ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ : জানুন এইসমস্ত অজানা তথ্য

Spread the love

ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ: এক মহান শাসক ও বীর যোদ্ধা

ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ ভারতীয় ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নেতা। তিনি ছিলেন একাধারে এক দুর্ধর্ষ যোদ্ধা, দক্ষ শাসক এবং প্রকৃত প্রজাতন্ত্রবাদী। মহারাষ্ট্রের মাটি থেকে উঠে আসা এই মহান ব্যক্তিত্ব একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন, যা তাঁর সাহস, কৌশল এবং নেতৃত্বের এক অনন্য উদাহরণ।


ধর্মনিরপেক্ষ শাসক

ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ প্রকৃতপক্ষেই ধর্মনিরপেক্ষতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি সব ধর্মের মানুষের প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শন করতেন এবং তাঁদের উন্নতির জন্য কাজ করতেন। তাঁর রয়্যাল আর্মিতে ১.৫ লক্ষ সৈন্যের মধ্যে প্রায় ৬৬ হাজার মুসলিম ছিলেন, যা তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির এক বাস্তব উদাহরণ।

তিনি মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং এগুলোর সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নিতেন। তাঁর সেনাপতিরাও বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধি ছিলেন, যা সর্বধর্ম সমন্বয়ের নীতিকে প্রতিফলিত করে।


ভারতীয় নৌবাহিনীর জনক

শিবাজি মহারাজকে “ভারতীয় নৌবাহিনীর জনক” বলা হয়। তিনি প্রথম ভারতীয় শাসক যিনি নৌবাহিনীর কৌশলগত গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। মহারাষ্ট্রের দীর্ঘ উপকূলরেখা রক্ষা এবং বিদেশি আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য তিনি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলেন। তাঁর নৌবাহিনীতে দক্ষ নাবিক এবং সামরিক কৌশলবিদরা ছিলেন, যাঁরা জলপথে শত্রুদের মোকাবিলা করতেন।

শিবাজি উপকূল অঞ্চলে বিজয়দুর্গ, সিন্ধুদুর্গ এবং জানজিরার মতো শক্তিশালী সামুদ্রিক দুর্গ নির্মাণ করেন। এই নৌবাহিনীর মাধ্যমে তিনি বাণিজ্যিক পথও সুরক্ষিত রাখতেন।


মহিলাদের প্রতি শ্রদ্ধা

ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ মহিলাদের প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি মনে করতেন যে মহিলাদের সম্মান রক্ষা করা প্রতিটি শাসকের প্রধান দায়িত্ব। তাঁর সেনাবাহিনীতে কঠোর নির্দেশ ছিল যে কোনো মহিলার ওপর অত্যাচার হলে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে।

একবার এক দুর্গ দখলের সময় শিবাজির সেনারা এক সুন্দরী মহিলাকে তাঁর সামনে নিয়ে এলে, তিনি বলেন, “তুমি আমার মায়ের মতো। তোমার প্রতি কেউ কোনো অন্যায় করবে না।” এরপর তিনি ওই মহিলাকে নিরাপদে তাঁর পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেন। এটি তাঁর নৈতিক মূল্যবোধের এক অনন্য উদাহরণ।


পানহালা দুর্গ থেকে পালানোর ঘটনা

সিদ্দি জৌহরের বিশাল বাহিনী পানহালা দুর্গ অবরুদ্ধ করলে শিবাজি কৌশলগতভাবে পালানোর পরিকল্পনা করেন। তিনি নিজের মতো দেখতে এক বিশ্বস্ত অনুচরকে রেখে অন্য পথে পালিয়ে যান। তাঁর এই বুদ্ধিমত্তার কারণে তিনি শত্রুর কবল থেকে মুক্ত হয়ে পুনরায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলিত হন।


পেশাদার সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠা

শিবাজি প্রথম ভারতীয় শাসক যিনি একটি পেশাদার সেনাবাহিনী গঠন করেন। তিনি সারা বছর সৈন্যদের প্রশিক্ষণ ও বেতন দিতেন, যা তাঁর সামরিক শক্তিকে অনেকগুণ বাড়িয়ে তোলে।


গেরিলা যুদ্ধের কৌশল

ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ ভারতের গেরিলা যুদ্ধ কৌশলের প্রবর্তক ছিলেন। তাঁর চতুর কৌশল ও ভৌগোলিক জ্ঞানের জন্য শত্রুরা তাঁকে “পাহাড়ি ইঁদুর” বলে ডাকত। তিনি ছোট ছোট সেনাদল গঠন করে শত্রুদের ওপর আকস্মিক হামলা চালাতেন এবং দ্রুত স্থান পরিবর্তন করতেন। তাঁর এই কৌশল মারাঠা সাম্রাজ্যকে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে।

ছত্রপতি শিবাজি

আগ্রা থেকে পালানো

শিবাজি মহারাজের সাহসিকতার অন্যতম বড় উদাহরণ হলো আগ্রা দুর্গ থেকে পালানোর ঘটনা। ঔরঙ্গজেব তাঁকে বন্দি করলে তিনি একটি কৌশল তৈরি করেন। তিনি মন্দিরে ফল ও মিষ্টি পাঠানোর অনুমতি পান এবং সেই মিষ্টির বাক্সে লুকিয়ে পালিয়ে যান।


উপসংহার

ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ শুধুমাত্র একটি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা নন; তিনি ছিলেন নেতৃত্ব, কৌশল এবং মানবিকতার চিরন্তন প্রতীক। তাঁর জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি সাহস, পরিকল্পনা, এবং দয়া। শিবাজির জীবনযাত্রা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *