলের জন্য বড় এক ইতিবাচক দিক। তার নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ড শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবে।
নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপে ডেভন কনওয়ে, টম ল্যাথাম, ড্যারেল মিচেল এবং গ্লেন ফিলিপস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। বোলিং বিভাগে অভিজ্ঞ ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসন, টিম সাউদি ও ম্যাট হেনরি প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেন।
নিউজিল্যান্ডের পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াড: কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), ডেভন কনওয়ে, টম ল্যাথাম, ড্যারেল মিচেল, গ্লেন ফিলিপস, মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি, ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসন, টিম সাউদি, ম্যাট হেনরি।
ইংল্যান্ড দল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য শক্তিশালী দল গঠন করেছে। জো রুট ও জনি বেয়ারস্টো ইংল্যান্ড দলে ফিরেছেন, যা তাদের ব্যাটিং লাইনআপকে আরো শক্তিশালী করবে। তবে ইনজুরির কারণে বেন স্টোকস দলে নেই, যা একটি বড় ধাক্কা হতে পারে। ইংল্যান্ডের মূল শক্তি তাদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ও গভীর বোলিং লাইনআপ।
ইংল্যান্ডের পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াড: জস বাটলার (অধিনায়ক), জনি বেয়ারস্টো, জো রুট, হ্যারি ব্রুক, মইন আলি, স্যাম কারান, আদিল রশিদ, মার্ক উড, ক্রিস ওকস, রিস টপলি, জোফ্রা আর্চার।
আফগানিস্তান দল তাদের স্কোয়াডে কিছু নতুন এবং পুরনো মুখ অন্তর্ভুক্ত করেছে। ইব্রাহিম জাদরান চোট কাটিয়ে ফিরেছেন এবং দলকে ব্যাটিং শক্তিশালী করতে সাহায্য করবেন। রশিদ খান ও মুজিব উর রহমানের স্পিন জুটি প্রতিপক্ষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
আফগানিস্তানের পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াড: হাশমতউল্লাহ শহীদি (অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, নাজিবুল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, নবিদ জাদরান, ফজল হক ফারুকি, নাভিন উল হক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল, আইসিসি ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। এর ফলে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে পাকিস্তানে যেতে হবে না। তবে স্থানীয়ভাবে লাহোর ও করাচিতে ছোট পরিসরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা হবে।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ ইতিমধ্যেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে, কারণ অনেক বড় দল স্কোয়াডে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। ইনজুরি সমস্যা, নতুন প্রতিভার অন্তর্ভুক্তি, এবং দলগুলোর প্রস্তুতি দেখে মনে হচ্ছে টুর্নামেন্টটি অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। পাকিস্তানের হোম কন্ডিশনে তারা কতটা সুবিধা নিতে পারে, ভারত-পাকিস্তান লড়াই কেমন হয়, এবং অস্ট্রেলিয়া তাদের ইনজুরি সমস্যার সমাধান কীভাবে করে—এসব বিষয় ক্রিকেট বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।